ই-পেপার বুধবার, ০৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১৯ ভাদ্র ১৪৩২

ক্ষমতার পালাবদল হলেও চাঁদাবাজির সংস্কৃতি অপরিবর্তিত

জামিল হোসেন
০২ আগস্ট ২০২৫, ১৪:৫৮

বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে ক্ষমতার পালাবদল বহুবার হয়েছে। এক সরকার গিয়েছে, আরেক সরকার এসেছে। ক্ষমতার এই পরিবর্তনে সমাজে অনেক পরিবর্তন এসেছে, নীতিমালা বদলেছে, প্রশাসনের ধরনেও পরিবর্তন দেখা গেছে। তবে কিছু নেতিবাচক দিক রয়ে গেছে আগের মতোই, যার মধ্যে চাঁদাবাজি সংস্কৃতি অন্যতম। চাঁদাবাজি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে একটি দীর্ঘস্থায়ী সমস্যা হিসেবে রয়ে গেছে। চাঁদাবাজি একটি অপরাধমূলক কার্যকলাপ, যেখানে কোন ব্যক্তি ক্ষমতার প্রভাব ব্যবহার করে অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান থেকে জোরপূর্বক অর্থ আদায় করে। যদিও সময়ের সাথে সাথে রাজনৈতিক ক্ষমতার পরিবর্তন এসেছে, তবুও চাঁদাবাজি সংস্কৃতি কমেনি, বরং এটি বিভিন্ন রূপে অব্যাহত রয়েছে।

ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: বাংলাদেশে চাঁদাবাজির সংস্কৃতি মূলত স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে শুরু হয়। ১৯৭১ সালের পর যুদ্ধবিধ্বস্ত অর্থনীতি ও অস্থির রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর উত্থান ঘটে। ১৯৮০ ও ১৯৯০-এর দশকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতা ও সংঘাতের সময় চাঁদাবাজি একটি সংগঠিত অপরাধ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়। রাজনৈতিক নেতারা প্রায়শই স্থানীয় অপরাধী গোষ্ঠীগুলোর সাথে জোট বেঁধে তাদের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতেন, এবং এর বিনিময়ে এসব গোষ্ঠীকে চাঁদাবাজির সুযোগ দেওয়া হতো।

রাজনৈতিক সংযোগ: বাংলাদেশের রাজনীতিতে চাঁদাবাজির সংস্কৃতি রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। অনেক ক্ষেত্রে স্থানীয় নেতারা চাঁদাবাজি করে আদায়কৃত অর্থ দলীয় তহবিলে জমা দেন বা নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেন। আবার কিছু ক্ষেত্রে অপরাধী গোষ্ঠী সরাসরি রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা পায়, যা তাদেরকে আইনের ঊর্ধ্বে থাকার সুযোগ দেয়। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতা না থাকলে চাঁদাবাজি সংস্কৃতি এতটা বিস্তৃত হতো না।

ক্ষমতার পরিবর্তন ও চাঁদাবাজি: বাংলাদেশে ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও চাঁদাবাজি সংস্কৃতি কমেনি। এর প্রধান কারণ হল রাজনৈতিক দলগুলো ক্ষমতায় আসার পর তাদের সমর্থক গোষ্ঠীগুলোর স্বার্থ রক্ষা করে। নতুন সরকার ক্ষমতায় এলে পূর্ববর্তী সরকারের সমর্থক গোষ্ঠীগুলোর চাঁদাবাজি কিছুটা কমে, কিন্তু নতুন ক্ষমতাসীন দলের সমর্থক গোষ্ঠী একই পদ্ধতি অবলম্বন করে। ফলে চাঁদাবাজি সংস্কৃতি চক্রাকারে চলতে থাকে।

চাঁদাবাজির প্রভাব: চাঁদাবাজি সংস্কৃতি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি বড় বাধা। এটি শুধু অপরাধ নয়, বরং ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়নের পথে একটি বড় প্রতিবন্ধক। চাঁদাবাজি সংস্কৃতি বাংলাদেশের অর্থনীতিকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে নানাভাবে:

ব্যবসায়ীদের উপর চাপ: ব্যবসায়ীরা নিয়মিত চাঁদা দিতে বাধ্য হন, যা তাদের জন্য অতিরিক্ত বোঝা হয়ে দাঁড়ায়। এই চাঁদার টাকা পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করা হয়, যার ফলে সাধারণ ক্রেতাদের বেশি দাম দিতে হয়।

বিনিয়োগের পরিবেশ নষ্ট: বিদেশি বা স্থানীয় বিনিয়োগকারীরা চাঁদাবাজির মতো অপরাধমূলক কার্যকলাপ দেখে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে ভয় পান। এর ফলে দেশে বিনিয়োগ কমে যায়, যা অর্থনৈতিক উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে।

ছোট ব্যবসায়ীদের ক্ষতি : ছোট ব্যবসায়ীরা চাঁদাবাজির সবচেয়ে বড় শিকার। তাদের আয় কম, কিন্তু চাঁদা দিতে না পারলে তাদের ব্যবসা বন্ধ হওয়ার ঝুঁকি থাকে।

রাষ্ট্রের রাজস্ব ক্ষতি: চাঁদাবাজির মাধ্যমে আদায়কৃত টাকা রাষ্ট্রের খাতে যায় না, বরং তা অপরাধী গোষ্ঠীর পকেটে চলে যায়। এর ফলে সরকারের রাজস্ব আয় কমে যায়।

চাঁদাবাজি রোধে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ

নিচে তাদের ভূমিকা তুলে ধরা হলো

  • চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা
  • চাঁদাবাজদের গ্রেপ্তার করে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা
  • ব্যবসায়ীদের নিরাপত্তা প্রদান
  • ব্যবসায়ীদের চাঁদাবাজদের হুমকি থেকে রক্ষা করা।
  • চাঁদাবাজি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহ করে অপরাধীদের শনাক্ত করা।
  • চাঁদাবাজির কুফল সম্পর্কে মানুষকে সচেতন করা।
  • প্রযুক্তির ব্যবহার: সিসি ক্যামেরা, মোবাইল ট্র্যাকিং এবং ডিজিটাল নজরদারি ব্যবস্থার মাধ্যমে চাঁদাবাজদের শনাক্ত করা।

সমাধানের উপায়: চাঁদাবাজি সংস্কৃতি রোধ করতে হলে রাজনৈতিক সদিচ্ছা, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি প্রয়োজন। কারণ, বাংলাদেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে চাঁদাবাজি সংস্কৃতি একটি জটিল ও বহুমাত্রিক সমস্যা। ক্ষমতার পরিবর্তন হলেও এই চাঁদাবাজি সংস্কৃতি রোধ করা সম্ভব হয়না, কারণ এটি রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক স্বার্থের সাথে গভীরভাবে জড়িত।

লেখক: জামিল হোসেন, অনলাইন নিউজ এডিটর, দৈনিক আমার বার্তা, ঢাকা।

আমাদের বাক-স্বাধীনতা

বাক-স্বাধীনতা বলতে কথা বলার স্বাধীনতা সরকারের বিরুদ্ধে সমালোচনা করাও যাবে,উন্নত বিশ্বে এর বহুল চর্চা রয়েছে

চামড়া শিল্পে বিশ্বজয়ের প্রস্তুতিঃ দরকার প্রযুক্তি ও নীতিগত সহায়তা 

বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিতে চামড়া শিল্প একটি অত্যন্ত সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। তৈরি পোশাক শিল্পের

পর্যটন শুধু ভ্রমণ নয়-এটি সংস্কৃতির সেতুবন্ধন

পর্যটনের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ একে অপরের সংস্কৃতি যেমন, খাদ্যাভাস, পোশাক, লোকনৃত্য, সংগীত এবং জীবনযাপন

রোহিঙ্গা সংকটের আট বছর – সংকট সমাধানে চলমান উদ্যোগ

রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে বাংলাদেশ সব সময় আশাবাদী এবং সক্রিয় হওয়ার পরও এই সমস্যা  নিরসনে কোন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কেউ যেন বলতে না পারে আমাকে ভোট দিতে দেওয়া হয়নি: ড. ইউনূস

আইনশৃঙ্খলার অবনতি নির্বাচনী পরিবেশে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করছে: সাকি

নুরকে সুচিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর নির্দেশ প্রধান উপদেষ্টার

শেখ হাসিনা দেশ থেকে পালালেও শয়তানি ছাড়েনি: মির্জা ফখরুল

বিশ্বে শত কোটির বেশি মানুষ মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত: বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা

ডাকসু নির্বাচন: ছাত্রীকে গণধর্ষণের হুমকির ঘটনা তদন্তে দুই কমিটি

আদালতে ৪০ লাখ বাণিজ্যিক মামলা, দীর্ঘসূত্রিতায় ব্যাহত বিদেশি বিনিয়োগ

বাকৃবিতে আন্দোলন-অবরোধ পরবর্তী ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন

ফ্যাসিবাদের সমর্থকদের আইনের আওতায় আনা উচিত: রিজভী

সাবধান: ভুল মেইলে ক্লিক করলেই ফেসবুক গায়েব

আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খোঁজ নিতে চমেক হাসপাতালে ধর্ম উপদেষ্টা

দেশে ডেঙ্গুজ্বরে আরও তিনজনের মৃত্যু, হাসপাতালে ভর্তি ৪৭৩ জন

কুয়েতে ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনে আটক ৩৫ জন

ফার্স্ট সিকিউরিটির ৩৮ হাজার কোটি টাকা লুটে নিয়েছে এস আলম

১১ ধারা-উপধারা সংশোধন করে অধ্যাদেশ জারি

খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে লাল কার্ড, সড়কে ধানের চারা রোপণ

আগস্টে দেশের রফতানি আয় কমেছে ২.৯৩ শতাংশ

কুড়িগ্রামের সাবেক ডিসি সুলতানা পারভীন কারাগারে

ধর্ষণ-অস্ত্র ও হল দখলের রাজনীতি চলবে না: ইবি ছাত্রদল আহ্বায়ক

সাগরে লঘুচাপের প্রভাবে আগামী পাঁচদিন ভারি বৃষ্টি হতে পারে