ঢাকাই চলচ্চিত্রের ইতিহাসে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএফডিসি) এক গুরুত্বপূর্ণ নাম। ১৯৫৭ সালের ৩ এপ্রিল পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদে আইন পাসের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয় ‘পূর্ব পাকিস্তান চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন’। স্বাধীনতার পর এর নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন কর্পোরেশন, যা সংক্ষেপে বিএফডিসি বা সাধারণভাবে এফডিসি নামেই পরিচিত।
১৯৫৯ সাল থেকে শুরু করে একবিংশ শতকের শুরুর দিক পর্যন্ত এফডিসিই ছিল বাংলাদেশের চলচ্চিত্রাঙ্গনের প্রাণকেন্দ্র। কিন্তু কালের পরিক্রমায় এই প্রতিষ্ঠান ক্রমে প্রাণহীন এক অবয়বে রূপ নিতে শুরু করেছে। বিভিন্ন সময়ে সরকার এর উন্নয়নে উদ্যোগ নিলেও দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে সেসব প্রচেষ্টা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত সাফল্য আনতে পারেনি।
এফডিসির আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ২০১৮ সালে বিদায়ী সরকার ‘বিএফডিসি কমপ্লেক্স নির্মাণ’ প্রকল্প গ্রহণ করে। এ প্রকল্পের আওতায় ১৫ তলা বিশিষ্ট একটি ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়, যেখানে শুটিং ফ্লোর, সিনেপ্লেক্স, ফুড কোর্ট, সুইমিং পুল ও সেবা কেন্দ্র অন্তর্ভুক্ত থাকার কথা। ২০২৬ সালের মধ্যে এ কাজ শেষ হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, মূল ভবনের কাজ এখনও সন্তোষজনক পর্যায়ে পৌঁছেনি।
কাজের অগ্রগতি ত্বরান্বিত করতে ২০২৪ সালের মে মাসে তৎকালীন প্রকল্প পরিচালকের বদলে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব জনাব মাহফুজা আখতারকে অতিরিক্ত দায়িত্ব দিয়ে নতুন প্রকল্প পরিচালক হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। তিনি জুন ২০২৪-এ এফডিসিতে যোগদান করলেও নির্মাণকাজে আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি; বরং অন্যান্য সরকারি প্রকল্পের মতোই ঢিমেতালে চলছে কাজ। ২০২৫ সালের ১ সেপ্টেম্বর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে কেবল নির্মাণ প্রতিষ্ঠানের দু’একজন কর্মী উপস্থিত থাকলেও নেই নির্মাণশ্রমিকদের কাজের তোড়জোড়।
সংশ্লিষ্ট বিভিন্নসূত্রে জানা গেছে ইতিপূর্বে প্রকল্পের কাজ আশানুরূপ গতিতে না আগানোর কারণ সম্পর্কে বর্তমান প্রকল্প পরিচালকের কাছে জানতে চাইলে তিনি এর কোন সদুত্তর না দিয়ে বলতেন যে তিনি ‘আরাফাত’ এর পিডি (প্রজেক্ট ডিরেক্টর বা প্রকল্প পরিচালক), প্রশ্ন তাকে না করে যেন আরাফাতকে করা হয়। উল্লেখ্য যে ‘মোহাম্মদ আলী আরাফাত’ ছিল ফ্যাসিস্ট সরকারের অন্যতম একজন ঝান্ডাবাহক।
এফডিসি ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের জুন-জুলাই মাসে পূর্ববর্তী অর্থবছরে প্রকল্পের জন্য বরাদ্দকৃত টাকার মধ্যে ২০ কোটি টাকা দেয়া হলেও সেই অনুযায়ী দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি তো হয়ইনি বরং পুণরায় চলতি অর্থবছরের বরাদ্দ থেকে ১৫ কোটি টাকা দেবার জন্য আবেদন করা হয়েছে। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে এফডিসি’র বর্তমান ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাসুমা রহমান তানি কোনো মন্তব্য করতে অস্বীকৃতি জানান।
আমার বার্তা/এমই