বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলেছেন, কথিত অল্প ও বেশি সংস্কারের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচন। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন টালবাহানা চলছে। জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, সংস্কার নিয়ে সময় ক্ষেপণের আড়ালে সরকারের ভেতরে ও বাইরে কিছু ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে।
বুধবার (২৮ মে) বিকাল সাড়ে ৫টায় নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে’ লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
সমাবেশে ঢাকা, সিলেট, ফরিদপুর ও ময়মনসিংহ বিভাগের বিভিন্ন জেলার নেতাকর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।
তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচরের সময় আমরা দেখেছি— তারা কীভাবে আদালতকে অবজ্ঞা করেছে। ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আদালত অবমাননা স্বৈরাচারের সময়ের পুনরাবৃত্তি বলে আমরা মনে করি। তিনি প্রশ্ন রাখেন, যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন না, তাদের প্রতি আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি। আমরা মনে করি, পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে ব্যক্তিগত মানসিকতার সংস্কার জরুরি।
তিনি বলেন, তরুণ জনগোষ্ঠীকে প্রাধান্য দিয়ে বিএনপি সব কাজ করছে। তরুণ প্রজন্মের কাছে কর্মপরিকল্পনা তুলে দিতে গত এক মাস বিভাগী শহরে তারুণ্যের সমাবেশ করেছে। তার আগের দিন ভিন্ন মতাদর্শের তারুণ্যের প্রতিনিধিদের নিয়ে করেছে সেমিনার। কীভাবে দেশকে এগিয়ে নেওয়া যায়, সে মতামত দিয়েছেন তারা।
কৃষকদের বিভিন্নভাবে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযোগিতার পরিকল্পনা তুলে ধরেন তিনি। কৃষকদের জন্য ফার্মার্স কার্ড দেওয়া হবে বলে জানান।
তিনি উল্লেখ করেন, প্রবীণদের অভিজ্ঞতা ও নবীনদের তারুণ্যকে সমন্বয়ক করে একাত্তর থেকে চব্বিশের আকাঙ্ক্ষার বাংলাদেশ গড়ে তোলা হবে। সম্ভাবনাকে সামনে নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। এখন আর কথামালার রাজনীতি চলবে না। এখন করতে হবে দৃষ্টান্ত স্থাপন। নারী-পুরুষের জন্য কর্মসংস্থান, ক্ষুদ্র কুটির শিল্প স্থাপনসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়ে আমরা এগোতে চাই।
তারেক রহমান বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় গেলে পরিবারের নারী প্রধানকে ফ্যামিলি কার্ড দেওয়া হবে। প্রতিমাসে রাষ্ট্রীয়ভাবে সহযেগিতা করা হবে। এতে করে পরিবারগুলো কিছুটা স্বাবলম্বী হবে।
খেলাধুলাকে মূল পেশায় নিয়ে আশার জন্য চেষ্টা করবে বিএনপি। এ জন্য ক্রীড়াকে কারিকুলামে নিয়ে আসা হবে। বাংলা ও ইংরেজির পাশাপাশি অন্যন্য ভাষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া হবে। এতে করে আমাদের সন্তানরা বহির্বিশ্বে নিজেদের কাজে লাগবে। চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রযুক্তির সম্প্রসারণ করা হবে। ই-কমার্সের ক্ষেত্র আরও প্রসারিত করতে হবে। এরই মধ্যে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা বলেছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বেকারত্ব দূরীকরণে বিভিন্ন সেক্টারে কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। তথ্য-প্রযুক্তি ও কারিগরি শিক্ষায় তরুণ প্রজন্মকে গড়ে তোলা হবে। বিএনপি ই-কমার্স ও আইটি সেক্টরে ব্যাপক উন্নয়ন করতে চায়। দেশের জনগণের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে চায়। এ জন্য এক থেকে তিন বছরের কর্মপরিকল্পনা হাতে নেয়া হয়েছে।
সরকারি ও প্রাইভেট সেক্টরকে সমন্বয়ে কাজ করছে বিএনপি। খাল খনন ও বৃক্ষ রোপণকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। প্রতি পাঁচ বছরে ২৫-৩০ কোটি বৃক্ষ রোপণ করা হবে।
তারেক বলেন, উন্নয়ন ও উৎপাদনের রাজনীতি শুরু করেছেন জিয়াউর রহমান। জনগণই বিএনপির মূল ভিত্তি। বিএনপি ক্ষমতায় গেলে দেশ ও জনগণের কাছে দেওয়া প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী রাষ্ট্র গঠন করবে।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন— বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, মির্জা আব্বাস, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, গয়েশ্বর চন্দ্র রায় ও সালাউদ্দিন আহমেদ।
যুবদল সভাপতি আবদুল মোনায়েম মুন্নার সভাতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি এস এম জিলানী, যুবদলের সাধারণ সম্পাদক মোহম্মদ নুরুল ইসলাম নয়ন ও ছাত্রদলের সভাপতি রাকিবুল ইসলাম রাকিব।
যৌথ সঞ্চালনায় ছিলেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক রাজিব আহসান ও ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দিন নাছির।
আমার বার্তা/এমই