বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি স্বৈরাচারী মনোভাবের বহিঃপ্রকাশ বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বুধবার (২৮ মে) বিকাল সাড়ে ৫টায় নয়াপল্টনে বিএনপির তিন সহযোগী সংগঠন ছাত্রদল, যুবদল ও স্বেচ্ছাসেবক দলের ‘তারুণ্যের রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠার সমাবেশে’ লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ মন্তব্য করেন।
তারেক রহমান বলেন, পলাতক স্বৈরাচরের সময় আমরা দেখেছি— তারা কীভাবে আদালত ও আদালতের রায়কে অবজ্ঞা করেছে। অত্যন্ত দুঃখের সঙ্গে বলতে হয়, পলাতক স্বৈরাচারের পরে যেই সরকারের কাছে দেশের মানুষ আশা করেছিল যে আইনের প্রতি সম্মান থাকবে। কিন্তু আমরা দেখেছি আদালতের রায়ের প্রতি সম্মান না দেখিয়ে ইশরাক হোসেনের মেয়র পদে শপথ নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের আদালত অবমাননা স্বৈরাচারের সময়ের পুনরাবৃত্তি বলে আমরা মনে করি।
তিনি প্রশ্ন রাখেন, যারা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করেন না, আদালতের নির্দেশকে অবজ্ঞা করেন তাদের প্রতি আমরা কতটুকু সংস্কার আশা করতে পারি। আমরা মনে করি, পুঁথিগত সংস্কারের চেয়ে ব্যক্তিগত মানসিকতার সংস্কার অনেক বেশি জরুরি।
তিনি বলেন, নর্থ কোরিয়ার সংবিধানে লেখা রয়েছে ডেমোক্রেটিক পিপলস রিপাবলিক অব নর্থ কোরিয়া। সুতরাং কি লেখা আছে তার চেয়েও বেশি যেটি জরুরি তা হলো মেনে চলা। ইশরাকের শপথ গ্রহণে বাধা সৃষ্টি করে আজ আমরা আবারও স্বৈরাচারি মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখতে পাচ্ছি।
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, নিরপেক্ষতা ও বিশ্বাসযোগ্যতাই অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান পুঁজি। তাই তাদের প্রতি আমাদের আহ্বান ও পরামর্শ থাকবে, জনগণের বিশ্বাস-ভালোবাসা নষ্ট হয় অন্তর্বর্তী সরকারের এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া ঠিক হবে না।
অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি আবারও আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, গণতন্ত্রকামী জনগণ ও গণতন্ত্রের পক্ষের রাজনৈতিক দলগুলোকে দয়া করে প্রতিপক্ষ বানাবেন না। যদি আপনাদের কেউ রাষ্ট্র পরিচালনায় থাকতে চায়, তাহলে সরকার থেকে পদত্যাগ করে জনগণের কাতারে এসে নির্বাচন করুন। যদি ভবিষ্যতে নির্বাচনে জনগণের রায় পান তাহলে আবার সরকারের দায়িত্ব গ্রহণ করুন।
তারেক রহমান বলেন, গত দেড় দশকে ভোটার তালিকায় প্রায় সাড়ে তিন কোটি নতুন ভোটার সংযুক্ত হয়েছেন। এই নতুন ভোটাররা আজ পর্যন্ত একটি জাতীয় নির্বাচনেও ভোট দিয়ে তাদের নিজের পছন্দের প্রার্থীকে জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত করার সুযোগ পায়নি। পতিত পলাতক স্বৈরাচারের কাছে মানুষের অধিকার প্রতিষ্ঠা কিংবা নির্বাচন কোনো গুরুত্বপূর্ণ কিছু ছিল না। সুতরাং সংস্কার ইস্যুর পাশাপাশি জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের দৃশ্যমান প্রস্তুতি নেওয়া উচিত বলে আমরা বিশ্বাস করি।
তারেক বলেন, অতীতে বিভিন্ন সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকার তিন মাসের মধ্যেই সফলভাবে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন করেছে। কিন্তু আমরা দেখছি ১০ মাস পার হয়ে গেলেও অন্তর্বর্তী সরকার নির্বাচনের দিনক্ষণ ঘোষণা করছে না।
তিনি বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে এরই মধ্যে হয়তো টালবাহানা শুরু হয়েছে। কথিত অল্প ও বেশি সংস্কারের আবর্তে ঘুরপাক খাচ্ছে আগামী জাতীয় নির্বাচন। গণতন্ত্র ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা নিয়ে এরই মধ্যে বিভিন্ন টালবাহানা চলছে। এরই মধ্যে জনগণ বিশ্বাস করতে শুরু করেছে, সংস্কারের নামে সময়ক্ষেপণের আড়ালে অন্তর্বর্তী সরকারের কারও কারও মধ্যে রয়েছে ভিন্ন উদ্দেশ্য।
চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে জোরালোভাবে বলেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। সেই নির্বাচনের জন্য নেতা–কর্মীদের এখন থেকেই প্রস্তুতি নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
তারেক রহমান বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে আহ্বান, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই জাতীয় নির্বাচন হতে হবে। আমরা আবারও বলতে চাই, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। সে সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গেল ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে।
এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয় সেজন্য গত ১৪ মে হাই কোর্টে রিট আবেদন করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গত ১৫ মে থেকে আন্দোলন নামেন ইশরাক সমর্থকরা। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। এরপর এ রিট মামলার ওপর কয়েক দফা শুনানির পর বৃহস্পতিবার তা খারিজ করে আদেশ দেন হাইকোর্টের বেঞ্চ। মঙ্গলবার স্থানীয় সরকার বিভাগ বলেছে, ইশরাককে শপথ পড়ানোর বিষয়টি এখন ‘আদালতে বিচারাধীন বিষয়’। এ কারণে তারা আদালতের রায়ের অপেক্ষায় আছে।
এদিকে ইশরাককে মেয়রের দায়িত্ব দিতে নগর ভবনের সামনে বিক্ষোভ অব্যাহত রেখেছেন তার সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনের কারণে দুই সপ্তাহ ধরে নগর ভবনে সব নাগরিক সেবা বন্ধ হয়ে আছে।
আমার বার্তা/এমই