ঈদ মুসলিম বিশ্বের এক অতি আনন্দময়, পবিত্র এবং মর্যাদাপূর্ণ উৎসব। ঈদ মানে খুশি, ঈদ মানে আনন্দ। এই দিনে ধনী-গরিব, উঁচু-নিচুর সব ভেদাভেদ ভুলে সবাই এক কাতারে শামিল হয়। প্রতিটি প্রাণে ছড়িয়ে পড়ে খুশির আমেজ। ইসলামে দু’টি ঈদ রয়েছে, ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আজহা। তন্মধ্যে ঈদুল ফিতর ইসলামের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব, যা রমাদান মাসের শেষে পালন করা হয়। দীর্ঘ এক মাস সিয়াম সাধনার পর খুশির বার্তা নিয়ে হাজির হয় ঈদুল ফিতর। ঈদুল ফিতরের উৎসব ইসলামের এক অনবদ্য দিক, যা হযরত মুহাম্মদ (সা.) এর মাধ্যমেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। এই দিনটি মুসলমানদের জন্য আল্লাহ তা'য়ালার অশেষ করুণার এক বিশেষ মুহূর্ত। রমাদান শেষে ঈদুল ফিতেরের মাধ্যমে মানুষের হৃদয়ে এক নতুন মুক্তির অনুভূতি জন্ম নেয়।
ঈদুল ফিতরের আগের দিন থেকেই উৎসবের প্রস্তুতি শুরু হয়ে যায়। রমাদান মাসের শেষ দিনগুলোতে মুসলমানরা তাদের ঘরবাড়ি পরিষ্কার করে, নতুন জামা-কাপড় কিনে এবং বিশেষ খাবারের আয়োজন করে। বিশেষ করে, ঈদুল ফিতরের দিন সকালে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কুশল বিনিময়ের পর ঈদের নামাজের জন্য প্রস্তুতি নেন। ঈদের প্রস্তুতি শুধু বাহ্যিক নয়, আধ্যাত্মিক দিক থেকেও এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়, যখন মুসলমানরা নিজেদের আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে এবং ঈদের পূর্ণ আনন্দের জন্য প্রস্তুতি নেয়।
ঈদুল ফিতরের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো ঈদের নামাজ। ঈদের দিন সকালেই মুসলমানরা জামাতে নামাজ আদায় করেন। ঈদের নামাজের বিশেষত্ব হলো এটি ঈদগাহে উৎসব মুখর পরিবেশে আদায় করা। তবে মসজিদেও আদায় করা যায়। এই নামাজের মাধ্যমে মুসলমানরা একসাথে আল্লাহ তা'য়ালার প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ঈদের নামাজের পর, সাধারণত পরস্পরের সঙ্গে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় এবং আনন্দের মুহূর্ত কাটানো হয়। এটি মুসলমানদের মধ্যে বিশ্বজুড়ে ভ্রাতৃত্ব ও ঐক্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন।
ঈদুল ফিতরের সালাতের পূর্বে মুসলমানদের জন্য ফিতরা বা সাদাকাতুল ফিতর দেওয়ার বিধান রয়েছে। এটি গরীব-দুঃখী মানুষদের সহায়তা করার একটি পবিত্র দান। ঈদ উৎসবের মাধ্যমে দান-সাদাকাহ এবং সহানুভূতির বার্তা একে অপরকে পৌঁছানো হয়, যা মানবিক মূল্যবোধের প্রতিফলন। ইসলাম শেখায়, আসল আনন্দ হলো একে অপরের সুখে-দুঃখে অংশ নেওয়া এবং সমাজের সকল মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও সহানুভূতির সম্পর্ক তৈরি করা।
ঈদুল ফিতরের দিনটি একটি পারিবারিক উৎসবও বটে। ঈদ মুসলমানদের পরিবার, বন্ধু-বান্ধব এবং আত্মীয়দের একত্রিত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। পরিবারগুলো একসাথে খাবার খায়, একে অপরকে উপহার দেয় এবং ঈদের আনন্দে মেতে ওঠে। এই দিনটি শুধু একজন ব্যক্তির আনন্দের দিন নয়, বরং পুরো জাতির একতাবদ্ধ হওয়ার দিন। ঈদের মাধ্যমে সমাজে শান্তি, ঐক্য এবং ভালবাসা প্রতিষ্ঠিত হয়। আত্মীয়-স্বজনদের সাথে ঈদের দিন কাটানো একটি সুখকর অভিজ্ঞতা, যা সম্পর্কগুলো আরও দৃঢ় করে।
ঈদ হল আনন্দের দিন, কিন্তু এটি শুধুমাত্র বাহ্যিক আনন্দের জন্য নয়, বরং একটি আধ্যাত্মিক উপলব্ধির দিনও বটে। ঈদের দিনটিতে মানুষের অন্তরে গভীর শান্তি এবং প্রশান্তি বিরাজ করে, কারণ তারা বিশ্বাস করে যে, রমাদান মাসের কঠোর ত্যাগ এবং সাধনার পর আল্লাহ তা'য়ালা হয়তো তাদের ক্ষমা করেছেন। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জানানো, একে অপরকে ভালবাসা এবং সাম্য প্রতিষ্ঠা করা, ঈদুল ফিতরের প্রকৃত উদ্দেশ্য।
ঈদ, শুধু একটি উৎসব নয়, এটি মানবিকতার, ভালোবাসার এবং পারস্পরিক সহানুভূতির এক অমূল্য উদাহরণ। এটি একটি ধর্মীয় এবং সামাজিক আন্দোলন যা ভ্রাতৃত্ব, ঐক্যবদ্ধ, পরস্পরের প্রতি সহানুভূতি এবং আল্লাহর প্রতি আনুগত্য প্রদর্শনের সুযোগ করে দেয়। এই দিনটি মুসলমানদের শিখায় যে, সত্যিকারের আনন্দ হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা এবং সমাজে ভালো কাজ করা। ঈদ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয় যে, জীবনের আসল মূল্যবোধ হলো মানবিকতা, মানুষের মাঝে শান্তি ও ভালবাসা ছড়িয়ে দেওয়া এবং সবার মাঝে আনন্দ ভাগাভাগি করে নেওয়া।
লেখক: এম.ফিল গবেষক, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া, বাংলাদেশ।
আমার বার্তা/আবুবকর সিদ্দীক মেরাজ/এমই