যদি কারো ব্যাপারে নিশ্চিতভাবে জানা যায়—তিনি হারাম অর্থেই কোরবানি দিচ্ছেন, তাহলে তার সঙ্গে এক পশুতে শরিক হয়ে কোরবানি করা নাজায়েজ। শরিয়তের দৃষ্টিতে এমন ব্যক্তির কোরবানি যেহেতু কবুল হবে না, তার সঙ্গে শরিক অন্যদের কোরবানিও কবুল হবে না।
হাদিসে এসেছে, আল্লাহর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, আল্লাহ পবিত্র; তিনি পবিত্র জিনিসই কবুল করেন। (সহিহ মুসলিম: ২৩৯৩)
হারাম সম্পদ দিয়ে করা সদকা কবুল না হওয়া প্রসঙ্গে নবিজি (সা.) বলেন, আল্লাহ শুধু হালাল সম্পদের দানই কবুল করেন। কোনো ব্যাক্তি হালাল সম্পদ থেকে দান করলে করলে দয়াময় আল্লাহ ডান হাতে তা গ্রহণ করেন। তা একটি খেজুর হলেও দয়াময়ের হাতে বৃদ্ধি পেতে থাকে। এক পর্যায়ে পাহাড়ের চেয়েও বড় হয়ে যায়। যেভাবে তোমরা নিজেদের ঘোড়ার বাচ্চা ও উটের শাবক পালন কর। (সহিহ মুসলিম: ২২১৪)
তাই কারো ব্যাপারে যদি নিশ্চিত জানা থাকে যে, তিনি হারাম অর্থে কোরবানি দিচ্ছেন, তাহলে তার সঙ্গে শরিক হয়ে কোরবানি করা থেকে বিরত থাকতে হবে।
আর কারো উপার্জন হারাম কি না, সে বিষয়ে যদি নিশ্চিতভাবে কিছু জানা না থাকে, তাহলে তার সঙ্গে কোরবানিতে শরিক হওয়া জায়েজ হবে। এ ব্যাপারে শরিকের প্রকাশ্য অবস্থা বা বক্তব্যের ওপর নির্ভর করাই যথেষ্ট। কোরবানিতে শরিক হওয়ার জন্য কারো ব্যাপারে তথ্য অনুসন্ধান বা গোয়েন্দাগিরি করা, গোপন কোনো হারাম উপার্জন আছে কি না তা খুঁজে দেখার প্রয়োজন নেই।
কোরবানির কোনো শরিকের যদি অপ্রকাশ্য হারাম উপার্জন থাকে এবং তা দিয়ে সে কোরবানি করে, তাহলেও অন্য শরিকদের কোরবানি কবুল হয়ে যাবে। কারণ তারা হারাম উপার্জনের ব্যাপারে জেনে তার সঙ্গে শরিক হয়নি। মানুষের দায়িত্ব তার জ্ঞান বা সাধ্য পর্যন্ত। আল্লাহ তাআলা বলেন, আল্লাহ কোন ব্যক্তির ওপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত কিছু আরোপ করেন না, সে ভাল যা করেছে সে তার সওয়াব পাবে এবং নিজের মন্দ কৃতকর্মের জন্য সে নিজেই নিগ্রহ ভোগ করবে। (সুরা বাকারা: ২৮৬)
যাদের ওপর কোরবানি করা ওয়াজিব
কোরবানি ওয়াজিব মুসলমান প্রাপ্তবয়স্ক, জ্ঞানসম্পন্ন (যিনি মানসিকভাবে ভারসাম্যহীন নন) মুকিম (যিনি মুসাফির নন) প্রত্যেক এমন পুরুষ ও নারীর ওপর যারা ১০ জিলহজ ফজর থেকে ১২ জিলহজ সূর্যাস্ত পর্যন্ত সময়ের মধ্যে প্রয়োজনের অতিরিক্ত নেসাব পরিমাণ সম্পদ অর্থাৎ সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ অথবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মালিক থাকে।
নগদ অর্থ, সোনা-রুপা, অলংকার, বসবাস ও খোরাকির প্রয়োজনে লাগে না এমন জমি, প্রয়োজনের অতিরিক্ত বাড়ি, ব্যবসায়িক পণ্য ও অপ্রয়োজনীয় সব আসবাব কোরবানির নেসাবের ক্ষেত্রে হিসাবযোগ্য। প্রয়োজনের অতিরিক্ত ভিন্ন ভিন্ন সম্পদের একত্র মূল্যের পরিমাণ যদি সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রুপার মূল্যের সমান হয়, তাহলেও কোরবানি ওয়াজিব হবে।
কোরবানির ক্ষেত্রে নেসাব পরিমাণ সম্পদের ওপর এক বছর অতিবাহিত হওয়া শর্ত নয়; বরং জিলহজের ১০ থেকে ১২ তারিখের মধ্যে যে কোনো সময় নেসাবের মালিক হলেও কোরবানি ওয়াজিব হবে।
অপ্রাপ্তবয়স্ক, পাগল, মুসাফির নেসাব পরিমাণ সম্পদের মালিক হলেও তাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব নয়।
আমার বার্তা/এল/এমই