
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, একদিন এক ভিক্ষুক নারী দুটি শিশু কন্যা নিয়ে আমার কাছে এসে কিছু চাইলেন। আমার কাছে একটি খেজুর ছাড়া কিছু ছিল না। আমি তাকে তা দিলাম। তিনি নিজে না খেয়ে খেজুরটি দুই ভাগ করে কন্যা দুটিকে দিয়ে দিলেন। ভিক্ষুক নারী বেরিয়ে চলে যাওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) যখন এলেন, আমি তাকে ঘটনাটি বললাম। নবী (সা.) বললেন, যাকে কন্যা সন্তান লালনপালনের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং সে ধৈর্যের সঙ্গে তাদের লালন-পালন করে, ওই সন্তানরা কেয়ামতের দিন তার জন্য জাহান্নামের আগুন থেকে আড়াল ও ঢালস্বরূপ হবে। (সহিহ বুখারি: ১৪১৮)
কন্যা সন্তান প্রতিপালনের ফজিলত
ইসলামে কন্যা সন্তান দুনিয়ায় বাবা-মায়ের সৌভাগ্য ও বরকতের কারণ, আখেরাতে নাজাতের উসিলা। কন্যা সন্তান প্রতিপালনের ফজিলত বর্ণিত হয়েছে বিভিন্ন হাদিসে। এখানে আমরা আরও কয়েকটি হাদিস উল্লেখ করছি:
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান বা তিনজন বোন আছে আর সে তাদের সঙ্গে উত্তম আচরণ করেছে, তাদেরকে নিজের জন্য অসম্মানের কারণ মনে করেনি, সে অবশ্যই জান্নাতে প্রবেশ করবে। (সুনানে তিরমিজি: ১৯১২)
আরেকটি বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তির তিনটি কন্যা সন্তান বা তিনজন বোন আছে অথবা দুজন কন্যা সন্তান বা বোন আছে, সে তাদের সঙ্গে ভাল ব্যবহার করেছে এবং তাদের ব্যাপারে আল্লাহ তাআলাকে ভয় করেছে, তার জন্য রয়েছে জান্নাত। (সুনানে তিরমিজি: ১৯১৬)
হজরত আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেন, যে ব্যক্তি দুজন কন্যা সন্তানকে লালনপালন করল এবং বিয়ের সময় হলে সুপাত্রস্থ করল, সে এবং আমি জান্নাতে একসঙ্গে থাকব যেমন হাতের দুটি আঙুল একসঙ্গে থাকে। (সুনানে তিরমিজি: ১৯১৪)
জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রা.) থেকে বর্ণিত রাসুল (সা.) বলেন, যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকে এবং সে তাদেরকে সুশিক্ষা দেয়, তাদের প্রতি দয়া করে এবং তাদের প্রতি দায়িত্ব পালন করে, তার জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়ে যায়। লোকেরা জিজ্ঞেস করল, হে আল্লাহর রাসুল! যদি দুটি কন্যা থাকে? তিনি বললেন: যদি দুটি থাকে তবুও। কেউ কেউ মনে করেন, যদি প্রশ্ন করা হতো, যদি একটি কন্যা থাকে? তাহলে তিনি বলতেন, যদি একটি থাকে তবুও। (মুসনাদে আহমদ: ১৪২৪৭)
মেয়েদের বাবা মহানবী (সা.)
মহানবীর (সা.) তিন ছেলে কাসেম, আব্দুল্লাহ ও ইব্রাহিম সবাই শিশু অবস্থায় মারা যান। তার চার মেয়ে জয়নব, রুকাইয়া, উম্মে কুলসুম ও ফাতেমা বড় হয়েছিলেন। তিনি তাদের প্রত্যেককেই আদর-ভালোবাসায় লালন-পালন করেন। উত্তম আদব-আখলাক শিক্ষা দেন। উত্তম পাত্রের সঙ্গে বিয়ে দেন। বিয়ের পরও শত ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি তাদের খোঁজ খবর রাখতেন।
মহানবীর (সা.) মেয়েদের তিনজন জয়নব, রুকাইয়া ও উম্মে কুলসুম যুবতী বয়সে তার জীবনকালেই মারা গিয়েছিলেন। আরেকজন মেয়ে ফাতেমা (রা.) অত্যন্ত প্রসিদ্ধ, আলীর (রা.) স্ত্রী ও হাসান ও হোসাইনের (রা.) মা। মহানবীর (সা.) ওফাতের সময় একমাত্র তিনিই জীবিত ছিলেন। মহানবীর (সা.) ওফাতের ছয় মাস পর তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
আমার বার্তা/এল/এমই

