বৃষ্টি পড়লেই বদলে যায় ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) ক্যাম্পাসের চিরচেনা চেহারা। পাঠশালার পরিচিত উঠোনটা হঠাৎ করে পরিণত হয় কাব্যের ক্যানভাসে। দেয়াল বেয়ে নেমে আসে পানির সরু রেখা, জানালার পাশে জমে থাকা ফোঁটাগুলো হয়ে ওঠে মুগ্ধতার আয়না। চারপাশে ছড়িয়ে পড়ে এক ধরনের নিঃশব্দ আনন্দ।
লালচে ভবনের পাশ ঘেঁষে ঝুলে থাকা বাগানবিলাস ফুলগুলো বৃষ্টিতে ভিজে আরও রঙিন আরও জীবন্ত। গাছের পাতায় জমে থাকা জলকণা আলো ছুঁয়ে ঝলমল করে ওঠে। পেছনে মাথা তুলে দাঁড়িয়ে থাকা নারকেল গাছ যেন অভিভাবকের মতো পাহারা দিচ্ছে পুরো ক্যাম্পাসকে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম পুরনো লাল ভবনটি বৃষ্টিতে ভিজে নস্টালজিয়ার ছবিতে পরিণত হয়, পাশেই দাঁড়িয়ে থাকা সাদা ভবনটি যেন ঠাণ্ডা শান্তির প্রতীক হয়ে ওঠে। আর নতুন ভবনের দেয়ালে গড়িয়ে পড়া পানির রেখাগুলো যেন ভবিষ্যতের স্বপ্ন আঁকে অদেখা কোনো পথের পূর্বাভাস।
এই সময়টাতে ক্লাসরুমের জানালা হয়ে ওঠে সবচেয়ে পছন্দের জায়গা। কেউ ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে বাইরে তাকিয়ে থাকে, কারও চোখে তখন পড়া নয়, বরং প্রকৃতির এক চুপচাপ অধ্যায়। আর কেউ কেউ বৃষ্টির শব্দে হারিয়ে ফেলে মনের কোলাহল।
দেখা যায়, কেউ ছাতা হাতে ধীরে হাঁটছেন আবার কেউ ছাতা ছাড়াই ভিজে যাচ্ছেন স্বতঃস্ফূর্ত আনন্দে। বৃষ্টির দিনে ক্লাস বাতিল হলে করিডোরে নামে আড্ডার জোয়ার। কফির কাপে ধোঁয়া ওঠে, আর কথায় মিশে যায় পুরোনো গান, নতুন গল্প আর সাময়িক আনন্দের খেলা।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী শ্রেয়া বলেন, “বৃষ্টির দিনে এই ক্যাম্পাসটাকে দেখে মনে হয় কোনো কবির হাতে আঁকা জলরঙের ছবি। নতুন ভবনের পাশ দিয়ে যখন হেঁটে যাই, ভেজা দেয়ালের গন্ধটা আমার প্রিয় হয়ে গেছে। আবার সাদা ভবনের সামনে বৃষ্টিতে দাঁড়ানোটা একধরনের অভ্যাস হয়ে গেছে। মন খারাপ থাকলেও ভালো লাগে।”
ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থী ইমাম হাসান বলেন, “বৃষ্টির দিনে এই ক্যাম্পাসটা সিনেমার মতো লাগে আলো কম, শব্দ কম কিন্তু অনুভব অনেক। বৃষ্টি মানেই ক্লাস বাতিল আর গরম চা। ক্যানটিনে বসে গল্প জমানোর এটাই তো আসল সময়।”
বৃষ্টির পর ক্যাম্পাসের প্রতিটি গাছ, ঘাস, করিডোর আর সিঁড়ি যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। একেকটা জলকণা যেন বলে এই জীবন এতটাই সুন্দর, যদি থেমে দাঁড়িয়ে একটুখানি ভিজে নেয়া যায়।
বৃষ্টির দিনে ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি (ডিআইইউ) কেবল একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থাকে না এটা হয়ে ওঠে শিক্ষার্থীদের নিজস্ব ছোট্ট পৃথিবী। যেখানে শ্রেণিকক্ষের বাইরে থাকে খোলা আকাশ, পরীক্ষার বাইরে আবেগ আর পাঠ্যবইয়ের বাইরে লেখা হয় জীবনের সবচেয়ে সুন্দর কবিতা।
আমার বার্তা/মো. আল শাহারিয়া সুইট/এমই