ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ নাসিরজাদে জানিয়েছেন, চলমান যুদ্ধবিরতিতে তেহরানের আস্থা নেই। তিনি বলেন, ‘নতুন কোনো আগ্রাসী পদক্ষেপের সম্ভাবনা মাথায় রেখে আমরা একাধিক প্রতিরক্ষা পরিকল্পনা প্রস্তুত রেখেছি।’
সোমবার (১৪ জুলাই) তুরস্ক ও মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রীর সঙ্গে পৃথক টেলিফোনালাপে নাসিরজাদে এসব মন্তব্য করেন।
তুরস্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইয়াশার গুলারের সঙ্গে আলাপচারিতায় ইরানি প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘ইসলামি প্রজাতন্ত্র অঞ্চলজুড়ে যুদ্ধ ও অস্থিরতা ছড়াতে চায় না। তবে কেউ যদি আগ্রাসনের পথে হাঁটে, তাহলে ইরান কড়া ও চূড়ান্ত জবাব দিতে প্রস্তুত।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতিতে আস্থা রাখতে পারি না। তাই সম্ভাব্য আগ্রাসনের প্রতিটি রূপের জন্য আমাদের প্রস্তুত পরিকল্পনা রয়েছে।’
জবাবে তুর্কি প্রতিরক্ষামন্ত্রী গুলার বলেন, ‘আমরা যুদ্ধবিরতির বিষয়ে সন্তুষ্ট। পাশাপাশি মনে করি, পরমাণু আলোচনা এমন একটি যৌক্তিক চুক্তির মাধ্যমে শেষ হওয়া উচিত, যা ইরান ও গোটা অঞ্চলের উপকারে আসবে।’
এদিন মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ খালিদ নোরদিনের সঙ্গেও টেলিফোনে কথা বলেন জেনারেল নাসিরজাদে। তিনি মালয়েশিয়া সরকারকে ধন্যবাদ জানান ইরানের ওপর আরোপিত ‘অন্যায় যুদ্ধ’ এবং যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেওয়ার জন্য।
মালয়েশিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী বলেন, ‘ইরান আমাদের জন্য একটি বন্ধুত্বপূর্ণ ও বিশ্বাসযোগ্য দেশ। আমরা শুরু থেকেই এই যুদ্ধের জন্য ইসরায়েলকেই দায়ী করেছি এবং স্পষ্টভাবে এর নিন্দা জানিয়েছি।’
তিনি আরও বলেন, ‘মধ্যপ্রাচ্যে ইসরায়েল তাদের কোনো লক্ষ্যই অর্জন করতে পারবে না—এ বিষয়ে আমরা আশাবাদী। ইরান দেখিয়ে দিয়েছে, ইসরায়েলের কথাবার্তা কেবল কল্পকাহিনি ছাড়া কিছু নয়।’
যে কোনো ভুল পদক্ষেপে কড়া জবাব দেবে ইরান
ইরানের সশস্ত্র বাহিনীর চিফ অব স্টাফ মেজর জেনারেল আব্দুররহিম মুসাভি হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছেন, ইরানের বিরুদ্ধে যে কোনো ভুল পদক্ষেপ বা অপকৌশল হলে দেশটি শক্তিশালী ও কঠোর জবাব দেবে।
সোমবার (১৪ জুলাই) ইসলামী বিপ্লবী গার্ড বাহিনীর (আইআরজিসি) অ্যারোস্পেস ফোর্সের সদর দপ্তর পরিদর্শনকালে মুসাভি এই মন্তব্য করেন। তিনি বলেন, যদি শত্রু আবারও কোনো ভুল করে, তবে আমাদের সাহসী সেনারা এমন জবাব দেবে, যা তাদের অনুতপ্ত করবে।
তিনি সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ খামেনিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, এ ধরনের দক্ষ ও প্রস্তুত সেনাবাহিনী থাকা দেশের জন্য গর্বের বিষয়। যতদিন এই বীর সৈন্যরা আছে, ততদিন কেউ ইরানের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করতে পারবে না।
তিনি আরও বলেন, সশস্ত্র বাহিনী কঠোর পরিশ্রম করে নিরবচ্ছিন্নভাবে অস্ত্র উৎপাদন ও প্রস্তুতির কাজে নিয়োজিত রয়েছে, যেন যে কোনো আক্রমণের মুখে তাৎক্ষণিক প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়।
‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’র রিপোর্ট
আইআরজিসি’র অ্যারোস্পেস ফোর্সের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাজিদ মুসাভি এ সময় ‘অপারেশন ট্রু প্রমিজ থ্রি’-র একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এতে ইরানের সামরিক প্রস্তুতি ও কৌশলগত সক্ষমতার বিস্তারিত তথ্য তুলে ধরা হয়।
তিনি বলেন, আমাদের সেনারা সর্বদা প্রস্তুত, ট্রিগারে আঙুল রাখা আছে। শত্রুর যে কোনো উসকানি, ভুল হিসাব বা আগ্রাসনের প্রচেষ্টায় তারা তাৎক্ষণিক জবাব দিতে সক্ষম।
মুসাভি আরও যোগ করেন, ইরানের প্রতিরক্ষা বাহিনী দেশ ও জনগণের নিরাপত্তা রক্ষায় কখনো পিছু হটবে না এবং শত্রুকে কঠিন পরিণতির জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে।
ইসলামী ঐক্য নিয়ে ইরানের প্রেসিডেন্টের বার্তা
অন্যদিকে, মাসউদ পেজেশকিয়ান সোমবার (১৪ জুলাই) পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোহসিন নাকভির সঙ্গে সাক্ষাতে বলেন, ইসরায়েল মুসলিম বিশ্বকে দুর্বল ও বিভক্ত করতে চায়। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে মুসলিম দেশগুলোর মধ্যে ঐক্য ও সংহতি অপরিহার্য।
তিনি বলেন, মুসলিম নেতাদের এখন ঐক্যবদ্ধ অবস্থান নিতে হবে এবং ইসলামী ঐক্যকে জোরদার করতে হবে।
তিনি ইরান-পাকিস্তান দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক নিয়ে সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং ভবিষ্যতে আরও সহযোগিতার আশা ব্যক্ত করেন।
পাকিস্তানের পক্ষ থেকে শুভেচ্ছা ও সমর্থন
পাকিস্তানের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নাকভি প্রেসিডেন্ট পেজেশকিয়ানকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরিফের শুভেচ্ছা জানান এবং ইসরায়েলি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে ইরানের প্রতিরোধকে ‘ইসলামী উম্মাহর গর্ব’ বলে আখ্যায়িত করেন।
তিনি বলেন, ইরানের সর্বোচ্চ নেতার প্রজ্ঞাপূর্ণ নেতৃত্ব এবং আপনার কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গিই এই বিজয়ের মূল ভিত্তি।
নাকভি আরও বলেন, ইরান-পাকিস্তান সম্পর্ক বিশেষ এবং ক্রমাগত বিস্তৃত হচ্ছে। উভয় দেশের রাষ্ট্রদূতরা এই সম্পর্ক আরও গভীর করতে নিরলস কাজ করে যাচ্ছেন।
আমার বার্তা/জেএইচ