ঠাকুরগাঁওয়ের পুলিশের হেফাজতে থাকা ১৬টি গরুর মধ্যে তিনটির মৃত্যু হয়েছে। মৃত পশুগুলোর তিনটিই ছিল দুগ্ধবতী গাভী।তিন গাভীর মালিকদের অভিযোগ, পুলিশের দাবিকৃত মোটা অঙ্কের টাকা দিতে না পারায় গাভী তিনটিকে পর্যাপ্ত খাবার ও পরিচর্যা দেওয়া হয়নি। যার কারণে তাদের মৃত্যু হয়েছে।
শনিবার (২৩ ফেব্রুয়ারি) ঠাকুরগাঁও সদর থানায় গাভীগুলোর মালিকরা একত্রিত হয়ে তাদের গরুগুলো দ্রুত ফেরত চেয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মৃত গরুগুলোর ক্ষতিপূরণ চান ভুক্তভোগীরা।
উল্লেখ্য, গত ২২ জানুয়ারি ১৬টি গরু চুরি যাওয়ার সময় উদ্ধার করা হয়। শহরের মুন্সিপাড়া এলাকা থেকে গরুগুলো উদ্ধার করে এলাকাবাসী থানায় জমা দেয়। এক মাস কেটে গেলেও গরুগুলো মালিকদের কাছে ফেরত দেওয়া হচ্ছিল না। বিভিন্ন রকম আইনি প্রক্রিয়ায় পুলিশ হেফাজতে থাকা তিনটি গরু মারা যায়।
সাবিনা খাতুন নামে এক অসহায় নারী জানান, তার একমাত্র বিদেশি ক্রস জাতের গাভীটি ছিল তাদের সংসারের একমাত্র অবলম্বন। প্রতিদিন ১৮ থেকে ২০ লিটার দুধ দিত গাভীটি। গত মাসের ২২ তারিখে পুলিশ সেটি বেওয়ারিস হিসেবে থানায় নিয়ে আসে।
সাবিনা খাতুন বলেন, আমার অসুস্থ স্বামী আর দুই সন্তানের লেখাপড়ার খরচ এই গাভী থেকেই চলত। এখন সব শেষ হয়ে গেল। অনেকবার পুলিশের কাছে গেছি। কিন্তু তারা বিভিন্ন অজুহাতে আমার কাছে অনেক টাকা দাবি করেছে। প্রথমে গরুর খাবার বাবদ ৫০ হাজার, পরে দেড় লাখ এবং সর্বশেষ তিন লাখ টাকা দাবি করে। আমরা গরিব মানুষ, এত টাকা কোথায় পাবো?
কান্নায় ভেঙে পড়া সাবিনা আরও বলেন, আমার গরুর বাজারমূল্য ৩ লাখ টাকার ওপরে।
সাবিনার সঙ্গে থানায় ছিলেন তার বৃদ্ধা শাশুড়ি তুলন বেগম। তিনিও কাঁদতে কাঁদতে বলেন, ‘গরুটি কয়েকদিন আগে একটি বাছুর জন্ম দিয়েছে। এখন মায়ের দুধ ছাড়া সেই বাছুরটিও হয়তো মারা যাবে। আমরা এর বিচার চাই। ’
শুধু সাবিনা খাতুন নন; শহরের সরকার পাড়ার বাসিন্দা বাবলু জানান, তার পরিবারের ৫টি গরু পুলিশ হেফাজতে আছে। এর মধ্যে আজ একটি গরুর মৃত্যু হয়েছে।
পাশের ঘোষপাড়ার শ্রী মহাদেব চন্দ্র ঘোষ জানান, তার দশটি গরুও পুলিশ হেফাজতে রয়েছে। এর মধ্যে দুটি গরুর মৃত্যু হয়েছে। গরু দুটির বাজারমূল্য তিন লাখ টাকার বেশি।
ভুক্তভোগী বাবলুর জামাতা গোলাম রব্বানী বলেন, ‘আমরা আদালতের মাধ্যমে মালিকানা দাবি করে শুনানি করেছিলাম। আদালত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তাকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন। তদন্ত কর্মকর্তা গত ১৩ ফেব্রুয়ারি তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশকে দিলেও, ১৬ তারিখের পর থেকে গরুগুলো মরতে শুরু করে। ’
ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান বলেন, ‘আমরা ১৬টি গরুর প্রকৃত মালিক যাচাই করে গত ১৩ তারিখে প্রতিবেদন দিয়েছি। গরুগুলোর অসুস্থ হয়ে মৃত্যুর বিষয়ে আমাদের কিছুই জানানো হয়নি। ’
ঠাকুরগাঁও সদর থানার ওসি শহিদুর রহমান বলেন, ‘পুলিশ কর্তৃক টাকা চাওয়ার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। গরুর মৃত্যু বিষয়ে ক্ষতিপূরণের বিষয়ে ভুক্তভোগীদের আবেদন করতে বলা হয়েছে। ’