বসুন্ধরা গ্রুপের কর্ণধার আহমেদ আকবর সোবহান ও এমডি সায়েম সোবহান আনভীরসহ স্বার্থসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিং অনুসন্ধান করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিআইডির ফাইন্যান্সিয়াল ক্রাইম।
সিআইডি জানায়, রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই ক্ষমতা ও অর্থের প্রভাবে জনসাধারণের ও সরকারি সম্পত্তি ভরাট করে বাস্তবায়ন করা হয়েছে বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্প।
অভিযোগ রয়েছে, দেশে একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রায়ই সোনার বাজার অস্থিতিশীল করে তুলেছে সায়েম সোবহান আনভীর সিন্ডিকেট। এছাড়া প্রতারণা, জাল জালিয়াতি, শুল্ক ফাঁকি, ভ্যাট ফাঁকি, আন্ডার ইনভয়েসিং/ওভার ইনভয়েসিং করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মানি লন্ডারিং অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিআইডি।
বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার মো. আজাদ রহমান এসব তথ্য জানান।
তিনি জানান, বিভিন্ন উৎস থেকে সিআইডি জানতে পেরেছে, বসুন্ধরা আবাসিক প্রকল্পের প্রস্তাবিত জমির কিছু অংশ রাজউকের অনুমোদন থাকলেও অধিকাংশই রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই ক্ষমতা ও অর্থের বলে জনসাধারণের ও সরকারি সম্পত্তি যেমন–খাল, বিল, নদী, খাস জমি, পতিত জমি, কবরস্থান ও বধ্যভূমি ভরাট করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। বসুন্ধরা রিভারভিউয়ের ক্ষেত্রেও রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই অবৈধভাবে জায়গা দখল ও ভরাটের কাজ করে জনসাধারণ তথা সমাজের বিত্তবান ব্যক্তিদের কাছ থেকে প্লট বিক্রির মাধ্যমে অগ্রিম এককালীন ও কিস্তির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার বিভিন্ন ব্লকে ইস্ট ওয়েস্ট প্রপার্টিজ লিমিটেড কর্তৃক বিপুল পরিমাণ জমি দখলের অভিযোগ পাওয়া যায়, যার আনুমানিক মূল্য দেড় লাখ কোটি টাকার বেশি। এসব জমি নিজেদের দখলে নিতে বিভিন্ন ধরনের প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নেয় বসুন্ধরা গ্রুপ।
সিআইডির এই কর্মকর্তা আরও জানান, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সরকারের খাস, নালা, নদীসহ ৮০০ একর (২ হাজার ৪০০ বিঘা) এবং ভাওয়াল রাজ এস্টেটের ২১৬ একরসহ মোট ১ হাজার ১৬ একর জমি বেআইনিভাবে দখল করার অভিযোগ রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপের বিরুদ্ধে।
সিআইডি বিভিন্ন সূত্রে জানতে পেরেছে, বসুন্ধরা গ্রুপ দেশের বিভিন্ন তফসিলি ব্যাংক থেকে পর্যাপ্ত জামানত না রেখে প্রতারণা ও জালিয়াতির আশ্রয় নিয়ে বিঘাপ্রতি ২০-২৫ লাখ টাকায় কেনা জমি; কাঠাপ্রতি তিন কোটি টাকা দাম দেখিয়ে ৪২ হাজার কোটি টাকারও বেশি ঋণ নিয়েছে, যার বেশিরভাগ অর্থ পাচার করা হয়েছে দুবাই, সিঙ্গাপুর, সাইপ্রাস, লন্ডন ও মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন দেশে।
বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ রহমান জানান, বসুন্ধরা গ্রুপের সিঙ্গাপুর অফিস দেখাশোনা করছেন সাদাত সোবহান তানভীর। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে একের পর এক প্রকল্প দেখিয়ে হাজার হাজার কোটি টাকা ঋণ নিলেও সেসব ঋণ পরিশোধ না করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। বসুন্ধরা ওয়েল অ্যান্ড গ্যাস (কেরানীগঞ্জ) নামের প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ট্রেড বেসড্ মানি লন্ডারিংয়ের আশ্রয় নিয়ে বিদেশ থেকে আনুমানিক দুই হাজার কোটি টাকার বিটুমিন আমদানি করে। পরে আমদানি করা বিটুমিন একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে ইচ্ছামতো দাম নিয়ন্ত্রণ করে মনোপলি বিজনেসের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করার অভিযোগও রয়েছে।
বসুন্ধরা গ্রুপের এমডি সায়েম সোবহান আনভীরকে বাংলাদেশের সোনা চোরাচালান সিন্ডিকেটের অন্যতম নিয়ন্ত্রক উল্লেখ করে সিআইডির এ কর্মকর্তা জানান, এ সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে দেশে একটি কৃত্রিম সংকট তৈরি করে প্রায়শই সোনার বাজার অস্থিতিশীল করে তোলার তথ্য পাওয়া যায়।
সিআইডির বিশেষ পুলিশ সুপার আজাদ আরও বলেন, বসুন্ধরা গ্রুপের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে প্রতারণা, জাল-জালিয়াতি, শুল্ক ফাঁকি, ভ্যাট ফাঁকি, আন্ডার ইনভয়েসিং/ওভার ইনভয়েসিং করে হাজার হাজার কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে মানি লন্ডারিং অনুসন্ধানের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সিআইডি।
আমার বার্তা/এমই