সচিবালয়ে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় কোনো ধরনের নাশকতার প্রমাণ মেলেনি। বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশনের কারণে অগ্নিকাণ্ডের সূত্রপাত হয়েছে। প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের কারণ খুঁজতে গঠিত উচ্চ পর্যায়ের কমিটি তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। এই আগুনের পেছনে কোনো ব্যক্তি সংশ্লিষ্টতা পায়নি কমিটি। বিদ্যুতের দুর্বল সংযোগের কারণে এই আগুনে ঘটনা ঘটেছে বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। ভবনের ডিজাইন এবং বাতাসের গতির কারণে আগুন ছড়িয়ে পড়ে বলে জানানো হয়েছে।
মঙ্গলবার (৩১ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় তদন্ত কমিটি এই প্রতিবেদন জমা দেয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও তদন্ত কমিটির প্রধান নাসিমুল গনি সাংবাদিকদের এই তথ্য জানান।
প্রধান উপদেষ্টার কাছে প্রতিবেদন জমা দেওয়ার পর রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনার সামনে এক প্রেস ব্রিফিংয়ে তদন্ত প্রতিবেদনের বিভিন্ন দিক নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন তদন্ত কমিটির সদস্য বুয়েটের যন্ত্রকৌশল বিভাগের সাবেক অধ্যাপক মাকসুদ হেলালী।
তদন্ত কমিটির এই সদস্য বলেন, প্রথম দিন থেকে আমরা যথেষ্ট সময় নিয়ে আন্তরিকভাবে বিষয়টি দেখার চেষ্টা করেছি। বিভিন্ন সংস্থার সহায়তায় আমরা সুনির্দিষ্ট একটি রিপোর্ট তৈরি করতে পেরেছি। যদিও সুনির্দিষ্ট বলছি, তারপরও এটিকে আরও বেশি সমৃদ্ধ করার জন্য আরও কিছু টেস্ট দেশে-বিদেশে করাবো। তাতে আমাদের রিপোর্ট আরও নিশ্চিত হবে। প্রাথমিকভাবে আমরা দেখেছি, ভিডিও পাওয়ার আগে এবং পরে মিলিয়ে দেখেছি, ফলাফল একই।
মাকসুদ হেলালী বলেন, আগুনের সূত্রপাতের সময় ১টা ৩২ থেকে ৩৯ মিনিট। সূত্রপাত একটি নির্দিষ্ট সময়ে নয়, সাত মিনিট ধরে আস্তে আস্তে স্পার্কের মাধ্যমে যে জায়গায় আগুন লেগেছে সেটি গরম হয়েছে। সেখান থেকে ম্যাটেরিয়াল গলে পড়েছে। তারপর সেটা একসময় ইনগনিশন টেম্পারেচারে গিয়েছে।
আগুন ছড়িয়ে পড়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আগুন ধরার সঙ্গে সঙ্গে সেখানে ধোঁয়া হয়েছে এবং ফ্লেম ভার্টিকালি উপরের দিকে উঠে গেছে। আর ধোঁয়া সচিবালয়ের একটি টানেলের প্রভাবে পশ্চিম দিকে বেরিয়ে গেছে। এতে আপাত দৃষ্টিতে মনে হয়েছে আগুন দুই জায়গায়। বাস্তবে আগুনের সোর্স একটাই। কিন্তু বাতাসের গতি, বিল্ডিংয়ের ডিজাইনের ভিন্নতার কারণে দুই দিকে প্রবাহিত হয়েছে।
গত বুধবার (২৫ ডিসেম্বর) গভীর রাতে সচিবালয়ের ৭ নম্বর ভবনে ভয়াবহ আগুন লাগে। এতে ভবনের ৬, ৭, ৮, ৯ তলা ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে অষ্টম ও নবম তলায় ক্ষতি হয়েছে বেশি, সেখানকার অধিকাংশ নথি পুড়ে যায়। এ ঘটনায় বৃহস্পতিবার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব নাসিমুল গনির নেতৃত্বে আট সদস্যের একটি উচ্চপর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে সরকার। কমিটিকে অগ্নিকাণ্ডের কারণ ও উৎস খুঁজে বের করে তিন দিনের মধ্যে প্রাথমিক তদন্ত প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।
কমিটির অন্য সদস্যরা হলেন: গৃহায়ণ সচিব, পুলিশের আইজিপি, কমিটির সদস্যসচিব থাকবেন ফায়ার সার্ভিস এবং সিভিল ডিফেন্সের প্রধান, সশস্ত্র বাহিনীর একজন বিস্ফোরক বিশেষজ্ঞ এবং বুয়েট থেকে ৩ জন বিশেষজ্ঞ, একজন সিভিল ইঞ্জিনিয়ার, একজন কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার এবং একজন ইলেট্রনিক ইঞ্জিনিয়ার।
আমার বার্তা/এমই