ই-পেপার রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৯ আষাঢ় ১৪৩২

সড়কে নেই চাঁদাবাজি তাও কমেছে না নিত্যপণ্যের দাম

নিজস্ব প্রতিবেদক
১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১২:২৪
আপডেট  : ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ১৪:২৮

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকারের আমলে সড়কে চাঁদাবাজি চলতো রাজনৈতিকভাবেই। এর পাশাপাশি নামে বেনামে চাঁদার স্লিপ দিয়ে টাকা তোলার ঘটনা ছিল দেশের সর্বত্র। সবচেয়ে বেশি চাঁদাবাজি হতো আন্তঃবিভাগীয় সড়ক ও মহাসড়কগুলোতে। বিভিন্ন পণ্যের পরিবহন ব্যয়ের সাথে যোগ হতো চাঁদার অর্থ। ফলে পণ্যমূল্য যেতো বেড়ে, চলে যেতো ক্রেতার ক্রয় ক্ষমতার বাইরে।

কিন্তু এখন আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতাচ্যুত। বদলে গেছে সড়কের দৃশ্য। এখন আর সড়কে চাঁদাবাজি নেই! কমেছে পরিবহন জ্বালানি তেলের দামও। কিন্তু তার সুবিধা কি পাচ্ছে সাধারণ ক্রেতা? কমেছে কি নিত্যপণ্যের দাম?

সেসব প্রশ্ন নিয়েই এই প্রতিবেদক ঘুরে এলেন বাজার। খোঁজ-খবর নিলেন সংশ্লিষ্ট মহলে। তাতে জানলেন, বদলায়নি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের বাজারের চিত্র। কমেনি নিত্যপণ্যের দাম। সড়কে পরিবহন ব্যয় কমলেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে হচ্ছে চড়া দামেই। ফলে সাধারণ মানুষের ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি।

তাহলে প্রশ্ন ওঠে পরিবহন ব্যয় কমলেও বাজারে কেনো কমছে না নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যের দাম? সে প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে জানা গেলো, দেশের রাজনৈতিক পট পরিবর্তন হলেও বদলায়নি সিন্ডিকেটের দাপট। এতে বাজারের যে নৈরাজ্য আগে ছিল, এখনও তেমনই আছে। হেরফের হয়নি কিছুই।

সড়কে চাঁদাবাজদের উপস্থিতি না থাকলেও এখনও ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে রয়েছে নিত্য পণ্যের বাজার। ফলে নিয়ন্ত্রণে আসছে না দাম। অথচ ক্রেতা সাধারণের অধিকার নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংস্থার দাবি, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে নিয়মিত চলমান রয়েছে অভিযান। তবে বাজারে তার কোন প্রভাব দেখছেন না সাধারণ ক্রেতা।

সোমবার (১৬ সেপ্টেম্বর) রাত ১০টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত রাজধানীর কারওয়ানবাজার ঘুরে ও সবজির ট্রাক চালকদের সঙ্গে কথা বলেন এই প্রতিবেদক। বাইরে তখন ঝুম বৃষ্টি। বৃষ্টির মধ্যেই ট্রাক ও পিক আপ ভ্যান থেকে সবজি লোড আনলোডের কাজ চলছিলো। রাত যত বাড়ে এখানে ব্যস্ততা ও ভিড় ততই বাড়তে থাকে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা সবজিসহ বিভিন্ন পণ্যের ট্রাক ও পিকআপ ভ্যান এসে পৌঁছাতেই শুরু হয় সেগুলো থেকে পণ্য নামানোর কাজ।

এরমাঝেই কথা হয় পণ্য পরিবহন ট্রাকের চালক ও শ্রমিকদের সাথে। তারা বলেন, সবজির গাড়ি থেকে এখন আর কোথাও কোনো ধরনের চাঁদা তোলার ঘটনা ঘটে না।

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে সবজির ট্রাক নিয়ে এসেছেন সেলিম। তার কাছে সড়কে চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, এখন রোডে গাড়িতে কোনো চাঁদা দেওয়া লাগে না।

‘আগে যার কাছ থেকে যেমন পারতো চাঁদা নিতো। গাড়ি আটকালেই চাঁদা দেওয়া লাগতো। ২০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা দেয়া লাগতো,’ বলেন তিনি।

‘হাতে একটা লাঠি নিয়ে আসতো। চাঁদা দিতে রাজি না হলেই গ্লাসটা ভেঙ্গে দিতো। এই গ্লাসটার দাম ৭ হাজার টাকা। এখন এই দুই তিনশো টাকার জন্য ৭ হাজার টাকার গ্লাসটা ভেঙ্গে দিবে এটা কি কেউ চায় বলেন? তার ওপর কারওয়ানবাজারে পৌঁছালে সিটি করপোরেশনের খাতে ৩০০ টাকা চাঁদা দিতে হতো এখন সেই চাঁদাও দেয়া লাগে না। এছাড়াও পুলিশ ছিল সড়কে। তাদেরও চাঁদা দেয়া লাগতো। পুলিশও এখন আর চাঁদা নিচ্ছে না।’

চাঁপাইনবাবগঞ্জ থেকে ঢাকা পৌঁছতে আগে কত টাকা চাঁদা দেওয়া লাগতো তার একটা হিসাব জানতে চাইলে এই ট্রাক চালক বলেন, ‘প্রতি ট্রিপে ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা চাঁদার পেছনে চলে যেতো।’

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে পিকআপ ভর্তি সবজি নিয়ে রাজধানীর কারওয়ানবাজারে আসেন মো. বিল্লাল হোসেন। তিনিও ডেল্টা টাইমসকে জানালেন, এখন আর চাঁদা দেয়া লাগে না।

তবে টোল প্লাজায় একদম ধীরগতিতে কাজ হয় এমনটা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘তারা আস্তে আস্তে কাজ করে তাই জ্যাম লেগে যায়, সময় বেশি লাগে।’

দুটি টোল প্লাজা পার হতেই দুই ঘণ্টার উপরে সময় লেগে যায় এমনটা জানালেন বিল্লাল।

আর সেলিম জানালেন টোকাইদের উপদ্রবের কথা। এরা হুটহাট ট্রাকে উঠে পড়ে এবং পণ্য ঢেকে রাখা ত্রেপল বা জাল কেটে সবজি বা যে কোনো পণ্য নিয়ে যায়। সড়কে পুলিশের শক্ত টহল না থাকায় এদের উপদ্রব বাড়ছে, মত সেলিমের।

চাঁদার বিষয়ে জানতে চাইলে বিল্লাল বলেন, ‘আগে মেলা টাকা চাঁদা দেওয়া লাগতো আগে। গাড়ি কারওয়ানবাজারে লাগানোর সাথে সাথেই সিটি করপোরেশনের নামে ৩০০ টাকা চাঁদা দেওয়া লাগতো। সারা রাস্তা তো ছিলই। রাস্তায় এতোটুকু পথ আসতে চার জায়গা চাঁদা দিতে হতো। প্রতি জায়গা ৩০ টাকা মানে মোট ১২০ টাকা। আর যেখানে পুলিশ ধরতো সেখানে দিতে হতো ১৫০ টাকা। তিন চারটা টিকিট হাতে ধরিয়ে দিয়ে চাঁদা নিতো। এছাড়া এই সভা, ওই সভা, এই লীগ-ওই লীগ, মানে চাঁদার কোন শেষ ছিল না।’

সাতক্ষীরা থেকে কাঁচা মরিচের ট্রাক নিয়ে কারওয়ান বাজারে এসেছেন সাহেব আলী। চাঁদাবাজির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোথাও কোন চাঁদা দেয়া লাগছে না এখন।

আগে ঢাকা পর্যন্ত আসতে কেমন টাকা চাঁদা দেয়া লাগতো জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগে সাতক্ষীরা থেকে গাড়ি নিয়ে বের হওয়ার মুখেই চাঁদা দিতে হতো। এরপর খুলনা, যশোর, ফরিদপুর হয়ে ঢাকাসহ অনেক জায়গায় চাঁদা দেয়া লাগতো। এখন কোন কিচ্ছু নেই, ঝামেলা নেই। এমনকি পুলিশকেও টাকা দেয়া লাগছে না।

যশোরের সাতমাইল থেকে ঢাকার কারওয়ান বাজারে বিভিন্ন ধরনের সবজির ট্রাক নিয়ে এসেছেন রমজান আলী। তিনি বলেন, ‘আগে রাস্তায় চাঁদা দিতে দিতে পাগল হয়ে যেতে হতো। আর এখন রাস্তায় কোন চাঁদা দেওয়া লাগে না।’

চাঁদাবাজি কমার পাশাপাশি পণ্য পরিবহনে তেলের দামও কিছুটা কমেছে। তবে তার প্রভাবও নেই, পরিবহন ভাড়ায়। সেখানেও সিন্ডিকেটের দৌরাত্ম্যের কথা বলছেন সংশ্লিষ্টরা।

মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া থেকে পিকআপ ঢাকা আসতে ভাড়া কেমন জানতে চাইলে বিল্লাল জানালেন, আগে ভাড়া ছিল ৩৫০০ টাকা। এখনও একই ভাড়া।

তেলের দাম কমেছে, ভাড়া কমেনি কেনো? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সেটা মালিক পক্ষই বলতে পারবে। তবে এই চালকের দাবি, এখন মাত্র দুই টাকা কমেছে তেলের দাম। তিনি বলেন, যে তেলের দাম ছিল লিটারে ৬০ থেকে ৬৫ টাকা। সেই তেল এক লাফে গেলো ৯০ টাকায়। সেখান থেকে আবার ১১৫টাকা। তারপর দাম কমে আসলো ১০৯ টাকা। তার থেকে আবার ১০৫ টাকায় এসে ঠেকেছে।

তবে ভাড়া নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে চালকদের মধ্যে। সাতক্ষীরা থেকে আসা ট্রাক চালক জানালেন, ভাড়া এখন কিছুটা কমেছে। সাতক্ষীরা থেকে ১৮ হাজার টাকা ভাড়ায় এসেছেন যা আগে ২২ থেকে ২৪ হাজার টাকা ছিল।

‘এখন মাল কম, গাড়ি বেশি, তাই ভাড়া কম,’ বলেন এই চালক।

পরিবহনে চাঁদাবাজি না থাকা, তেলের দাম কমার প্রভাব দ্রব্যমূল্যে পড়বে এমন ধারণা থেকে সরেজমিন দেখতে পরের দিন মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) এই প্রতিবেদক আবার যান কারওয়ানবাজার। এদিন তার কথা হয় বেশ কয়েকজন ক্রেতার সাথে। রাব্বি নামের এক ক্রেতাকে বেশ হতাশ দেখা গেলো। তিনি বলেন, ‘সবাই বলছে দেশ নতুন করে স্বাধীন হয়েছে। আসলে দেশ নামেই স্বাধীন। এখানে স্বাধীনের প্রভাব কি দেখেন? হ্যাঁ সড়কে চাঁদাবাজি নেই সেটা শুনেছি, কিন্তু সেই প্রভাব কি বাজারে পড়েছে? কোন কিছুর দাম কমেছে? কোন কিছুর দামই কমেনি!’

‘আসলে আমাদের দেশটা ব্যবসায়ীদের কাছে জিম্মি। তারা যা বলবে তাই হবে। সুতরাং এই স্বাধীনতার মধ্যে আমি কোন পার্থক্য দেখছি না,’ বলছিলেন হতাশ এই ক্রেতা।

মো.ফজলু নামের আরেক ক্রেতা বলেন, বাজারে কোন জিনিসের দাম কমেনি। সব আগের মতই আছে। যেখানে এখন কোথাও কোনো চাঁদাবাজি নেই সেখানে বাজারে কোন কোন জিনিসের দাম কমলো না? সে প্রশ্ন তারও।

জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরে মহাপরিচালক (অতিরিক্ত দ্বায়িত্ব) কাজী মুহাম্মদ মোজাম্মেল হকের কাছে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য নিয়ন্ত্রণে কি উদ্যোগ রয়েছে তা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আনতে আমরা নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছি।’

সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ হলেও দাম এখনও নিয়ন্ত্রণে না আসার কারণ কি হতে পারে এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘দেশের বিভিন্ন স্থানে বন্যা পরিস্থিতি, বৃষ্টি-বাদল চলছে, সেটাও বড় কারণ।’

কাজী মোজাম্মেল বলেন, ‘মূলত আমরা ক্রয়মূল্য এবং অন্যান্য খরচের নিরিখে বিক্রয়ের জন্য কতটা দাম নির্ধারণ করেছে সেটা দেখে অভিযান চালাই। আমাদের নিয়মিত অভিযান চলছে। দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে আমরা কাজ করছি।’

আমার বার্তা/জেএইচ

টানা বৃষ্টিতে মাঠে পানি জমে পচে যাচ্ছে মরিচ গাছ

মাত্র দুই দিন আগেও কাঁচা মরিচ ছিল সহজলভ্য। আজ সেটি যেন রীতিমতো রত্নের মর্যাদা পাচ্ছে

এশিয়ান পেইন্টস ‘কালার নেক্সট-২০২৫’: ‘কার্ডিনাল’ হলো নতুন বছরের রঙ

বিশ্বের অন্যতম শীর্ষস্থানীয় পেইন্ট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এশিয়ান পেইন্টস বাংলাদেশে আয়োজন করল তাদের বহুল প্রতীক্ষিত বার্ষিক

এখন থেকে আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড নাম থাকবে না: জ্বালানি উপদেষ্টা

এখন থেকে আর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড বা এনবিআর নাম থাকবে না বলে জানিয়েছেন বিদ্যুৎ জ্বালানি

এমিরেটস এয়ারলাইন্সে বৃদ্ধ যাত্রীকে হয়রানির অভিযোগ

বিশ্বখ্যাত এমিরেটস এয়ারলাইন্সের বিরুদ্ধে এক বৃদ্ধ যাত্রীর হয়রানির অভিযোগ উঠেছে, যা যাত্রীসেবা নিয়ে নতুন করে
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

টানা বৃষ্টিতে মাঠে পানি জমে পচে যাচ্ছে মরিচ গাছ

বিমানবন্দরে পিকআপ ভ্যানের ধাক্কায় আহত মোটরসাইকেল চালকের মৃত্যু

সরকার সর্বক্ষেত্রেই ধারাবাহিক ব্যর্থতার প্রমাণ দিচ্ছে: জাতীয় পার্টি

চট্টগ্রামে আন্দোলনে হামলা, সাবেক কাউন্সিলর গ্রেপ্তার

মৌলভীবাজারে এনসিপির জেলা সমন্বয় কমিটি ঘোষণা

গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে শহীদ মিনারে হবে চলচ্চিত্র প্রদর্শনী-কনসার্ট

ভূমি উন্নয়ন কর আদায়ে এসিল্যান্ডদের আরও উদ্যোগী হতে বললেন উপদেষ্টা

রাশিয়ার গৃহীত সব পদক্ষেপকে ‘নিঃশর্ত সমর্থন’ করতে প্রস্তুত কিম জং উন

জাহাজের সবাই মুসলিম: হুথির হামলা থেকে বাঁচতে নতুন কৌশল নাবিকদের

শিবচরে নিখোঁজের ১১ দিন পর যুবকের মরদেহ উদ্ধার

চলতি সপ্তাহে বড় ধরনের অগ্রগতি ঘটাতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ

সাবেক এমপি নদভীর পিএস গ্রেপ্তার

পদত্যাগ করতে পারেন এফবিআইর প্রধান কাশ প্যাটেল: রিপোর্ট

পিএসসি সংস্কার দাবিতে চাকরি প্রত্যাশীদের ১১ দফা, ৪৮ ঘণ্টার আল্টিমেটাম

এশিয়ান পেইন্টস ‘কালার নেক্সট-২০২৫’: ‘কার্ডিনাল’ হলো নতুন বছরের রঙ

এনবিআরের দুই বিভাগে সচিব নিয়োগে হবে নতুন নীতিমালা: জ্বালানি উপদেষ্টা

বিতর্কিত ৩ নির্বাচন তদন্তে যেসব বিষয়ে সতর্ক করলেন বিশ্লেষকরা

যুক্ত হচ্ছে ‘জুলাই গণঅভ্যুত্থান’ কোটা, বাদ পড়ছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা

আবু সাঈদ হত্যা : চার আসামি ট্রাইব্যুনালে

বড় ধরনের অগ্রগতি ঘটাতে চায় কমিশন: আলী রীয়াজ