যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের পর এশিয়ার শেয়ার বাজারেও এসেছে পরিবর্তন। পাশাপাশি মার্কিন শেয়ার সূচকের ধাক্কায় গতকাল সোমবারও এশিয়া ও ইউরোপের শেয়ার বাজারে বড় ধরনের ধস হয়েছে। বিবিসির সংবাদে বলা হয়েছে, গতকাল সকালে জাপানের নিক্কি ২২৫ সূচকের পতন হয়েছে ৬ দশমিক ৩ শতাংশ, হংকংয়ের হ্যাং সেং সূচকের পতন হয়েছে ৯ দশমিক ৮ শতাংশ। তাইওয়ান ও সিংগাপুরেও শেয়ারের দাম কমেছে। তাইওয়ানে কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ এবং সিংগাপুরে কমেছে প্রায় ৮ দশমিক ৫ শতাংশ।
গতকাল টানা দ্বিতীয় দিনের মতো ইউরোপের শেয়ার বাজারেরও ধস নেমেছে। ইউরোপের শেয়ার বাজারের মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা প্যান-ইউরোপিয়ান স্টক্স ৬০০ সূচকটি এদিন লেনদেন শুরুর পরপরই ৬ শতাংশ কমেছে। দিনের শুরুতে জার্মানির ডিএএক্স সূচকটি কমেছে প্রায় ১০ শতাংশ। আমস্টারডাম স্টক এক্সচেঞ্জে দরপতন হয়েছে ৬ দশমিক ২৪ শতাংশ। এছাড়া বেলজিয়াম স্টক মার্কেটে ৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ এবং ফ্রান্সের শেয়ার বাজার সিএসি ৪০-এ ৬ দশমিক ১৪ শতাংশ দরপতন হয়েছে। ওয়াশিংটনভিত্তিক কৌশলগত পরামর্শক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান এশিয়া গ্রুপের সহযোগী রিন্টারো নিশিমুরা বলেন, এই শুল্ক আরোপের প্রভাব নিয়ে অনেক বেশি অনিশ্চয়তা কাজ করছে। আর এ কারনেই শেয়ারের দামে এত বড় ধস হচ্ছে। গতকাল ভারতের শেয়ার বাজারেও বড় ধস নেমেছে। লেনদেন শুরু হওয়ার মাত্র ২০ সেকেন্ডের মধ্যে বিনিয়োগকারীদের ২০ লাখ কোটি রুপি বাজার মূলধন কমে গেছে। এই বাজারের মূল সূচক সেনসেক্সের পতন হয়েছে ৪ হাজার পয়েন্ট। শেষ অধিবেশনের তুলনায় সূচকের পতন হয়েছে ৩ দশমিক ৫ শতাংশ। সেই সঙ্গে বাজারের আরেক সূচক নিফটির পতন হয়েছে ১ হাজার পয়েন্টের বেশি। বোম্বে স্টক এক্সচেঞ্জের সেনসেক্সভুক্ত কোম্পানিগুলোর মধ্যে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে টাটা স্টিল (-১০%), টাটা মোটরস (-৭.৮৬%), ইনফোসিস (-৬.৯৮%), টেক মাহিন্দ্রা (-৬.৩৬%) ও এলঅ্যান্ডটি (-৬.৪৫%)। পরে অবশ্য বাজার কিছুটা ঘুরে দাঁড়িয়েছে।
বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ট্রাম্পের শুল্কযুদ্ধের কারণেই শেয়ার বাজারে এই রক্তক্ষরণ। এশিয়ার শেয়ার বাজারের পাশাপাশি মার্কিন শেয়ার সূচক নাসডাক ও ডাও জোন্সেরও বড় পতন হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শুল্কনীতি ঘোষণার পরপরই। গতকাল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াল স্ট্রিটের স্টক মার্কেট ফিউচার্স সূচকও অনেকটা পড়ে গেছে। গত সপ্তাহে মার্কিন শেয়ার বাজার ৬ লাখ কোটি ডলারের বেশি বাজারমূল্য হারিয়েছে।
শেয়ার বাজারের টালমাটাল পরিস্থিতির এই পরিপ্রেক্ষিতে গত রবিবার (যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় সময়) এ সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তরে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেছেন, শেয়ার বাজারের কী হবে, আমি সেটা বলতে পারব না। কিন্তু আমাদের দেশ অনেক শক্তিশালী। এয়ারফোর্স ওয়ানে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ট্রাম্প তার প্রশাসনের ব্যাপক শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তকে সমর্থন জানিয়ে বলেছেন, বিশ্বের অনেক নেতা ‘একটি চুক্তি করতে মরিয়া’ হয়ে আছেন।
এক দিনে ৫০ হাজার কোটি রিয়াল হারিয়েছে সৌদি পুঁজিবাজার। শুল্ক আরোপের ফলে সৃষ্ট বাণিজ্যযুদ্ধের প্রভাবে সৌদি আরবের শেয়ার বাজারেও নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। গত রবিবার একদিনেই ৫০ হাজার কোটি রিয়ালের বেশি বাজারমূল্য হারিয়েছে সৌদি আরবের শেয়ার বাজার। উপসাগরীয় অন্যান্য শেয়ার বাজারের একই অবস্থা। জ্বালানি তেলের ব্যাপক মূল্যহ্রাস ও বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে দরপতনও উপসাগরীয় বাজারে পতনের ক্ষেত্রে ভূমিকা রেখেছে। সৌদি আরবের শেয়ার বাজারের প্রধান সূচক তাদাউল অল শেয়ার ইনডেক্স (টিএএসআই) ৭০০ পয়েন্টের বেশি (৬ দশমিক ১ শতাংশ) কমে ১১ হাজার ২০০ পয়েন্টের নিচে নেমে এসেছে। এই পতনে সবচেয়ে বড় অবদান রেখেছে সৌদি আরামকো। কোম্পানিটির বাজারদর ৩৪ হাজার কোটি রিয়ালের বেশি কমেছে। অন্যান্য উপসাগরীয় সূচকেও সামগ্রিকভাবে পতন দেখা গেছে। গতকাল কাতার, কুয়েত, ওমান ও বাহরাইনও শেয়ার বাজারের পতনের খরবও বিভিন্ন গণমাধ্যম জানিয়েছে।
আমার বার্তা/এল/এমই