দশ দিন পেরিয়ে গেলেও মেলেনি সংস্কার, সারাদেশে কর্মবিরতির মতো কঠোর কর্মসূচিতে যেতে পারে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সেবায় জড়িত কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
বৃহস্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১১ টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ (মিটফোর্ড) হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও জাতীয় বার্ন এন্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এক দফা দাবিতে এই কর্মসূচি পালন করছে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সেবায় জড়িত কর্মকর্তা কর্মচারীরা।
মিটফোর্ড হাসপাতালে নার্সদের সংস্কার চেয়ে সিনিয়র স্টাফ নার্স মো. বিল্লাল হোসেন জানান , "আমাদের নার্স শিক্ষকদের যখন পদায়ন করা হয় তখন নামমাত্রে পদোন্নতি দেয়া হয়। উদাহরণ স্বরূপ আমাদের একজন সিনিয়র স্টাফ নার্সকে পদোন্নতি দিয়ে যখন সুপারভাইজার করা হয়, তখন বলা হয় দশম গ্রেডে আপনি নিজ বেতনে চাকরি করবেন। ইভেন ডেপুটি সুপারেন্টেন নার্স থেকে শুরু করে নার্সিং সুপারেন্টেন পর্যন্ত নাম মাত্রে পদায়ন করা হয়।তখনও বলা হয় নিজ বেতনে আপনি চাকরি করবেন। পৃথিবীর কোথাও কোন প্রতিষ্ঠানে এমন রীতিনীতি আছে কিনা তা আমার জানা নেই, আমরা এটা মেনে নিতেও পারিনা"।
এ সময় মিটফোর্ড হাসপাতালের জরুরি বিভাগের সামনে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তা কর্মচারীরা মিছিল সহ শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।
অপরদিকে আজ দুপুরের দিকে ঢামেক হাসপাতালের প্রশাসনিক ব্লকের সামনে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার চেয়ে বিভিন্ন স্লোগান ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন নার্সিং সেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।এ সময় সংক্ষিপ্ত এক বক্তব্যে নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের সদস্য মর্জিনা আক্তার বলেন,আমরা হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগীদের চিকিৎসা সেবায় বিঘ্ন না ঘটিয়ে গত ৯ সেপ্টেম্বর থেকে আজ পর্যন্ত আমাদের এক দফা দাবি নিয়ে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এ কর্মসূচি অব্যাহত রাখবো।
নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের সদস্য মোঃ নিজাম উদ্দিন বলেন, আমরা যেহেতু রোগীদের সেবায় নিয়োজিত আছি তাই আজ বৃহস্পতিবারের কঠোর কর্মসূচি না দিয়ে
আগামী রবিবার আমরা প্রধান উপদেষ্টার বরাবরে স্মারকলিপি প্রধানের কর্মসূচি রেখেছি। তবে আমাদের যে দাবি ছিল 'সে ফর ওয়ান পয়েন্ট ডিমান্ভ ' সে দাবি পূরণ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের আন্দোলন চলমান থাকবে। এ সময়ে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আহবায়ক কমিটির সদস্য মো. মাসুদ পারভেজ,নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের সদস্য নাসরিন সুলতানা সহ নার্সিং সেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
সকাল সাড়ে ১১ টায় জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সামনে একই দাবিতে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন নার্সি ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের সদস্য, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের নার্সিং সুপারভাইজার বকুল রানী বলেন, আমরা বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো হাসপাতালে রোগীদের পাশে নিয়মিত সেবা দান করে আসছি। আজ আমরা রাস্তায় নামতে বাধ্য হয়েছি প্রশাসনের কিছু ক্যাডার কর্মকর্তার ঔদ্ধত আচরণ ও কটুক্তির কারণে। আমাদের উপযুক্ত নার্সদের সঠিক জায়গায় না বসিয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের আমলাদের বসিয়ে আমাদেরকে নিয়মিত হয়রানি মূলক বদলি করা হচ্ছে। তাই আমরা সারা বাংলাদেশে চিকিৎসা সেবা কাজে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা আজ এক দফার দাবিতে সোচ্চার হয়েছি। আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমাদের এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।
নার্সিং সংস্কার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সমন্বয়ক সাব্বির মাহমুদ তিহান বলেন, আমরা দীর্ঘ দশ দিন যাবত আমাদের এক দফা সংস্কারের দাবি শান্তিপূর্ণভাবে চালিয়ে যাচ্ছি। আমাদের দাবিগুলো খুবই সাধারণ এবং যৌক্তিক। বিগত নার্সিং মিডওয়াইফারি অধিদপ্তর এবং নার্সিং কাউন্সিল হবে সকল নন-মেডস ক্যাডার প্রশাসন অপসারণ পূর্বক এইসব পদে যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা সম্পন্ন নার্সদের পদায়ন নিশ্চিত করা। কিন্তু এখন পর্যন্ত আমরা আশানুরূপ কোন ফলাফল পাইনি। মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা এবংস্বাস্থ্য উপদেষ্টার বরাবরে আমরা জানাতে চাই আমরা সেবার মানুষ, সেবার মাধ্যেই আমরা মানসিক শান্তি খুঁজে পাই। যদি আমাদের যৌক্তিক দাবি গুলো পূরণ করা না হয় তাহলে আমরা সেবায় মনোনিবেশ করতে পারছি না। আমাদেরকে সেবায় ফিরিয়ে দেয়ার সুযোগ করে দিন। আমরা রাস্তায় নামতে চাই না। এ সময়ে অন্যান্যদের মাঝে উপস্থিত ছিলেন নার্সিং ও মিডওয়াইফারি সংস্কার পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জাহিদ হোসেন, জাতীয় বার্ন ইন্সটিটিউটের নার্সিং সংস্কার পরিষদের আহবায়ক কামরুন নাহার সহ নার্সিং সেবায় নিয়োজিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
আমার বার্তা/এম রানা/এমই