যুক্তরাষ্ট্রের মিশিগান অঙ্গরাজ্যে মুসলিম সমর্থকদের প্রশংসা করেছেন রিপাবলিকার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। তিনি বলেছেন, গাজা যুদ্ধ বন্ধে বাইডেন প্রশাসনের হস্তক্ষেপ নিয়ে যেসব মুসলিম ভোটার ক্ষুব্ধ তারা মিশিগানে তাকে জয়ী করতে পারেন। তিনি মুসলিম সমর্থকদের উদ্দেশে বলেন, তারা শান্তি চায়, তারা যুদ্ধে থাকতে চায় না। তারা অনেক স্মার্ট।
এ বছরের নির্বাচনে সুইং স্টেট হিসাবে পরিচিত পাওয়া রাজ্যগুলোর মধ্যে আছে অ্যারিজোনা, পেনসিলভানিয়া, জর্জিয়া, উইসকনসিন, মিশিগান, নর্থ ক্যারোলাইনা এবং নেভাদা। প্রত্যেক নির্বাচনের সময় দেখা গেছে যেসব রাজ্যের ভোট বেশি, প্রার্থীরা সেসব রাজ্যে নির্বাচনী প্রচারণার পেছনে অনেক বেশি সময় ও অর্থ ব্যয় করে থাকেন।
বেশিরভাগ অঙ্গরাজ্যই প্রতিটা নির্বাচনে ধারাবাহিকভাবে একই দলকে ভোট দিয়ে আসে। আমেরিকার নির্বাচনে রিপাবলিকান দুর্গ বলে পরিচিত অঙ্গরাজ্যগুলোকে বলা হয় ‘রেড স্টেট’ বা ‘লাল রাজ্য’ আর ডেমোক্র্যাটদের প্রাধান্য পাওয়া স্টেটগুলোকে বলা হয় ‘ব্লু স্টেট’ বা ‘নীল রাজ্য’।
ফলে এসব রাজ্য নিয়ে প্রার্থীদের খুব বেশি চিন্তা করতে হয় না বা মনোযোগ দিতে হয় না। কিন্তু হাতে গোনা কিছু অঙ্গরাজ্য আছে যে রাজ্যগুলোর ভোট, প্রার্থীদের কারণে যে কোনো শিবিরে যেতে পারে। ফলে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থীরা নির্দিষ্ট কিছু ‘সুইং স্টেট’এর দিকে নজর দেন যেখানে ভোট কোন পার্টির পক্ষে যাবে, তা নির্দিষ্ট করে বোঝা যায় না।
এগুলোই হল আমেরিকান নির্বাচনের ব্যাটলগ্রাউন্ড বা নির্বাচনী রণক্ষেত্র। এগুলোকেই অনেকে বলে থাকে ‘বেগুনি রাজ্য’। প্রার্থীদের কাছে এসব অঙ্গরাজ্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়ায়। যেগুলোকে বলা হয় ব্যাটলগ্রাউন্ড স্টেট বা নির্বাচনী রণক্ষেত্র। আর এই অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটই শেষ পর্যন্ত হয়ে দাঁড়ায় জয় পরাজয়ের মূল চাবিকাঠি।
শেষ দিকের প্রচারণায় কমলা হ্যারিস এবং ডোনাল্ড ট্রাম্প বেশ ব্যস্ত সময় পার করেছেন। মিশিগান স্টেট ইউনিভার্সিটিতে এক সমাবেশে দেওয়া বক্তৃতায় কমলা হ্যারিস বলেছেন, গাজা যুদ্ধ অবসানে তিনি তার ক্ষমতা অনুযায়ী সবকিছুই করবেন।
মিশিগানেই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে বড় আরব আমেরিকান জনগোষ্ঠীর বাস। ডোনাল্ড ট্রাম্প শুক্রবার আরব-সংখ্যাগরিষ্ঠ শহর ডিয়ারবর্নে সমাবেশ করেছেন। ডেমোক্র্যাটদের মধ্যপ্রাচ্য নীতি ও ইসরায়েলকে আর্থিক সুবিধা দেওয়া নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে থাকা ক্ষোভকে পুঁজি করে বক্তব্য দিয়েছেন তিনি।
ট্রাম্পের কয়েকটি বক্তৃতা শুনে ধারণা পাওয়া যাচ্ছে যে, তিনি পেনসিলভানিয়া, নর্থ ক্যারোলিনা ও জর্জিয়ায় যেসব কথা বলেছেন সে অবস্থানেই থাকতে চান। তিনি কয়েকমাস ধরে অর্থনীতি নিয়ে যেসব নীতির কথা বলেছেন সেগুলোরই পুনরাবৃত্তি করেছেন। ট্রাম্প ও হ্যারিসের একই বক্তব্য বারবার বলা, বিজ্ঞাপন ও দলীয় স্বেচ্ছাসেবীদের তৎপরতা, সুইং ভোটারদের জন্য কিছুটা ক্লান্তিকর হয়ে উঠেছে।
ভোটারদের মন জয় করার জন্য রাজনৈতিক কর্মীরা ভোটারদের ঘরে ঘরে গেছেন। এসব কিছু অবশ্য এটাই প্রমাণ করে যে সেখানে কতটা হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হচ্ছে।
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রচারের শেষ সময়ে দোদুল্যমান এই রাজ্যগুলো চষে বেড়িয়েছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং কমলা হ্যারিস। নির্বাচন নিয়ে করা জরিপগুলো দুই প্রার্থীর মধ্যে তুমুল লড়াইয়ের আভাস দিচ্ছে। শেষ দিকের প্রচারেও ডোনাল্ড ট্রাম্প তার প্রচারে অভিবাসন বিরোধী বার্তাকেই সামনে রেখেছেন। অন্যদিকে কমলা হ্যারিসের প্রচারণা দল তার জয়ের বিষয়ে সতর্ক আশাবাদ ব্যক্ত করেছে। তারা এখন দোদুল্যমান রাজ্য বলে পরিচিতি অঙ্গরাজ্যগুলোর ভোটারদের নিজেদের পক্ষে টানার চেষ্টা করেছেন।
আমার বার্তা/জেএইচ