এবারের জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলন কপ২৯-এর আয়োজক দেশ আজারবাইজান জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের শীর্ষ কর্মকর্তাদের জন্য “লাল গালিচা” সংবর্ধনা দিয়েছে বলে সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান প্রকাশ করেছে।
কমপক্ষে ১৩২ জন তেল ও গ্যাস কোম্পানির শীর্ষ নির্বাহী ও কর্মচারীকে কপ২৯ সম্মেলনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে এবং রাষ্ট্রপতির অতিথি হিসেবে তাদের জন্য বিশেষ পরিচয়পত্রও বরাদ্দ ছিল।
এই বিশেষ পরিচয়পত্রকে জাতিসংঘের জলবায়ু সম্মেলনে “লাল গালিচা” সংবর্ধনা দেওয়ার সমতুল্য বলে বিশেষজ্ঞরা উল্লেখ করেছেন। এই পরিচয়পত্রধারীদের মধ্যে রয়েছেন সৌদি তেল কোম্পানি আরামকোর প্রধান এবং বিপি-র সিইও।
জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ
বিশ্বের বিভিন্ন শীর্ষ জলবায়ু বিশেষজ্ঞরা জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্প ও পেট্রোস্টেটগুলোর প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) রাতে কপ২৯ সম্মেলনে অর্ধেক পর্যায়ে পৌঁছেছে। এই সময়ে, অংশগ্রহণকারী দেশগুলো উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থায়নের উপায় খুঁজে বের করার চেষ্টা করছে, যা তাদের গ্রিনহাউস গ্যাস নির্গমন কমাতে এবং জলবায়ু সংকটের প্রভাব মোকাবেলায় সাহায্য করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট আল গোর কপ সম্মেলনের সংস্কার চেয়ে বলেন, ‘যেসব দেশের জলবায়ু পরিকল্পনা শক্তিশালী নয়, তাদের এই সম্মেলন আয়োজন করতে দেওয়া উচিত নয়। এছাড়াও জীবাশ্ম জ্বালানি কোম্পানির প্রভাব বন্ধ করতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘কোম্পানিগুলোর কিছু মানদণ্ড থাকা উচিত: তারা কি তাদের তেল ও গ্যাস উৎপাদন কমানোর পরিকল্পনা করছে? তারা কি তাদের মুনাফার একটি যথাযথ অংশ পুনর্নবীকরণযোগ্য জ্বালানি প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে? তাদের পরিবেশবিরোধী প্রচারণা কি বন্ধ হয়েছে? উক্ত মানদণ্ডগুলি পূরণে ব্যর্থ দেশগুলোকে সম্মেলন থেকে বাদ দেয়া উচিত।’
কপ প্রক্রিয়ার সমালোচনা হলেও অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, এটি ছোট উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি ফোরাম, যেখানে তারা বড় অর্থনীতির দেশগুলোর বিরুদ্ধে কথা বলার সুযোগ পায়।
প্যারিস চুক্তির অন্যতম রচয়িতা লরেন্স টুবিয়ানা বলেন, ‘বহুপাক্ষিকতা জলবায়ু প্রক্রিয়ার ভিত্তি। প্যারিস চুক্তি সম্ভব হয়েছিল কারণ প্রতিটি দেশের কণ্ঠস্বর ছিল।’
আজারবাইজান ও জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্পের ভূমিকা
আজারবাইজান গত বছর সংযুক্ত আরব আমিরাতে অনুষ্ঠিত কপ২৮ সম্মেলনে এই বছরের কপ২৯ আয়োজনের জন্য প্রস্তাব করেছিল। আজারবাইজানের অর্থনীতি তেল ও গ্যাসের ওপর নির্ভরশীল, যা তাদের রপ্তানির ৯০%।
সম্মেলনের প্রথম সপ্তাহে, আজারবাইজান একটি সৎ মধ্যস্থতাকারী হিসেবে কাজ করেছে বলে আলোচকরা উল্লেখ করেছেন। তবে জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে দূরে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি নিয়ে বিতর্ক চলছেই।
সৌদি আরামকো, বিপি এবং অন্যান্য বড় কোম্পানিগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তারা এই সম্মেলনে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকায় জলবায়ু কর্মীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা দাবি করেন, জীবাশ্ম জ্বালানি শিল্প দীর্ঘদিন ধরে জলবায়ু আলোচনাকে প্রভাবিত করে তাদের স্বার্থ রক্ষা করে চলেছে। এটি বন্ধ করার সময় এসেছে এখন।
আমার বার্তা/জেএইচ