কয়েকদিন ধরে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষোভের আগুনে জ্বলছে ইউক্রেন। তবে এবার পরিস্থিতির মোড় নেওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে—হয় এটি হবে একটি কঠোর সমঝোতা, নয়তো আরও শাস্তির সূচনা।
খুব শিগগির সৌদি আরবের জেদ্দায় যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের প্রতিনিধিদের মধ্যে এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। ওয়াশিংটন বলছে, এই আলোচনার লক্ষ্য হলো ‘শান্তিচুক্তির একটি কাঠামো তৈরি করা এবং প্রাথমিক যুদ্ধবিরতি নিশ্চিত করা’। তবে ইউক্রেনীয় পক্ষের আশার পাশাপাশি শঙ্কাও রয়েছে—এটি কি কেবল সময়ক্ষেপণের কৌশল, নাকি ট্রাম্প রাশিয়ার পক্ষে সুবিধা আদায়ের চেষ্টা করবেন?
ইউক্রেনের কৌশল ও শঙ্কা
রাশিয়া ইউক্রেনের ওপর সামরিক চাপ বাড়িয়ে চলেছে। কিয়েভসহ অন্যান্য শহরে ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালানো হচ্ছে। এমনকি রুশ ও উত্তর কোরীয় সেনারা ইউক্রেনীয় বাহিনীকে কুরস্ক থেকে বিতাড়িত করতে নতুন অভিযান শুরু করেছে।
এ অবস্থায় ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যের সহায়তায় ইউক্রেন তার কৌশল নির্ধারণ করছে। তারা চায়—কমপক্ষে মার্কিন-ইউক্রেনীয় যৌথ খনিজ উন্নয়নের জন্য একটি কাঠামোগত চুক্তি স্বাক্ষরিত হোক। পাশাপাশি, গত ৭ মার্চ জেলেনস্কি একটি আকাশ ও নৌবাহিনীর যুদ্ধবিরতির প্রস্তাব দিয়েছেন, যাতে রাশিয়ার ওপর কূটনৈতিক চাপ বাড়ানো যায়।
যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেন কোনো কাঠামোতে সম্মত হয়, তবে রাশিয়ার ওপর চাপ পড়বে। তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো কী শর্ত নিয়ে বৈঠকে যাচ্ছে, তা স্পষ্ট নয়। ইউক্রেন কোনোভাবেই এমন চুক্তি মানতে রাজি নয়, যা তাদের ফের সশস্ত্র হওয়ার ক্ষমতা কমিয়ে দেয়, দখল হওয়া ভূখণ্ডকে রাশিয়ার বলে স্বীকৃতি দেয়, কিংবা ইউক্রেনের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করে—যেমন মার্শাল ল’র (সামরিক আইন) কারণে বর্তমানে অসম্ভব কোনো নির্বাচন আয়োজনের বাধ্যবাধকতা তৈরি করে।
রাশিয়া একটি অস্ত্রবিরতিতে সম্মত হতে পারে, তবে নির্দিষ্ট শর্তে। সূত্র জানাচ্ছে, মস্কো চাইবে ইউক্রেন নিজেদের নিরপেক্ষ ঘোষণা করুক এবং কোনো বিদেশি শান্তিরক্ষী বাহিনীকে অনুমতি না দেওয়া হোক। কিন্তু এ শর্ত ইউক্রেনের জন্য আপাতত গ্রহণযোগ্য নয়।
ট্রাম্প প্রশাসনের সাবেক কূটনীতিক কার্ট ভলকার সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়া আলোচনার প্রতিটি ধাপে ইউক্রেনের কাছ থেকে কিছু কিছু ছাড় আদায় করবে। এক সাবেক ইউক্রেনীয় কূটনীতিক বলেন, যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া যেন একে অপরের কৌশল অনুসরণ করছে—‘টুকরো টুকরো করে’ ইউক্রেনের কাছ থেকে সুবিধা আদায় করছে, এরপর ধাপে ধাপে আরও বেশি ছাড়ের দিকে এগোচ্ছে।
মার্কিন চাপ ও ইউক্রেনের ভবিষ্যৎ
যদি এই আলোচনা ব্যর্থ হয়, তাহলে ইউক্রেন আরও চাপে পড়তে পারে। এক শীর্ষ ইউক্রেনীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা বলেছেন, এখন পর্যন্ত মার্কিন প্রশাসনের সম্পূর্ণভাবে ইউক্রেনের সঙ্গ ছাড়ার কোনো ইঙ্গিত নেই। তবে যুক্তরাষ্ট্রের বর্তমান অবস্থান ইউক্রেনকে এক ‘ধূসর এলাকায়’ ঠেলে দিতে পারে, যেখানে টিকে থাকতে আরও কঠোর সামরিক কৌশল নিতে হবে।
আগামী দিনের আলোচনা ইউক্রেনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যদি এটি ব্যর্থ হয়, তাহলে হয়তো ইউক্রেনের সামনে আর তেমন সুযোগ থাকবে না। এক শীর্ষ ইউক্রেনীয় কর্মকর্তা বলেন, যুক্তরাষ্ট্র তখন নির্দেশমূলক অবস্থানে চলে যাবে এবং রাশিয়ার সঙ্গে ঠিক করা সমাধান আমাদের ওপর চাপিয়ে দেবে।