
ভারতে কংগ্রেসের সভায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত তথা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমার সোনার বাংলা’ গান গাওয়া নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে বিজেপি।
একইসঙ্গে কংগ্রেসকে ‘বাংলাদেশপ্রীতি’ নিয়েও অভিযুক্ত করেছে দলটি। বুধবার (২৯ অক্টোবর) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, আসামের কংগ্রেসের একটি সভায় ‘আমার সোনার বাংলা’ গান গাওয়া নিয়ে রাজ্যে তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক বিতর্ক। জেলা পর্যায়ের এক কংগ্রেস নেতা সভায় বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছে বিজেপি। দলটি কংগ্রেসকে ‘বাংলাদেশপ্রীতিতে আসক্ত’ বলেও কটাক্ষ করেছে।
বিশ্লেষকদের মতে, বিজেপির এই আক্রমণে পুরো বিষয়টির ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটকে উপেক্ষা করা হয়েছে। কারণ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে ‘আমার সোনার বাংলা’ গানটি রচনা করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর। ব্রিটিশদের সেই সিদ্ধান্তের বিরোধিতায় তীব্র আন্দোলনের পর ১৯১১ সালে সেই বিভাজন বাতিল হয়। আর স্বাধীনতার পর ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ এই গানটিকেই জাতীয় সংগীত হিসেবে গ্রহণ করে।
গানটিতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য আর মাটির সঙ্গে মানুষের আবেগময় সম্পর্ক বর্ণনা করেছেন। সীমান্তের দুই প্রান্তের বাঙালিরাই আজও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে গানটি গেয়ে থাকেন। এমনকি ভারতের বিভিন্ন শহরের কিছু বাঙালি রেস্তোরাঁয়ও ‘আমার সোনার বাংলা’ নাম ব্যবহার করা হয়।
এনডিটিভি বলছে, আসামের শ্রীভূমি জেলা (আগের নাম করিমগঞ্জ) বাংলাদেশের সীমান্ত ঘেঁষা বারাক উপত্যকার অংশ। সেখানে বাঙালি ভাষাভাষীদের সংখ্যা বেশি। ফলে সেখানে বাংলা গান গাওয়া অস্বাভাবিক নয় বলে স্থানীয়রা মনে করছেন।
লোকসভার কংগ্রেস সদস্য ও দলের উপনেতা গৌরব গগৈ বলেন, বিজেপি গানটির ঐতিহাসিক ও সাংস্কৃতিক তাৎপর্যই বোঝে না। তিনি বলেন, “আমাদের দলের ৮০ বছর বয়সী সিনিয়র সদস্য বিধু ভূষণ দাস রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সুন্দর বাংলা গান ‘আমার সোনার বাংলা’ গেয়েছিলেন। অথচ বিজেপি এটিকে মুসলিম সম্প্রদায়ের গান বা বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত বলে সমালোচনা করছে।”
গগৈ আরও বলেন, “নোবেলজয়ী রবীন্দ্রনাথ ভারতের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি। তার লেখা একটি বাংলা গান গাওয়া নিয়ে আপত্তি কোথায়? এই গান আমাদের যৌথ ঐতিহ্য ও সাহিত্যিক উত্তরাধিকারের প্রতীক।”
তবে বিজেপি বিষয়টি রাজনৈতিকভাবে কাজে লাগিয়েছে। আসাম রাজ্য শাখা এক বিবৃতিতে বলেছে, “ইঙ্গিতগুলো এখন স্পষ্ট। কিছুদিন আগেই বাংলাদেশ একটি মানচিত্র প্রকাশ করে পুরো উত্তর-পূর্বাঞ্চল নিজের বলে দাবি করেছে, আর এখন সেই বাংলাদেশ-আসক্ত কংগ্রেস আসামের মঞ্চে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত গাইছে। এর পরও কেউ যদি বুঝতে না পারে কী চলছে, তবে তারা হয় অন্ধ, নয়তো (তেমন কিছুর সঙ্গে) জড়িত।”
আসামের মন্ত্রী অশোক সিংহল এক্স (সাবেক টুইটার)-এ লিখেছেন, “বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত ‘আমার সোনার বাংলা’ গাওয়া হলো কংগ্রেস সভায়। এটা সেই দেশের গান, যারা ভারতের উত্তর-পূর্ব আলাদা করতে চায়!”

