সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার করতে টানা আন্দোলন করে যাচ্ছে সাধারণ শিক্ষার্থীরা। আন্দোলনের শুরুর দিকে বিষয়টি নিয়ে তেমন একটা গুরুত্ব না দিলেও দেশব্যাপী সহিসংতায় নড়েচড়ে বসেছে সরকার। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি এবং প্রয়োজনে সংসদে আইন পাসের কথা বলছেন সরকারের মন্ত্রীরা।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বিকেলে জনপ্রশাসনমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন সাংবাদিকদের জানান, কোটা সংস্কারে আদালতের রায় অনুযায়ী কাজ করবে নির্বাহী বিভাগ। সর্বোচ্চ আদালতের রায় বা সিদ্ধান্তই আইন হিসেবে গণ্য হবে। প্রয়োজন হলে সংসদে আইন পাসও করা হতে পারে।
এর আগে, একইদিনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, কোটা সংস্কারে আমরা নীতিগতভাবে ঐকমত্য পোষণ করি। যেকোনো সময় এ নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছি।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা আমাকে বলেছেন যে, আগামী ৭ আগস্ট মামলার যে শুনানি হওয়ার কথা ছিল, তা যেন এগিয়ে আনার ব্যবস্থা নেওয়া হয়। আমি অ্যাটর্নি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছি, যেন আগামী রোববার (২১ জুলাই) আদালতে মামলাটির শুনানির তারিখ এগিয়ে আনেন।
আনিসুল হক আরও বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য আমাকে এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে বসব। তারা যখনই আলোচনায় বসতে চায়, সেটা যদি আজকে হয়, আজই আমরা বসতে রাজি আছি।
উল্লেখ্য, ২০১৮ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশে সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী কোটা, অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য ১০ শতাংশ কোটা, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল।
ওই বছর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোটা সংস্কারের দাবিতে বড় বিক্ষোভ হয়। কোটাব্যবস্থার সংস্কার করে ৫৬ শতাংশ কোটা থেকে ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার দাবি জানিয়েছিলেন আন্দোলনকারীরা। পরে সে বছরের ৪ অক্টোবর কোটাপদ্ধতি বাতিলবিষয়ক পরিপত্র জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
এর মাধ্যমে ৪৬ বছর ধরে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে যে কোটাব্যবস্থা ছিল, তা বাতিল হয়ে যায়। পরে ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করেন। সেই রিটের রায়ে চলতি বছরের ৫ জুন পরিপত্রের ওই অংশ অবৈধ ঘোষণা করা হয়। এরপর চাকরিপ্রত্যাশী সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাঠে নামেন।
টাকা কয়েকদিন আন্দোলনের পর গত ৯ জুলাই কোটা পুনর্বহাল নিয়ে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল বিভাগে আবেদন করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুই শিক্ষার্থী। পরেরদিন হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেন আপিল বিভাগ।
এ আদেশের ফলে মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র বহাল থাকছে। তবে শিক্ষার্থীরা আপিল বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে সংসদে আইন পাস না করা পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন। রাষ্ট্রপতির কাছে স্মারকলিপিও দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
আমার বার্তা/এমই