রাজধানীসহ সারা দেশে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ছাত্রলীগের-যুবলীগের সংঘর্ষে ১০ শিক্ষার্থীসহ অন্তত ১২ জন নিহত হয়েছেন।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) ঢাকার উত্তরা-আজমপুর এলাকাতেই ঝরেছে ৬ প্রাণ। এ ছাড়া রাজধানীর ধানমন্ডি, বাড্ডা, সাভার ও মাদারীপুরে একজন করে এবং নরসিংদীতে ২ জন মারা গেছেন।
আমাদের প্রতিনিধিদের পাঠানো তথ্য ও দেশের বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, আজ সকাল ১১টার দিকে রাজধানীর উত্তরা-আজমপুর এলাকায় আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে পুলিশ ও র্যাবের সংঘর্ষ হয়েছে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ জন নিহত হয়েছেন।
কুয়েত মৈত্রী হাসপাতালের সুপারিনটেনডেন্ট মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, আহত হয়ে ৫০ জনের বেশি হাসপাতালে এসেছেন। তাদের মধ্যে চারজনকে মৃত ঘোষণা করা হয়েছে। আহতদের মধ্যে পুলিশ সদস্যও আছেন।
রাজধানীর বাড্ডা-রামপুরা এলাকায় পুলিশ ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের মধ্যে সংঘাতে একজন নিহত ও শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। নিহতের নাম দুলাল মাতবর। তিনি পেশায় ড্রাইভার। সংঘাতের সময় তিনি একটি হাইএস গাড়ি চালিয়ে ওই এলাকা পার হচ্ছিলেন।
দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে আশঙ্কাজনক অবস্থায় তাকে বনশ্রীর ফরাজি হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। হাসপাতালের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার রুবেল হোসেন গণমাধ্যমকে নিহতের পরিচয় ও অন্যান্য তথ্য জানিয়েছেন।
কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের এক শিক্ষার্থী ফারহান নিহত হয়েছেন। গণমাধ্যমকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন সিটি হাসপাতালের সহকারী ব্যবস্থাপক ওসমান গণি।
ঢাকা-আরিচা ও নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কে বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় গুলিতে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নিহত ইয়ামিন ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স টেকনোলজির ছাত্র বলে জানা গেছে। বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেন এনাম মেডিকেলের ডিউটি ম্যানেজার ইউসুফ আলী।
তিনি বলেন, এখন পর্যন্ত একজনকে মৃত অবস্থায় হাসপাতালে আনা হয়েছে। তার নাম ইয়ামিন। তিনি ঢাকার মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স টেকনোলজির (এমআইএসটি) শিক্ষার্থী বলে জানা গেছে। এর বেশি তথ্য নেই। নিহত শিক্ষার্থীর শরীরে গুলির চিহ্ন রয়েছে। আহত আরও পাঁচ জনকে তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
>> মাদারীপুর : এদিকে মাদারীপুর প্রতিনিধি ও টেকেরহাট সংবাদদাতা জানান, মাদারীপুরে কোটা সংস্কার আন্দোলকারীদের সঙ্গে পুলিশ-ছাত্রলীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষে শকুনী লেকের পানিতে পড়ে এক শিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছে অন্তত ২৫ জন। দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করে ফায়ার সার্ভিসের ডুবুরি টিম।
নিহত শিক্ষার্থী মাদারীপুর পৌর শহরের আমিরাবাদ এলাকার স্বপন দের ছেলে দীপ্ত দে। তিনি মাদারীপুর সরকারী কলেজের রসায়ন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এছাড়া এ ঘটনায় বিচ্ছিন্নভাবে ৮ জন শিক্ষার্থীকে আটক করেছে সদর থানা পুলিশ।
>> নরসিংদী : নরসিংদী সদর উপজেলায় কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষে তাহমিদ তামিম (১৫) নামে এক স্কুলশিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। নরসিংদী জেলা হাসপাতালের আরএমও মিজানুর রহমান গণমাধ্যমকে জানান, তার গায়ে রাবার বুলেটের চিহ্ন আছে। এদিন বিকাল ৫টার দিকে সদর উপজেলার ভেলানগর এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। নিহত তাহমিদ তামিমের বাড়ি সদর উপজেলার চিনিশপুরে। সে নরসিংদী এন কে এম হোমস অ্যান্ড স্কুলের নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী।
অন্যদিকে সদর উপজেলায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে ইমন আহমেদ নামে আরও একজন নিহত হয়েছেন। আজ সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় নরসিংদী সদর হাসপাতালে তিনি মারা যান।
বিষয়টি গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন নরসিংদী সদর হাসপাতালের আরএমও মাহমুদুল কবির বাশার। তিনি জানান, নিহত ইমনের গায়ে রাবার বুলেটের চিহ্ন আছে। তার বাড়ি সদর উপজেলার পলাশ থানায়।
আমার বার্তা/এমই