বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ জানিয়েছে, সাড়ে চার মাসে দেশে গ্রামীণ পর্যায়ে ১৭৪টি সাম্প্রদায়িক সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে।
গতবছরের ২১ আগস্ট থেকে ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিভিন্ন দৈনিক পত্রিকায় প্রকাশিত তথ্য বিশ্লেষণ করে আজ বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই তথ্য জানায় ঐক্য পরিষদ।
সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মনীন্দ্র কুমার নাথ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে বলেন, চলমান সহিংসতাকে যেভাবে ব্যাখ্যা করা হোক না কেন, ঐক্য পরিষদ মনে করে গত ৪ আগস্ট থেকে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীকে টার্গেট করে তাদের বাড়িঘর, উপাসনালয়, ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ, হত্যাসহ যাবতীয় অপরাধ চালানো হচ্ছে। সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নারী-পুরুষ, কিশোর-কিশোরী এ ধরনের সহিংসতার শিকার হচ্ছেন।
তারা বলেন, ১৭৪টি ঘটনায় ২৩টি হত্যাকাণ্ড, ৯টি নারী নির্যাতন, ধর্ষণ বা সংঘবদ্ধ ধর্ষণ, ৬৪টি উপাসনালয়ে হামলা ও ভাঙচুর, ১৫টি ধর্ম অবমাননার অভিযোগে গ্রেপ্তার ও নির্যাতন, ৩৮টি বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর, লুটপাট বা অগ্নিসংযোগ এবং ২৫টি জোরপূর্বক বাড়িঘর, জমি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখলের ঘটনা ঘটেছে।
তারা আরও অভিযোগ করেন, অন্তর্বর্তীকালীন সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করে সংখ্যালঘুদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ শুরু করেছে। তারা দাবি করেন, এই ধরনের বৈষম্য মূলত ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলস্বরূপ প্রতিষ্ঠিত সরকারের কাছে অপ্রত্যাশিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত।
এতে বলা হয়, ৪০তম ক্যাডেট সাব-ইন্সপেক্টর (এসআই) পদে নিয়োগপ্রাপ্ত ৮০৪ জন সাব-ইন্সপেক্টরকে ২১ অক্টোবর থেকে ৪ ধাপে চাকরিচ্যুত করা হয়। চাকরিচ্যুত ৩২১ জনের মধ্যে ১০৩ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
এছাড়া, ৫৫ জন নারী কর্মকর্তার মধ্যে ৩৩ জন অব্যাহতি পেয়েছেন এবং তাদের মধ্যে ১৬ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের। তাদের অভিযোগ, এই প্রক্রিয়া বাংলাদেশ আইন ও বিধির বিরুদ্ধে এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন।
তারা আরও বলেন, ৪৩তম বিসিএসে ২২৭ জনকে বাদ দেয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৮২ জন সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের।
সংগঠনটি আরও জানায়, সংখ্যালঘুদের প্রতি এই ধরনের বৈষম্যমূলক আচরণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর মাধ্যমে সংখ্যালঘুদের নিঃস্বকরণ প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তারা মনে করেন। তারা বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শ্লোগান ছিল "কোটা না মেধা, মেধা মেধা", তবে সরকার কোটাকেই বৈষম্যের হাতিয়ার হিসেবে গুরুত্ব দিয়েছে।
সংবিধান সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবনা নিয়ে তাদের বক্তব্য ছিল, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও ২ লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতার মাধ্যমে ধর্মনিরপেক্ষ, বৈষম্যহীন, গণতান্ত্রিক এবং ন্যায়বিচারভিত্তিক রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার প্রত্যয়ে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান একসাথে যুদ্ধ করেছে। তারা সংবিধান সংস্কার কমিটির প্রস্তাবের বিরুদ্ধে মত ব্যক্ত করে বলেন, 'ধর্মনিরপেক্ষতা' বাদ দেয়া ধর্মীয় স্বাধীনতার বিরুদ্ধাচারণ এবং ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের বৈষম্য অস্বীকারের সমতুল্য।
তারা সরকারের কাছে অনতিবিলম্বে বৈষম্যমূলক আচরণ বন্ধের দাবি জানিয়ে বলেন, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতি এমন আচরণ রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে একটি গভীর ষড়যন্ত্রের অংশ।
এছাড়া, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানসমূহে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের প্রতিনিধিত্ব ও অংশীদারিত্ব, ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু নেতৃবৃন্দের বিরুদ্ধে হয়রানীমূলক মিথ্যা মামলা দায়ের, দলিত ও ক্ষুদ্র সম্প্রদায়ভুক্ত জনগোষ্ঠীর জন্যে রাষ্ট্রের বিশেষ উদ্যোগ এবং সংখ্যালঘুদের ৮ দফা দাবির বাস্তবায়নের বিষয়েও আলোচনা করে ঐক্য পরিষদ।
আমার বার্তা/এমই