ই-পেপার বুধবার, ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২ আশ্বিন ১৪৩২

রংপুরের আবু সাঈদ যেন এ যুগের নূরলদীন

মো. খালেদ সাইফুল্লাহ:
১৭ জুলাই ২০২৪, ১৬:৫৪

'নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়' সব্যসাচী লেখক হিসেবে বিশেষ খ্যাতি অর্জনকারী সৈয়দ শামসুল হকের অনবদ্য সৃষ্টি। রংপুরের কৃষক বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেওয়া নূরলদীন ছিলেন স্বাধীনতাকামী একজন কৃষক, ব্রিটিশবিরোধী স্বাধীনতাসংগ্রামের প্রাণপুরুষ। ইংরেজ শাসন উৎখাতে ১৭৬০ থেকে ১৭৮৩ সাল পর্যন্ত অসংখ্যবার সম্মুখযুদ্ধে তিনি অবতীর্ণ হয়েছিলেন। আমাদের এ ভারতীয় উপমহাদেশের বাংলা অঞ্চল তখন পার করছিল হাহাকারময় সময়। নূরলদীনের বাড়ি রংপুরে ছিল, নূরলদীন একদিন ডাক দিয়েছিলেন মুক্তির জন্য সংগ্রাম ও বিপ্লবের। সৈয়দ শামসুল হক ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে নূরুলদীনের সাহস আর ক্ষোভকে তার লেখনীর অসামান্য নৈপুণ্যে মিশিয়ে দিয়েছেন বাঙালির মুক্তিসংগ্রামের সাথে।

নূরলদীনের সেই রংপুরে নতুন নূরলদীন যেন আবু সাঈদ। সাধারণ শিক্ষার্থীদের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় মঙ্গলবার রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের কোটা আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা মিছিল নিয়ে শহরের লালবাগ এলাকা থেকে ক্যাম্পাসের দিকে যায়। শান্তিপূর্ণ মিছিল নিয়ে ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ তাদের বাধা দেয়। ফলে পুলিশের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের সংঘর্ষ বাধে। ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ সাহসিকতার সাথে সহপাঠীদের রক্ষায় সামনে এগিয়ে আসে। আন্দোলনে একজন সমন্বয়ের ভূমিকায় ছিলেন শুরু থেকে। দায়িত্বশীল হিসেবে পিছু না হটে সামনে এগিয়ে আসে। গুলি থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের কে রক্ষায়, পুলিশকে নিভৃত করতে নিজের বুক পেতে দেয় সামনে এগিয়ে।

এক অসীম বিশ্বাস ছিল তার, সে বিশ্বাসের বলেই হয়ত বন্দুকের সামনে নিজেকে মেলে ধরে। সে হয়ত মনে করেছে দেশ প্রেমিক জনগণের বন্ধু পরিচয়ের পুলিশ যৌক্তিক এ আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের কে ঘাতক বুলেট নিয়ে গুলি চালাবে না। কিন্তু তার বিশ্বাস কে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে পুলিশ, দুই হাত মেলে দেওয়া নিরস্ত্র আবু সাঈদের বুকে তাক করে থাকা পুলিশ বন্দুক থেকে বুলেট ছেড়ে দেয়। পরিবারের একমাত্র অবলম্বন, দেশের ভবিষ্যৎ, এ মেধাবী শিক্ষার্থী বুলেট বিদ্ব হন। একটু পাশে গিয়ে আশায় সঞ্চার করে আবার দাঁড়িয়ে যায়। না, আর মনে হয় আমাকে গুলি করবে না! আমি তো অপরাধী নই! নিজের সত্যের উপর বিশ্বাস নিয়ে আবার দাঁড়িয়ে যায়, ভাই-বোনদের রক্ষার জন্য নিজের জীবনকে দিয়ে হলেও তাকে দাঁড়াতেই হবে। আবার বুক পেতে দুটি হাত পাখির ডানার মত মেলে দেয়। কিন্তু না! ঘাতকরা আবার গুলি করে, মনে হচ্ছে কোনো অপরাধীকে সরাসরি ফায়ার করা হচ্ছে। বুলেটের আঘাতে ক্ষতবিক্ষত হয়ে তৃতীয় বারে হেলে পড়ে যায় আবু সাঈদ। এ যেন স্বপ্নের অপমৃত্যু, না অপমৃত্যু নয়! নিরস্ত্র এক মেধাবী সাহসী শিক্ষার্থীর জীবন কেড়ে নেওয়া।

পুলিশের গুলিতে নিহত হওয়ার একদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন আবু সাঈদ। যেখানে তিনি গণ অভ্যুত্থানে শহিদ রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক শামসুজ্জোহাকে স্মরণ করেছিলেন। তিনি লিখেন, ‘স্যার! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার স্যার! আপনার সমসাময়িক সময়ে যারা ছিল সবাই তো মরে গেছে, কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি, আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত।’ এমন একজন শিক্ষক পেলে হয়ত আমরা আবু সাঈদ কে হারাতাম না!

শিক্ষকদের ইঙ্গিত করে আবু সাঈদ আরও লিখেছিলেন ‘প্রজন্মে যারা আছেন, আপনারাও প্রকৃতির নিয়মে একসময় মারা যাবেন। কিন্তু যতদিন বেঁচে আছেন মেরুদণ্ড নিয়ে বাচুঁন। ন্যায্য দাবিকে সমর্থন জানান, রাস্তায় নামুন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাঁড়ান। প্রকৃত সম্মান এবং শ্রদ্ধা পাবেন। মৃত্যুর সাথে সাথেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। আজন্ম বেঁচে থাকবেন শামসুজ্জোহা হয়ে। অন্তত একজন 'শামসুজ্জোহা' হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের।’ সত্যিই শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাঁড়িয়েছেন নিজেই। আবু সাঈদ মেরুদন্ড নিয়ে সাহসিকতার সাথে নিজেকেও উৎসর্গ করে অমর হয়ে রইবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মনে প্রজন্ম থেকে প্রজন্ম। তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি, নূরলদীনের মত সাহসের বাতিঘর হিসেবে বেঁচে থাকুক এ বাংলায়। শ্রদ্ধার সাথে তার আপসহীন মানসের প্রতি সশ্রদ্ধ সালাম নিবেদন করছি।

আবু সাঈদ সাহসিকতার সাথে মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেছে। সম্মানের সাথে চিরকাল বেঁচে থাকতে বুলেট কে বুকে নিয়েছে। 'নূরলদীনের কথা মনে পড়ে যায়' কবিতাটি পাঠ্য বইয়ে পড়েছে আবু সাঈদরা, তাই নিজেই হয়ে উঠেছে এ যুগের নূরলদীন। দুই চোখ এক করলেই চোখের সামনে ভেসে উঠছে আবু সাঈদের মৃত্যুর দৃশ্য! অনুপ্রেরণার বাতিঘর হিসেবে বেঁচে থাকুক আমাদের মাঝে চিরকাল।

লেখক : শিক্ষার্থী, আন্তর্জাতিক ইসলামি বিশ্ববিদ্যালয় চট্টগ্রাম।

ডেল্টা টাইমস/মো. খালেদ সাইফুল্লাহ/সিআর/এমই

বিদায়ী বছরের ইতিবৃত্ত ও নতুন বছরের সূচনা

ঘড়ির কাঁটা ঘোরার সঙ্গে সঙ্গে পেরোতে থাকে সময়। সেকেন্ড-মিনিট-ঘণ্টার হিসাব রূপান্তরিত হয় দিন-মাস-বছরে। সূর্যোদয় এবং

অসৎ, অতিরিক্ত লোভী এবং পরশ্রীকাতর, সমাজের জন্য অদৃশ্য ক্ষতির উৎস

মানবজীবনে নৈতিকতার গুরুত্ব অপরিসীম। কিন্তু অসৎ মনোভাব, অতিরিক্ত লোভ, এবং পরশ্রীকাতরতা ব্যক্তিগত এবং সামাজিক জীবনে

ড. গোলাম আবু জাকারিয়া : চিকিৎসা পদার্থবিদ্যার বিশ্ববাঙালি

বাংলাদেশে ক্যান্সারে আক্রান্ত মানুষের সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়ে চলেছে। ক্যান্সার শুধু একজন ব্যক্তির নয়, তার

প্রশাসনিক সংকট ও ভবিষ্যতের করণীয়: একটি সুষম বিশ্লেষণ

বাংলাদেশের প্রশাসনের প্রাণকেন্দ্র সচিবালয়ে ভয়াবহ আগুনের ঘটনা, যা দেশের রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক ব্যর্থতার প্রতিফলন হিসেবে
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজধানীতে নির্মাণাধীন ভবন থেকে পড়ে রাজমিস্ত্রির মৃত্যু

রাজধানীতে গলায় ফাঁস দিয়ে সোনালী ব্যাংকের এজিএমের আত্মহত্যা

সুন্দরবন কুরিয়ার সার্ভিসের গাড়িচাপায় ভ্যানের ২ যাত্রী নিহত

ইমাম-মুয়াজ্জিনদের জন্য বেতনকাঠামো তৈরি করেছি: ধর্ম উপদেষ্টা

দুই মন্ত্রণালয়ের সচিবকে ওএসডি

নতুন বছরে প্রধান উপদেষ্টার শুভেচ্ছা

আতশবাজি ও পটকা ফাটানো থেকে বিরত থাকার আহ্বান পরিবেশ উপদেষ্টার

নাশকতা নয় বৈদ্যুতিক লুজ কানেকশন থেকে সচিবালয়ে আগুন

সমস্যা-অনিয়ম উত্তরণে কাজ করছি, প্রয়োজন সবার সহযোগিতা

আপনাদের আম্মু ফিরে আসবে না, রিয়েলিটি মাইনে নেন: হাসনাত

বাহাত্তরের সংবিধান বাতিলের প্রয়োজন নেই: নুরুল হক নুর

বিএনপি নেতা আবু নাছের আর নেই

রিজার্ভ চুরির অর্থ দেশে ফেরাতে ফিলিপাইনের সহযোগিতা কামনা

নতুন বছরের প্রথম দিন বিশ্বের জনসংখ্যা পৌঁছাবে ৮০৯ কোটিতে

চিন্ময়সহ ইসকনের ২০২ অ্যাকাউন্টে জমা ২৩৬ কোটি টাকা

প্রস্তুতি সম্পন্ন, বুধবার বাণিজ্য মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধান উপদেষ্টা

মার্চ ফর ইউনিটিতে গণহত্যার বিচার চাইলেন সারজিস আলম

১৫ জানুয়ারির মধ্যে অভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র পাঠ করতে হবে

ঢামেকের টয়লেটে পড়েছিল মস্তকবিহীন নবজাতকের মরদেহ

পাঁচ মাসেও বিচার না পাওয়ায় আক্ষেপ আলভির বাবার