মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বাংলাদেশ আজ এক গভীর রাজনৈতিক সংকটের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। আপনার কাছে লেখা এই খোলা চিঠিতে আমরা বর্তমান সংকট, এর কারণ এবং এর থেকে উত্তরণের পথ নিয়ে আলোচনা করব।
প্রধানমন্ত্রী, আপনার সরকারের বিবৃতিতে প্রায়শই দেখা যায়, বিএনপি ও জামাতকে বিভিন্ন সমস্যার জন্য দায়ী করা হচ্ছে। এ ধরনের রাজনৈতিক কৌশল বহুদিন ধরেই চলে আসছে। বিরোধী দলকে দোষারোপ করার প্রবণতা নতুন নয়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে আসল সমস্যাগুলো থেকে কতদিন চোখ ফিরিয়ে রাখা সম্ভব?
সম্প্রতি ছাত্র সমাজ সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়িয়েছে। তারা নিজেদের দাবি এবং অভিযোগ নিয়ে সোচ্চার। শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, শিক্ষা ব্যবস্থা এবং ভবিষ্যতের বিষয়গুলোতে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব দৃশ্যমান। কতজন শিক্ষার্থীকে হারালে সরকার তাদের দাবির প্রতি সঠিক গুরুত্ব দেবে?
বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। দেশের সার্বভৌমত্ব ও স্বাধীনতা রক্ষা করা আপনার সরকারের অন্যতম প্রধান দায়িত্ব। কিন্তু অনেকের মধ্যে সন্দেহ রয়েছে যে, বাংলাদেশ কি সত্যিই স্বাধীনভাবে চলতে পারছে, নাকি কোনো বৃহত্তর শক্তির প্রভাবাধীন হয়ে পড়েছে।
সরকারি কার্যক্রমে স্বচ্ছতার অভাব জনগণের আস্থার ঘাটতি তৈরি করেছে। প্রকৃত তথ্য গোপন করে শুধুমাত্র বিরোধী দলকে দোষারোপ করা একটি অকার্যকর কৌশল। এতে সমস্যার সমাধান হয় না, বরং আরও জটিলতা সৃষ্টি হয়। সরকারের বিভিন্ন বিভাগ ও সংস্থার দায়িত্বহীনতার কারণে সমস্যাগুলো আরও প্রকট হয়ে উঠছে। ছাত্র সমাজের দাবি-দাওয়া, তাদের নিরাপত্তা এবং শিক্ষার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করা জরুরি। কিন্তু এই ক্ষেত্রে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপের অভাব স্পষ্ট। জনগণের প্রকৃত সমস্যা সমাধানের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক সদিচ্ছা এবং কার্যকর পদক্ষেপ।
প্রধানমন্ত্রী, সরকারি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা এবং দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করতে হবে। প্রকৃত তথ্য জনগণের সামনে তুলে ধরতে হবে এবং সমস্যা সমাধানের জন্য কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনার জন্য স্বচ্ছতা অপরিহার্য। ছাত্র সমাজের দাবির প্রতি গুরুত্ব দিয়ে তাদের নিরাপত্তা এবং শিক্ষার মান উন্নয়নে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। শিক্ষার ক্ষেত্রের সমস্যাগুলো সমাধান করা দেশের ভবিষ্যতের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষার্থীদের প্রতি উদাসীনতা দেশের অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে পারে। দেশের সার্বভৌমত্ব বজায় রেখে আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ভারসাম্য রক্ষা করতে হবে। অন্য কোনো দেশের প্রভাবমুক্ত থেকে নিজেদের স্বার্থে কাজ করতে হবে। এর মাধ্যমে দেশকে বহিঃশক্তির প্রভাব থেকে মুক্ত রাখা সম্ভব।
একটি সংসার বা একটি দেশ যত গরিবই হোক না কেন, সে যখন সাজানো-গোছানো অবস্থায় থাকে বা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠে, তখন মনের মধ্যে একটি পবিত্র অনুভূতি কাজ করে। উন্নতির ধাপগুলো দেখে গর্ব হয়। কিন্তু হঠাৎ অন্ধকার ঘনিয়ে এলে বা বিপদে পড়ে সেটা ভেঙে-চুরে তছনছ হয়ে গেলে হতাশা কাজ করে, নতুন উদ্দীপনা বা অনুভূতি দেহে ও মনে আসে না।
ভাবুন বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা। এবারের কোটা সংক্রান্ত ঘটনাকে কেন্দ্র করে যে ক্ষতি হয়েছে, কীভাবে এত বড় ক্ষতি কাটিয়ে উঠবে জাতি? কীভাবে নতুন বিশ্বাসে গড়ে উঠবে দেশ? কীভাবে পরস্পর পরস্পরকে বিশ্বাস করবে এবং প্রিয়জন হারাবার বেদনা কখন বিলীন হবে? এসব প্রশ্ন আজ প্রতিটি সচেতন নাগরিকের মনে জেগে উঠছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে জনগণের মধ্যে হতাশা এবং ক্ষোভ বাড়ছে। সমস্যার সমাধান করতে হলে স্বচ্ছতা, দায়বদ্ধতা এবং কার্যকর পদক্ষেপের প্রয়োজন। ছাত্র সমাজের নিরাপত্তা এবং শিক্ষার মান উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে দেশের স্বার্থ অগ্রাধিকার দিতে হবে। এর মাধ্যমে দেশের জনগণকে আশ্বস্ত করা সম্ভব হবে এবং একটি সুস্থ, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলা যাবে।
বর্তমান সংকট মোকাবেলায় সবাইকে একযোগে কাজ করতে হবে। দেশকে এগিয়ে নিতে হলে প্রয়োজন সকলের সচেতনতা, আন্তরিকতা এবং সমন্বিত প্রচেষ্টা। কেবলমাত্র সঠিক পথে এগিয়ে গিয়ে আমরা একটি উন্নত, শান্তিপূর্ণ এবং স্বনির্ভর বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারব।
লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।
আমার বার্তা/জেএইচ