শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দলটির সহ-দপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব এ আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, সরকারপ্রধান এবং সরকারের মন্ত্রী-নেতারা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কতিপয় আওয়ামী ভাবাপন্ন সদস্যরা প্রতিনিয়ত মিথ্যাচারে আশ্রয় নিয়ে বলছে, তথাকথিত ‘তৃতীয় শক্তি’ না কি গুলি করে হত্যাযজ্ঞ চালিয়েছে। অথচ সারা বিশ্বের মানুষ দেখেছে ছাত্রসহ সাধারণ জনতার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ছিল না। তা ছিল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং সরকারি দলের অঙ্গসংগঠন ছাত্রলীগ, যুবলীগের হাতে। তারপরও সরকার শাক দিয়ে মাছ ঢাকার জন্য এ মিথ্যচারের কোরাস গেয়েই চলেছে। ‘তৃতীয় শক্তি’ না খুঁজে নিজেদের অপশক্তিকে চিহ্নিত করুন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে সরকারের অব্যাহত বাধা, গুলি, দমন, নিপীড়ন, গ্রেপ্তার, নির্যাতনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, দেশ-বিদেশের কোনো পরামর্শ কর্ণপাত না করে ফ্যাসিস্ট সরকার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে মামলা, হামলা, দমনপীড়ন চালিয়ে যাচ্ছে। গতকাল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শান্তিপূর্ণ ‘মার্চ ফর জাস্টিস’ কর্মসূচিতে পুলিশ ঢাকা, সিলেট, খুলনা, বরিশাল, রাজশাহী, দিনাজপুর, গাজীপুর, যশোর, ঠাকুরগাঁও, মাগুরা, নরসিংদীসহ বিভিন্ন জায়গায় বর্বরোচিত কায়দায় সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার সেল নিক্ষেপ, লাঠিচার্জ এবং গ্রেপ্তার চালিয়েছে।
সারা দেশে প্রায় শতাধিক নিরীহ ছাত্রছাত্রীদের গ্রেপ্তার করেছে, ছাত্রীদের করেছে লাঞ্ছিত। পুলিশের নির্মম আঘাত থেকে রক্ষা পান নাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় লোক প্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিন ভূঁইয়া। বরিশালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নির্মম নির্যাতনের শিকার হয় যুগান্তরের সাংবাদিক শামীম আহমেদ এবং যমুনা টিভির ক্যামেরাম্যান হৃদয়সহ অসংখ্য ছাত্রছাত্রী।
মির্জা ফখরুল বলেন, সরকার এবং সরকারি বাহিনী এমনভাবে মিথ্যাচারে নিমজ্জিত হয়ে গেছে যে সারা বিশ্বের মানুষ যেখানে দেখেছে, আবু সাঈদকে পুলিশ সরাসরি সামনে থেকে গুলি করে হত্যা করেছে, সেই মামলায় আসামি করে গ্রেপ্তার করে জেলে পাঠিয়েছে রংপুর পুলিশ লাইনস স্কুল এন্ড কলেজের একাদশ শ্রেণির ছাত্র আলিফ শাহরিয়ার মাহিমকে।
বিবৃতিতে তিনি এদেশের আপামর জনতা ছাত্র-যুবকসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষের প্রতি আন্দোলন অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়ে বলেন, দেশের আনাচকানাচে ঘরে ঘরে আজ খুনি সরকারের পদত্যাগের দাবি উচ্চারিত হচ্ছে। গণতন্ত্র হত্যাকারী, জন অধিকার হরণকারী, জাতীয় স্বার্থ ও সার্বভৌমত্ব বিপন্নকারী সরকার স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসে নজিরবিহীন গণহত্যা ও নিষ্ঠুর দমনপীড়ন চালিয়েছে। এই সরকার আজ রাষ্ট্রঘাতি-প্রাণঘাতী সরকারে পরিণত হয়েছে। গণধিকৃত সরকারকে বিদায় করে জাতির সকল সমস্যা সমাধানের রাজনৈতিক পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। ছাত্র-জনতার বিক্ষোভের মুখে ক্ষমতায় থাকতে পারবে না এই শাসকগোষ্ঠী।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, ছাত্র-জনতার আন্দোলনে সরকার এতই ভীতসন্ত্রস্ত এবং জনবিচ্ছিন্ন হয়েছে, তারা নিজেরাই বলছেন, শ্রীলঙ্কার মতো গণভবন দখল করে নিবে জনগণ এবং সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা। সেই ভয়ে তারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তথা রাষ্ট্রের সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে অপব্যবহার করে নিজেদের রক্ষা করার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আমি বলব- অতি দ্রুত পদত্যাগ করে জনতার ক্ষমতা জনতার কাছে ফিরিয়ে দিন। নির্যাতন যত বৃদ্ধি পাবে গণপ্রতিরোধ ততই দুর্বার হবে।
বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ প্রশাসনের কর্মকর্তা, কর্মচারীদের প্রতি খুনি সরকারের অন্যায় ও বেআইনি হুকুম, আদেশ, নির্দেশ, চাপ উপেক্ষা করে ছাত্র-জনতার বিরুদ্ধে দমনপীড়ন থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে বলেন, সরকার সুপরিকল্পিতভাবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও প্রশাসনকে ছাত্র-জনতার বিপক্ষে দাঁড় করাচ্ছে, যা রাষ্ট্রের জন্য অশনি সংকেত।
মির্জা ফখরুল বর্তমান সময়কে দেশ ও জাতির ক্রান্তিলগ্ন উল্লেখ করে বলেন, দেশপ্রেমিক সকল ছাত্র-জনতা, রাজনৈতিক দল, সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান, সংগঠন ও ব্যক্তিকে ঐক্য বদ্ধ হয়ে ’৭১-এর মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে ধারণ করে এই গণতন্ত্র বিনাশী, লুটেরা, বেআইনিভাবে ক্ষমতা দখলকারী, খুনি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহ্বান জানান এবং একটি নিরপেক্ষ নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার লক্ষে এগিয়ে যাবার আহ্বান জানান।
আমার বার্তা/এমই