* অভিযুক্ত ডা. আবু ফয়সাল ছিলেন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন স্বাচিপ’র ত্রাণ ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক
* রয়েছে একাধিক নারীকে হেনস্তা করার অভিযোগ
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন পরবর্তী ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে বিগত দেড় মাসে কেবল একজন চিকিৎসককে নিয়ম-বহির্ভুতভাবে পদোন্নতি দিয়ে এক নজিরবিহীন উদাহরণ সৃষ্টি করা হয়েছে। দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে উক্ত চিকিৎসক প্রতিদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অত্যন্ত সরব থাকলেও এখন তিনি তার পূর্ব-পরিচয় যে কিছুটা হলেও মুছে ফেলতে পেরেছেন তার প্রমাণ এই পদোন্নতি। অতীব ভাগ্যবান এই চিকিৎসকের নাম ডা. আবু ফয়সাল মো. আরিফুল ইসলাম ওরফে ডা. নবীন।
ডা. আবু ফয়সাল ওরফে ডা. নবীন আওয়ামী লীগের অঙ্গসংগঠন স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদ (স্বাচিপ)-এর ত্রাণ ও ব্যবস্থাপনা সম্পাদক থাকা অবস্থায় ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন নারী চিকিৎসকের শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন, ফলে ২০২১ সালে তাকে তাৎক্ষণিক শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ, গাজীপুর বদলি করা হয়। পরবর্তীতে এ বিষয়ে সেই নারী চিকিৎসক একটি মামলাও দায়ের করেছিলেন। কিন্তু তাতেও দমে যাননি এই চিকিৎসক । ডা. আরিফ তার নতুন কর্মস্থল শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজে ৫ম বর্ষের এক নারী শিক্ষার্থীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেন। এই অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ায় উক্ত মেডিকেল কলেজ কর্তৃপক্ষের সম্মিলিত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ওই চিকিৎসককে তাৎক্ষণিকভাবে গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজে বদলি করা হয়, কিন্তু এখানেই শেষ নয়। গোপালগঞ্জ মেডিকেল কলেজে লাগাতার অনুপস্থিত থাকার শাস্তিস্বরূপ তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জন ডা. সামন্ত লাল সেন তাকে ২০২৪ সালে দিনাজপুরের এম আবদুর রহিম মেডিকেল কলেজে বদলি করেন।
একাধিকবার নারীঘটিত কেলেঙ্কারির সঙ্গে জড়িত ও নারী চিকিৎসকের শ্লীলতাহানীকারী হিসাবে একাধিকবার চিহ্নিত হওয়া সত্ত্বেও এই দুর্বৃত্ত চিকিৎসক এবার বাগিয়ে নিয়েছেন ড. মোহাম্মদ ইউনূস এর নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের অধীনে চিকিৎসকদের জন্য পাওয়া একমাত্র পদোন্নতির খেতাবটিও।
এই ডা. আবু ফয়সাল, যিনি ডা. নবীন নামেই বহুল পরিচিত, জেনারেল সার্জারিতে উচ্চতর ডিগ্রি নিয়ে জেনারেল সার্জারিতে ২০১৯ সালে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পান। পরবর্তীতে ২০২০ সালে তিনি এফসিপিএস করেন প্লাস্টিক ও রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারিতে। সম্প্রতি তিনি সহকারী অধ্যাপক হিসেবে প্লাস্টিক সার্জারির ফিডার পোস্টে নির্ধারিত সময় কাজ না করেই স্বাস্থ্য-উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম ও স্বাস্থ্য সচিব এম এ আকমল হোসেন আজাদ এর আনুকূল্যে সহযোগী অধ্যাপক হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছেন। স্বাচিপ-এর কেন্দ্রীয় কমিটিতে যুগ্ম মহাসচিব পদে ২০২২ সালে প্রার্থিতা চাইলেও তার প্রার্থিতা চিকিৎসক মহলেই গ্রহণযোগ্যতা পায়নি।
আশ্চর্যের কথা এই যে, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের দেড় মাস সময়ে বহু পদোন্নতি বঞ্চিত চিকিৎসক স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ও মন্ত্রণালয়ে দরখাস্ত জমা দিলেও কেবলমাত্র বিবিধ কেলেঙ্কারির সঙ্গে যুক্ত, প্রাক্তন স্বাচিপ সম্পাদক এই ডা. আবু ফয়সাল ওরফে ডা. নবীনই একমাত্র চিকিৎসক যিনি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের আমলে চিকিৎসক হিসেবে পদোন্নতি লাভ করলেন।
তার এই বেপরোয়া ব্যক্তি জীবন ও ক্ষমতার উৎস নিয়ে খোদ চিকিৎসক মহলে বিস্ময় সৃষ্টি হয়েছে। এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও ডা. আবু ফয়সাল মো. আরিফুল ইসলাম কোনো বক্তব্য দিতে রাজ হননি।
আমার বার্তা/এমই