
ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে জুলাই আন্দোলনে বিরোধীতাসহ নানা অভিযোগে ১৬ শিক্ষক, কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট সভায় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। এর মধ্যে ১ জন কর্মকর্তা, ২ জন শিক্ষক এবং ছাত্রলীগ নেতাকর্মীসহ ১৩ জন শিক্ষার্থী রয়েছে।
বুধবার (৩ ডিসেম্বর) বিকেল সোয়া ৩টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার মো. মিজানুর রহমান এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এর আগে গত ২৭ নভেম্বর বিশ্ববিদ্যালয়ের ৯০তম সিন্ডিকেট সভায় উত্থাপিত তদন্ত কমিটির প্রতিবেদন ও শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশের প্রেক্ষিতে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে এ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ প্রশাসনের এ সভার ৫ দিন অতিক্রম হলেও এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে এনিয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে না। নোটিশ বোর্ডে টানানো হয়নি শাস্তির সিদ্ধান্ত। উল্টো শাস্তির ঘটনাটি নিয়ে এক ধরনের লুকোচুরি করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে-বাইরে।
শাস্তিপ্রাপ্তদের ৩ জনকে চাকরি থেকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। তারা সাবেক রেজিস্ট্রার কৃষিবিদ মো. হুমায়ন কবীর, সাবেক প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জি এবং ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের সাবেক পরিচালক ড. মো. মেহেদী উল্লাহ। এছাড়াও ১৩ জন ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর মধ্যে যাদের এখনো ছাত্রত্ব রয়েছে তাদের স্থায়ী বহিষ্কার এবং যাদের ছাত্রত্ব নেই তাদের মধ্যে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর সম্পন্নকারী শিক্ষার্থীদের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় সনদ বাতিল করা হয়েছে।
শাস্তিপ্রাপ্তরা হলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আল মাহমুদ কায়েস, সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদুল ইসলাম রিয়েল সরকার, ছাত্রলীগ কর্মী থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের আনাস সরকার, ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিকস ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের জুবায়ের আহমেদ সাব্বির (অ্যালেক্স সাব্বির), সমাজবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের মো. ইনজামামুল হাসান, এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগ ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের কে.এম রাজু, বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মোছা. তৃণা মির্জা, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের রিয়াজ উদ্দিন, ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের নাইম আহমেদ দুর্জয়, চারুকলা বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের হাসিব সিদ্দিকী, ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের তাসনীমুল মুবীন, পরিসংখ্যান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের মো. মোস্তাকিম মিয়া এবং দর্শন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. পারভেজ মাতুব্বর।
অভিযোগ উঠেছে, শাস্তির ঘটনাটি নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের একটি পক্ষ লুকোচুরি করছে। গোপন আতাঁতে তারা এ ঘটনাটি আড়াঁলে রেখে শাস্তিপ্রাপ্তদের সহযোগী হিসেবে মদদ দিচ্ছে।
এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিষ্ট্রার মো. মিজানুর রহমান বলেন, বিগত সিন্ডিকেট সভায় অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তবে এর বাইরে এ নিয়ে আমি আর কোনো মন্তব্য করতে চাই না। এ সময় শাস্তির ঘটনায় আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে কী, না এবং নোটিশ বোর্ডে এ সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত টানানো হয়েছে কী, না জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।
প্রসঙ্গত, ২০২৫ সালের ১৬ এপ্রিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে বাধাদান, ধর্ষণের হুমকি, হামলায় আহতদের চিকিৎসা প্রদানে বাধা এবং উস্কানিদাতাদের তথ্য অনুসন্ধানে বিশ্ববিদালয়ের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো: হাবিব-উল-মাওলাকে আহ্বায়ক এবং প্রক্টর ড. মাহবুবুর রহমানকে সদস্য সচিব করে ১০ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে প্রশাসন।
আমার বার্তা/জেএইচ

