ফরিদপুরের সালথায় গ্রাম্যদল ভারি করা নিয়ে বিবাদমান দুটি পক্ষের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে উভয় পক্ষের অন্তত ৫০ জন আহত হয়েছেন। আহতদের বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। সংঘর্ষ চলাকালে হামলা পাল্টা হামলা চালিয়ে স্থানীয় একটি বাজারের অন্তত ১২ ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়।
বুধবার (৯ এপ্রিল) সন্ধ্যা ৭ থেকে ১০ টা পর্যন্ত উপজেলা গট্টি ইউনিয়নের বালিয়া বাজারে সালাথা-ফরিদপুর আঞ্চলিক সড়কে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় পুরো এলাকা রণক্ষেত্র পরিণত হয়েছে। প্রায় ৬ ঘন্টা ওই সড়ক দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ থাকে। পরে সেনাবাহিনী ও পুলিশের যৌথ চেষ্টায় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, ওই এলাকার স্থানীয় আওয়ামীলীগ নেতা বা বর্তমান বিএনপির নেতা নুরু মাতুব্বর এবং স্থানীয় যুবলীগ নেতা বা বর্তমান বিএনপির নেতা জাহিদ মাতুব্বর এই দুই পক্ষের মধ্যে পূর্ববিরোধ রয়েছে। বর্তমানে নুরু মাতুব্বর একটি মামলায় কারাগারে রয়েছেন। কারাগারে থাকায় এ পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তাঁর ভাই উপজেলা শ্রমিক লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মুনসুর মাতুব্বর। অপর পক্ষের নেতৃত্ব দেয় উপজেলা যুবলীগের নেতা জাহিদ মাতুববর।
বিরোধের জেরে দুই পক্ষ দেশীয় অস্ত্র ঢাল-সড়কি, রামদা, ইটপাটকেল নিয়ে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে নুরু মাতুব্বরের সমর্থক নান্নু মাতুব্বরের ও তার ভাতিজা সোহান মাতুব্বরের ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের তালা ভেঙে লুটপাট করে প্রতিপক্ষ। এরপরই দুই পক্ষের মধ্যে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া চলতে থাকে। পরে রাত পৌনে ১০টার দিকে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাহিদ মাতুব্বর নিজেকে বিএনপি নেতা দাবি করে বলেন, ২০১৮ সালের শামা ওবায়েদ (বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক) আপার গাড়িতে হামলা করে আওয়ামী লীগের দোসররা। তারাই আবার এলাকায় আধিপত্য বিস্তার করতে আজ বিকালে আমার সমর্থক বাজারের ইলেকট্রিক্যাল ব্যবসায়ী মামুন শেখকে (৩৫) মারধর করে। এরপরই মারামারি হয়। এই মারামারিতে আমার পক্ষের প্রায় ২০ জন আহত হন। তাদের হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মুনসুর মাতুব্বর বলেন, আওয়ামী লীগের লোকজনের সাতে আমাদের মারামারি হয়েছে। জাহিদ মাতুব্বর যুবলীগ নেতা ও লাবু চৌধুরীর (সাবেক এমপি) লোক।তবে তিনি ৫ আগস্টের পর থেকে নিজেকে বিএনপি নেতা হিসাবে দাবি করে। পরে বালিয়া বাজারে আধিপত্য বিস্তার এবং ত্রাসের রাজ্য কায়েম করে। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে ৬ জন নিরীহ মানুষকে জাহিদ মাতুব্বরের হাতুড়ি বাহিনী তাদেরকে পিটিয়ে মারাত্মক জখম করে। এবং কয়েকটি দোকান পূর্বে লুটপাট করে বিগত দিনে ওদের অত্যাচারে আমরা অতিষ্ঠ ছিলাম। আজ বিকালে বালিয়া গ্রামের আমাদের পক্ষের সবুর খাঁকে প্রথমে মারধর করে ওরা। এ নিয়ে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে আমার পক্ষের অন্তত ২০-৩০ জন আহত হয়েছেন।
রাত ১০টার দিকে সালথা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আতাউর রহমান বলেন, আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ শুরু হয়। রাত হওয়ায় সংঘর্ষ ঠেকাতে বেগ পেতে হয়। পরে সেনাবাহিনীর সদস্যদের সহযোগিতায় দুই পক্ষকে ধাওয়া দিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা হয়েছে।