কোনো স্পষ্ট ও সুনির্দিষ্ট কারণ ছাড়াই একের পর এক বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিলের ঘটনায় মামলা হয়েছে ট্রাম্প প্রশাসনের ৩ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণপূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য জর্জিয়ার ফেডারেল আদালতে মামলা করেছেন ১৩০ জনেরও বেশি বিদেশি শিক্ষার্থী।
মামলায় যে তিন কর্মকর্তাকে অভিযুক্ত বা বিবাদি করা হয়েছে, তারা হলেন যুক্তরাষ্ট্রের অ্যাটর্নি জেনারেল পাম বন্ডি, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টি নোয়েম এবং দেশটির অভিবাসন ও কাস্টমস বিষয়ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এজেন্সি(আইসিই)- এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লিয়নসকে। অভিযোগপত্রে বলা হয়েছে, এই তিন কর্মকর্তার নির্দেশে আইনকে পাশ কাটিয়ে আইসিই বিদেশি শিক্ষার্থীদের ভিসা বাতিল করছে এবং যুক্তরাষ্ট্রে শিক্ষার্থীদের বৈধ অবস্থানকে সংকটাপন্ন করে তুলছে।
গত ১১ এপ্রিল ১৭ জন বিদেশি শিক্ষার্থী বাদি হয়ে দায়ের করেছিলেন মামলাটি। পরে এই তালিকায় যুক্ত হন আরও অনেকেই। বৃহস্পতিবার মামলার মোট বাদির সংখ্যা পৌঁছেছে ১৩৩ জনে।
গত ১৯ জানুয়ারি ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের শপথ গ্রহণের পর গত প্রায় ৩ মাসে দেশের ১০০’র বেশি উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নরত ৬ শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করেছে তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন।
এই শিক্ষার্থীদের একটি বড় অংশ গত বছর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবিতে আন্দোলন করেছিলেন। এছাড়া ছোটোখাটো কিংবা ধর্তব্যের মধ্যে পড়ে না— এমন অপরাধেও বাতিল হয়েছে অনেক বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা।
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষা সংক্রান্ত অনলাইন সংবাদ পোর্টাল ইনসাইড হায়ার ইডি’র বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে ব্রিটেনের দৈনিক দ্য গার্ডিয়ান জানিয়েছে, গণপরিবহনে টিকিট না কেটে ওঠা কিংবা সড়কে নির্ধারিত গতিসীমার চেয়ে জোরে গাড়ি চলানোর মতো অপরাধেও ভিসা বাতিলের ঘটনা ঘটেছে।
কয়েকদিন আগে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, এ পর্যন্ত ৩ শতাধিক বিদেশি শিক্ষার্থীর ভিসা বাতিল করা হয়েছে। ফিলিস্তিনের পক্ষে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের ‘উন্মাদ’ আখ্যাও দিয়েছিলেন তিনি।
“সম্ভবত এ পর্যন্ত ৩ শতাধিক (শিক্ষার্থী) ভিসা বাতিল হয়েছে। ভবিষ্যতে আরও হবে। আমরা প্রতিদিনই এটি করছি। আমরা যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে উন্মাদমুক্ত করতে চাই”, সাংবাদিকদের বলেছিলেন রুবিও।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসীদের প্রতি সহৃদয় নন। ২০১৭ সালে প্রথম যেবার তিনি ক্ষমতাসীন হয়েছিলেন, তখন থেকেই অভিবাসীদের প্রতি অনমনীয় মনোভাবের জন্য পরিচিতি পান তিনি।
ট্রাম্পের এই দফায় ক্ষমতা গ্রহণের পর ফের অভিবাসীদের প্রতি কঠোর নীতি নিয়েছে তার নেতৃত্বাধীন প্রশাসন। ইতোমধ্যে হাজার হাজার নথিবিহীন অভিবাসীদের তাদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে। এমনকি তার পূর্বসূরী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময় যারা বসবাসের অনুমতি পেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্তত ১০ লাখ জনকে নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার আদেশ দিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন।
সূত্র : এএফপি
আমার বার্তা/জেএইচ