ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল।
জুলাই-আগস্টে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের সময় সংঘটিত গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় আজ সোমবার আওয়ামী লীগের ১৩ নেতাকে আদালতে হাজির করা হয়েছে। তদন্তের অগ্রগতি জানতেই তাদের আজ আদালতে হাজির করা হয়েছে। সেখানেই আদালত নির্দেশ দিয়েছেন, শেখ হাসিনাসহ ৪৫ জনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত এক মাসের মধ্যে শেষ করতে হবে।
বিচারপতি মো. গোলাম মর্তুজা মজুমদারের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনাল আজ সকালে, ১৭ ডিসেম্বরের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন এবং ১৩ আসামিকে আদালতে হাজির করার পর কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।
১৩ আসামির মধ্যে রয়েছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, সাবেক বেসামরিক বিমান পরিবহণ ও পর্যটনমন্ত্রী ফারুক খান, ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন, সাবেক তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, সাবেক ডাক, টেলিযোগাযোগ ও আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, সাবেক জ্বালানি উপদেষ্টা ড. সাবেক প্রধানমন্ত্রী হাসিনা তৌফিক-ই-এলাহী চৌধুরী, সাবেক সমাজকল্যাণমন্ত্রী দীপু মনি, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাবেক বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, সাবেক নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক শিল্প প্রতিমন্ত্রী কামাল আহমেদ মজুমদার, সাবেক বস্ত্রমন্ত্রী ড. এবং পাট গোলাম দস্তগীর গাজী, সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, সাবেক স্বরাষ্ট্র সচিব জাহাঙ্গীর আলম।
ট্রাইব্যুনালের প্রধান প্রসিকিউটর মো. তাজুল ইসলাম জানান, মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে আজ সকাল ১০টার দিকে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়। অন্যান্য মামলায় আসামিরা এখন কারাগারে রয়েছে বলেও জানান তিনি।
সাবেক কৃষিমন্ত্রী আবদুর রাজ্জাক আরেকটি মামলায় পুলিশ রিমান্ডে থাকায় তাকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়নি। এই প্রথম ৪৬ আসামির মধ্যে কাউকে ট্রাইব্যুনালে আনা হলো। একসঙ্গে এত "ভিআইপি আসামি"র উপস্থিতির কারণে আজ সকাল থেকে ট্রাইব্যুনাল এলাকায় নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে।
র্যাব ও পুলিশসহ বিভিন্ন নিরাপত্তা ও গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যদের ইউনিফর্ম ও সাদা পোশাকে দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়। মঙ্গলবার সকাল সোয়া ১০টার দিকে প্রিজনভ্যানে করে তাদের ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।
গত ১৭ ডিসেম্বর জুলাই-আগস্টের গণহত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুই মামলায় শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে তদন্ত দুই মাসের মধ্যে শেষ করার নির্দেশ দেন ট্রাইব্যুনাল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিরস্ত্র ছাত্র-জনতার ওপর গুলি, হত্যার নির্দেশদাতা ও পরিকল্পনাকারী হিসেবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার চলছে। ছাত্র-জনতার আন্দোলন ঠেকাতে আওয়ামী লীগ সরকার নির্বিচারে হত্যা চালায়। প্রায় দেড় হাজার মানুষ প্রাণ হারান এ আন্দোলনে। ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মধ্যে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের ১৫ বছরের শাসনের অবসান হয়। এরপর শান্তিতে নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নিলে জুলাই-আগস্টের গণহত্যার বিচার করার সিদ্ধান্ত নেয়।
আমার বার্তা/জেএইচ