দেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূলের লক্ষ্যে দুদক সংস্কার কমিশনের কাছে ২২ দফা প্রস্তাবনা জমা দিয়েছে ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুরের নেতৃত্বাধীন গণঅধিকার পরিষদ।
বুধবার (২৭ নভেম্বর) ধানমন্ডির টিআইবির কার্যালয়ে গিয়ে গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খাঁনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল দুদক সংস্কার কমিশনের প্রধান ইফতেখারুজ্জামানের নিকট এ প্রস্তাবনা জমা দেন।
এ সময় তারা ইফতেখারুজ্জামানের সঙ্গে সংক্ষিপ্ত বৈঠক করেন। সেখানে মো. রাশেদ খাঁন বাংলাদেশ থেকে দুর্নীতি নির্মূলের জন্য দুদক সংস্কার কমিশনকে সহযোগিতা করার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
এ সময় গণঅধিকার পরিষদের উচ্চতর পরিষদ সদস্য আবু হানিফ, অ্যাড. সরকার নুরে এরশাদ সিদ্দিকী, সহ-সভাপতি নাজমুস সাকিব, ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক তোফাজ্জল হোসেন, আইনজীবী অধিকার পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. মোমিনুল ইসলাম, পেশাজীবী অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. মেহেদী হাসান প্রমুখ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
গণঅধিকার পরিষদের ২২ প্রস্তাবনা—
১। দুদক আইনের সংস্কারের মাধ্যমে দুর্নীতি দমন কমিশনকে প্রকৃত স্বাধীন, জবাবদিহিতামূলক ও জনবান্ধব প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।
২। বিসিএসে দুদকের জন্য স্বতন্ত্র ক্যাডার চালু করতে হবে।
৩। বাংলাদেশের যাদের বাৎসরিক আয় ৩,৫০,০০০ (তিন লাখ পঞ্চাশ হাজার) টাকা, তাদের প্রত্যেকের সম্পদের হিসাব বিবরণী প্রতি বছর ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সংশ্লিষ্ট দুদকের অফিসে জমা দেওয়া বাধ্যতামূলক করতে হবে।
৪। প্রতিটি জেলাতে দুদকের নিজস্ব কার্যালয় থাকতে হবে। এ ছাড়া, দুদকের নিজস্ব বাহিনী থাকবে, যাদের কাজ হবে দুর্নীতি নির্মূলে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করা এবং দুর্নীতিবাজদের গ্রেপ্তার করা।
৫। মহামান্য রাষ্ট্রপতি রাজনৈতিক দল ও নাগরিকদের মতামতের ভিত্তিতে সার্চ কমিটির আইন প্রণয়ন ও সার্চ কমিটি গঠনের উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। সার্চ কমিটি দুদকের চেয়ারম্যান ও কমিশনারের সদস্য সংখ্যার দ্বিগুণ নাম চূড়ান্ত করে গণমাধ্যমে প্রচার ও গণশুনানির মাধ্যমে নাম চূড়ান্ত করবেন। রাষ্ট্রপতি উক্ত নামসমূহ থেকে চেয়ারম্যান ও কমিশনার নিয়োগ করবেন। দুদকের সচিবও সার্চ কমিটির প্রক্রিয়ার মাধ্যমে নিয়োগপ্রাপ্ত হবেন।
৬। দুর্নীতি দমন কমিশনে একজন চেয়ারম্যান, ৮ জন কমিশনার (৮ বিভাগ) থাকবেন।
৭। প্রতিটি থানাতে দুদকের অভিযোগ বক্স থাকবে, যাতে যে কেউ সহজে অভিযোগের মাধ্যমে দুর্নীতিবাজের সন্ধান দিতে পারে। দুদকের হটলাইন ১০৬-কে আরও কার্যকরী করতে হবে এবং অভিযোগকারীর তথ্য সবসময় গোপন রাখতে হবে।
৮। অভিযোগ যাচাই-বাছাইয়ে ৮টি বিভাগের জন্য ৮টি যাচাই-বাছাই কমিটি থাকবে। যাচাই-বাছাই কমিটির প্রধান হবেন একজন কমিশনার। কমিটিতে আরও থাকবেন একজন ডিজি, দুজন পরিচালক, দুজন সহকারী পরিচালক।
৯। দুদকের যে কোনো অভিযোগ প্রাথমিকভাবে যাচাই-বাছাই করার জন্য জেলাভিত্তিক দক্ষ অভিজ্ঞ স্পেশাল টিম থাকবে। প্রাথমিকভাবে অভিযোগের ব্যাপারে যদি সত্যতা পাওয়া যায়, তাহলে দুদক ৩০ দিনের মধ্যে অভিযোগের ব্যাপারে বিস্তারিত বর্ণনার জন্য অভিযুক্ত ব্যক্তিকে প্রয়োজনীয় ডকুমেন্টসসহ স্ব-শরীরে জেলার কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বিস্তারিত বর্ণনার সুযোগ দেবে। তবে কাউকে হয়রানি করার জন্য মিথ্যা অভিযোগ দিলে অভিযোগকারীর বিরুদ্ধে ৬ মাসের কারাদণ্ড ও এক লাখ টাকা জরিমানার বিধান থাকবে। এছাড়া সঠিক অভিযোগকারীকে অভিযোগের ধরন অনুযায়ী সর্বোচ্চ এক লাখ টাকা পুরস্কারের বিধান থাকবে।
১০। জেলার দুদকের তত্ত্বাবধানে প্রতিটি থানাতে দক্ষ, সৎ লোকের সমন্বয়ে 'দুর্নীতি বিরোধী নাগরিক কমিটি' গঠন করতে হবে। জেলা দুদক কর্মকর্তারা এই কমিটির সঙ্গে মাসিক মিটিং করবেন এবং জনগণকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে সচেতন করার কর্মসূচি হাতে নেবেন।
১১। দুদকের নিজস্ব ট্রাইব্যুনাল গঠন করতে হবে এবং যেকোনো ভিকটিম বা ব্যক্তি পর্যায় থেকে সরাসরি দুদকে মামলা করার বিধান থাকবে।
১২। দুদকের প্রতিটি মামলা দুদকের টিম তদন্ত করবে এবং অসৎ উদ্দেশ্য ব্যতীত তদন্তের প্রয়োজনে তদন্তকারী কর্মকর্তাকে বাংলাদেশের সর্বক্ষেত্রে বা প্রতিষ্ঠানে প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করতে হবে। তদন্ত ও তথ্যের প্রয়োজনে দেশের যেকোনো সরকারি বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে বা অধিদপ্তরের সার্ভারে প্রবেশের সুযোগ দিতে হবে।
১৩। মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ বিধিমালা-২০১৯ এর তফসিল-১ এর মধ্যে যে সব অপরাধ দুর্নীতির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট, তা তদন্ত বা অনুসন্ধানের দায়িত্ব দুদককে দিতে হবে।
১৪। দুদকের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সততা-দক্ষতার কারণে দুর্নীতিবাজদের কাছ থেকে যে অর্থ উদ্ধার হয় তার ২ শতাংশ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদেরকে প্রণোদনা হিসেবে দেওয়ার বিধান চালু করতে হবে।
১৫। দুদকে প্রেষণের মাধ্যমে নিয়োগ বা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ বন্ধ করে নিজস্ব কর্মকর্তা এক্সপার্ট নিয়োগ দিতে হবে।
১৬। দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে দুদক নিজে/যেকোনো ব্যক্তি মামলা করার পর ৬ মাসের মধ্যে তদন্ত শেষ করতে হবে। তদন্ত/আলামত উদ্ধার/মামলা সাক্ষী প্রদানের জন্য সর্বক্ষেত্রে দুদককে লজিস্টিক সার্পোট দিতে হবে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ৬ মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি করতে হবে। তদন্তকালে এবং বিচারের সময় অভিযুক্ত ব্যক্তি জামিন পাবেন না।
১৭। সব প্রকার সরল বিশ্বাসের বিধান বাতিল করতে হবে। চেয়ারম্যান, কমিশনাররা ও সচিব দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হলে ১৪ বছরের কারাদণ্ড এবং দুই কোটি টাকা জরিমানার বিধান থাকবে। দুদকের অন্য কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী দুর্নীতির দায়ে অভিযুক্ত হলে ১০ বছরের কারাদণ্ড এবং এক কোটি টাকা জরিমানার বিধান থাকবে।
১৮। দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হলে সর্বোচ্চ যাবজ্জীবন কারাদণ্ড এবং অভিযুক্তের সব অর্থসম্পদ রাষ্ট্রীয় কোষাগারে জমার বিধান করতে হবে।
১৯। দুদক (কর্মচারী) নীতিমালা-২০০৮(২), ৫৪(২) এর মতো কালা কানুন বিলুপ্ত করে পদোন্নতি ও বদলির একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে।
২০। দুদকের কর্মকর্তাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য একটি প্রশিক্ষণ অ্যাকাডেমি নির্মাণ করতে হবে।
২১। দুদকের ন্যূনতম একজন করে দক্ষ কর্মকর্তাকে বাংলাদেশের বিদেশি দূতাবাসগুলোতে ও দেশের বিভিন্ন দুর্নীতিপ্রবণ হাবগুলোতে বসাতে হবে। মানিলন্ডারিং অপরাধ দমন ও প্রতিরোধের জন্য বিদেশি মিশনগুলোর সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি বা সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করতে হবে। যাতে অর্থ পাচার রোধ এবং পাচারকৃত অর্থ সহজে দেশে ফেরত আনা যায়।
২২। বাংলাদেশের যেকোনো প্রকারের দুর্নীতি দমন ও প্রতিরোধের জন্য বা যেকোনো তদন্ত বা অনুসন্ধানের জন্য দুদক যেকোনো পদক্ষেপ নিতে বাংলাদেশের যেকোনো সরকারি-বেসরকারি বা স্বায়ত্বশাসিত যেকোনো প্রতিষ্ঠানে যেকোনো সময় অভিযান বা তল্লাশি পরিচালনা করতে পারবে।
আমার বার্তা/এমই