রাজধানী ঢাকার বায়ুদূষণ প্রতিনিয়ত ভয়াবহতার দিকে ধাবিত হচ্ছে। তবে কীভাবে এই বায়ুদূষণ থেকে পরিত্রাণ পাওয়া যায়-তার আপাতত জোরালো কোনো পদক্ষেপ চোখে পড়ছে না। এমন অবস্থায় অ্যাজমা ও শ্বাসতন্ত্রের রোগগুলো ঘরে ঘরে দুশ্চিন্তার কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
সিদরাত জেবিন (৩০) নামে একজন চিকিৎসক- যিনি দীর্ঘদিন ধরে হাঁপানিতে ভুগছিলেন। গত সোমবার তিনি মারা যান। মৃত্যুর কিছু ঘণ্টা আগে তিনি নিজের ফেসবুক প্রোফাইলে ঢাকার বায়ুদূষণ নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে পোস্ট দিয়েছিলেন।
পোস্টে তিনি লিখেছিলেন, ঢাকার বায়ুদূষণের কারণ কী? এতো প্রকৌশলী থাকার পরও দূষণের কারণ নিয়ে কোনো তথ্য নেই। কেউ কি বাতাসের মান আদৌ খতিয়ে দেখছে? মনে হয় না শুধু ধুলো আর নির্মাণসামগ্রীর জন্য এই অবস্থা। কিছু এলাকায় বাতাসে নিশ্চয়ই বিষাক্ত গ্যাস আছে... এটা খুবই হতাশাজনক কারণ আমাদের শহরে কেউ এই সমস্যার সমাধানে কাজ করছে না।
সিদরাত জেবিনের মৃত্যুর সময় ঢাকার বায়ুমান খুবই অস্বাস্থ্যকর ছিল। জেবিনের মৃত্যুর পরের দিন মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) সকালে বায়ুদূষণে বিশ্বের ১২৬ নগরীর মধ্যে শীর্ষে ছিল ঢাকা।
এরপর গতকাল বুধবার সকাল ৯টার দিকে ঢাকার বায়ুর মান ছিল ২৪৯। বায়ুর এই মানকে খুব অস্বাস্থ্যকর হিসেবে বিবেচনা করা হয়। এই মানে বিশ্বে বায়ুদূষণে গতকাল দ্বিতীয় শীর্ষ স্থানে ছিল ঢাকা। আর ৩১০ স্কোর নিয়ে বিশ্বের ১২৪ শহরের মধ্যে শীর্ষে ছিল পাকিস্তানের লাহোর।
ঢাকার এমন বায়ুদূষণে অনেকেই চাচ্ছেন কর্তৃপক্ষ জোরালো পদক্ষেপ নিক। তবে এমন অবস্থায় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সবাইকে বাইরে গেলে মাস্ক পরার পরামর্শ দিয়েছে। সেইসঙ্গে সংবেদনশীল ব্যক্তিদের অতি প্রয়োজন ছাড়া বাইরে না যাওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে।
পরিবেশবিদ ও বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, ঢাকার বায়ুদূষণের প্রধান কারণ বর্জ্য পোড়ানো, উন্নয়ন কাজ, যানবাহনের কালো ধোঁয়া, ইটভাটা এবং সীমান্তবর্তী এলাকা থেকে আসা দূষিত বাতাসসহ অন্যান্য কারণ।
১০১ থেকে ১৫০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে 'সংবেদনশীল গোষ্ঠীর জন্য অস্বাস্থ্যকর' বলে ধরা হয়। ১৫১ থেকে ২০০ এর মধ্যে একিউআই স্কোরকে 'অস্বাস্থ্যকর' বলে মনে করা হয়।
এ ছাড়া, ২০১ থেকে ৩০০ একিউআই স্কোরকে 'খুব অস্বাস্থ্যকর' এবং ৩০১ থেকে ৪০০ একিউআই স্কোরকে 'ঝুঁকিপূর্ণ' হিসেবে বিবেচনা করা হয়, যা বাসিন্দাদের জন্য গুরুতর স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করে।