শিল্প উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেছেন, দেশের জিআই পণ্যের তালিকা সমৃদ্ধ করার পর সেগুলো বাণিজ্যিকভাবে বিকশিত করতে হবে। জিআই পণ্য আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে লালন করে। এই পণ্যের বাজারজাতকারীদের ন্যায্য স্বীকৃতি এবং পারিশ্রমিক নিশ্চিত করতে হবে। যার ফলে স্থানীয় উদ্যোক্তা বা উৎপাদনকারীদের ক্ষমতায়ন হবে।
এ জন্য সরকারের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট সবার অংশগ্রহণ জরুরি। জামদানি শাড়ি দেশের প্রথম পণ্য হিসেবে জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে। আজ পর্যন্ত ৫৫টি পণ্য জিআই স্বীকৃতি পেয়েছে।
বুধবার (৩০ এপ্রিল) ঢাকায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে শিল্প মন্ত্রণালয়ের পেটেন্ট, শিল্প-নকশা ও ট্রেডমার্কস অধিদপ্তর আয়োজিত বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২৫ এর আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
শিল্প উপদেষ্টা বলেন, মেধাসম্পদ ‘আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সনদে বর্ণিত মানুষের জন্য স্বীকৃত অধিকারগুলোর মধ্যে অন্যতম অধিকার। সংগীত কেবল বিনোদন নয়। এটি মানবতার আবেগ, অনুভূতি ও সংস্কৃতির এক অনুপম প্রকাশভঙ্গি। প্রতিটি গানের সুর ও তালের পেছনে রয়েছে অগণিত সৃষ্টিশীল শ্রম। সৃজনশীলতা ও উদ্ভাবনের জন্য সঙ্গীতের মেধাসম্পদ অধিকার সংরক্ষণ জরুরি।
আলোচনা সভায় সংস্কৃতি বিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক উৎসব গান। এদেশের মানুষ গানের মাধ্যমে ভাব প্রকাশ করে। যা দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে আছে। সঙ্গীত নিয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় বড় প্রকল্পের কাজ করছে। যা দেশের মানুষ কিছুদিনের মধ্যে দেখতে পাবে। সঙ্গীতের কপিরাইট নিশ্চিত করতে হবে।
শিল্প সচিব মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, যারা জীবিকা নির্বাহ করে, বাজারজাত করে এবং পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখে সেসব আবেদনকারীকে জিআই সনদ নিবন্ধন পাবে। জিআই পণ্য সবার মাঝে ছড়িয়ে দিতে শিল্প মন্ত্রণালয় কাজ করছে। এর মাধ্যমে বিশ্বব্যাপী বাংলাদেশের পণ্য জনপ্রিয় হয়ে উঠবে।
এ অনুষ্ঠানে ২৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্যের নিবন্ধন সনদ দেওয়া হয়। ভৌগোলিক পণ্যের সনদ বাংলাদেশ তাঁত বোর্ড, সংশ্লিষ্ট জেলার জেলা প্রশাসক ও নওগাঁর বদলগাছি উপজেলার নাকফজলি আমচাষি সমবায় সমিতির নিকট হস্তান্তর করা হয়। World Intellectual Property Organization (WIPO) ঘোষিত “বিশ্ব মেধাসম্পদ দিবস ২০২৫” এর বৈশ্বিক প্রতিপাদ্য ছিল “IP and music : Feel the beat of IP”। এবছর সংগীতশিল্পী, সুরকার, গীতিকারসহ সংগীতায়তনের সংশ্লিষ্ট সবার সৃজনশীলতা সংরক্ষণ এবং নতুন উদ্ভাবনকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে মেধাসম্পদের অধিকার সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে।
নিবন্ধন সনদপ্রাপ্ত ২৪টি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য (ব্রাকেটে সনদ নম্বর) : নরসিংদীর লটকন (৩২), মধুপুরের আনারস (৩৩), ভোলার মহিষের দুধের কাঁচাদই (৩৪), মাগুরার হাজরাপুরী লিচু (৩৫), সিরাজগঞ্জের গামছা (৩৬), সিলেটের মনিপুরি শাড়ি (৩৭), মিরপুরের কাতান শাড়ি (৩৮), ঢাকাই ফুটি কার্পাস তুলা (৩৯), কুমিল্লার খাদি (৪০), ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ছানামুখী মিষ্টি (৪১), গোপালগঞ্জের ব্রোঞ্জের গহনা (৪২), সুন্দরবনের মধু (৪৩), শেরপুরের ছানার পায়েস (৪৪), সিরাজগঞ্জের লুঙ্গি (৪৫), গাজীপুরের কাঁঠাল (৪৬), কিশোরগঞ্জের রাতাবোরো ধান (৪৭), অষ্টগ্রামের পনির (৪৮), বরিশালের আমড়া (৪৯), কুমারখালীর বেডশিট (৫০), দিনাজপুরের বেদানা লিচু (৫১), মুন্সীগঞ্জের পাতক্ষীর (৫২), নওগাঁর নাকফজলি আম (৫৩), টাঙ্গাইলের মির্জাপুরের জামুর্কির সন্দেশ (৫৪) এবং ঢাকাই ফুটি কার্পাস তুলার বীজ ও গাছ (৫৫)।
আমার বার্তা/এমই