ঈদে গণমাধ্যমে অন্তত চারদিন ছুটি থাকা দরকার বলে মন্তব্য করেছেন আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান। তিনি বলেন, ডিজিটাল যুগে অনলাইন গণমাধ্যম বন্ধের সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে যারা দায়িত্ব পালন করবেন তাদের আর্থিক সুবিধা দিতে হবে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে (ডিআরইউ) আয়োজিত ‘গণমাধ্যম সংস্কার: সমস্যা ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন তিনি।
ডিআরইউ সহ-সভাপতি গাজী আনোয়ারের সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক মাইনুল হাসান সোহেলের পরিচালনায় অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের সদস্য এবং ইংরেজি দৈনিক ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ। বক্তব্য রাখেন সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম, যুগ্ম সম্পাদক দিদারুল আলম ও সিনিয়র সাংবাদিক আসিফ শওকত কল্লোল। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থান করেন জার্নালিস্ট কমিউনিটি অব বাংলাদেশের সদস্য সচিব মো. মিয়া হোসেন।
আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমান বলেন, বিগত ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারি-বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করেছেন। সবচেয়ে বেশি ইমেজ সংকটে পড়েছিল পুলিশ বিভাগ, বিচার বিভাগ ও সংবাদপত্র। বিচারবিভাগ পরিণত হয়েছিল অবিচারের ঘানিতে আর বয়োজ্যেষ্ঠ সম্পাদকদের তৈলাক্তে সম্মানহানিতে পড়েছিল সাংবাদিকরা। এজন্য আমরা নিজেরাই দায়ী ছিলাম। সম্পাদক নিজের সম্মান বিলিয়ে দেওয়ার মানে সাংবাদিক সমাজকে ইমেজ সংকটের মধ্যে ফেলে দেওয়া।
তিনি বলেন, বিচারব্যবস্থা সবচেয়ে কলুষিত করেছিল যে ব্যক্তি সেই নাসিমুল গনিকে প্রেস কাউন্সিলের চেয়ারম্যান করা হয়েছিল। সেখান থেকে কী আশা করা যায়, এর মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানে কার্যকারিতা হারিয়ে যায়। তখনই প্রতিবাদ করা উচিত ছিল কিন্তু কেউ প্রতিবাদ করেননি। আমাদের নোয়াব ও সম্পাদক পরিষদ এলিট শ্রেণির। কেউ কেউ বলেন নোয়াব নাকি নবাব। আমার দেশ পত্রিকা সেই এলিট থেকে আলাদা, ওই শ্রেণিতে নেই। আমরা গণমানুষের হয়ে থাকতে চাই।
গণমাধ্যমের ছুটি প্রসঙ্গে এ সম্পাদক বলেন, সরকারি চাকরিজীবীরা ১০ দিন ছুটি পাবেন ঈদুল আজহায়। আমার ক্ষমতা থাকলে আজই অন্তত চারদিনের ছুটির ঘোষণা দিয়ে রাখতাম। কিন্তু এ ক্ষমতা আমার নেই। এটা নোয়াব ও সম্পাদক পরিষদ নামে এলিট শ্রেণি করবে। তবে ঈদের সময় অন্তত চারদিন ছুটি থাকা দরকার। অনলাইনে যারা ছুটি বিসর্জন দিয়ে কাজ করছেন তাদের উপযুক্ত আর্থিক সুবিধা দিতে হবে।
ফিন্যান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, দেশ স্বাধীনের আগে যেমন সংবাদপত্রের স্বাধীনতা ছিল না, স্বাধীনের পরও একই অবস্থা দেখেছি। ’৭৫ সালে সংবাদপত্র বন্ধ করে দিয়ে সাংবাদিকদের বেকার করা হয়েছিল। ’৯০ সালে নির্বাচিত সরকার এসে সাংবাদিকরা কিছুটা স্বাধীনভাবে কাজ করেন; তবে ২০০৬ সালের পর সেই স্বাধীনতা আবারও খর্ব করা হয়, যা চলে ১৬ বছর ধরে। কাজের পরিবেশ ছিল না। এজন্য আমরা গণমাধ্যম সংস্কারে মূল বিষয় তুলে আনার চেষ্টা করেছি, যা ছিল সংবাদপত্র ও সংবাদিকদের স্বাধীনতা। যেখানে সাংবাদিকদের আর্থিক স্বাধীনতা ও কাজের পরিবেশ নিহিত রয়েছে। এটা এমনভাবে করা যেখানে যুদ্ধাবস্থা ছাড়া কেউ এই সুবিধা খর্ব করতে পারবে না।
সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম আব্দুল্লাহ বলেন, অনেকেই বলছেন আগেই ভালো ছিলাম। তবে ম্যাজিক্যালি রাতারাতি সব পরিবর্তন হয় না। কিন্তু বিগত ১৬ বছরের মুক্ত গণমাধ্যম দিবস মুক্ত পরিবেশে কেউ পালন করতে পারিনি। সব জায়গায়ই বাধা দেওয়া হয়েছে। কেউ স্বাধীনভাবে লিখতে পারেননি। এখন সেই পরিবেশ নেই, লিখতে পারছেন সবাই, কেউ চোখ রাঙাচ্ছে না। তবে এই পরিবেশ কতদিন রাখতে পারবো সেই নিয়ে ভাবতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, একটা সময় ছিল যখন তথ্য চাইতে গিয়ে আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে। কাউকে আবার ঘণ্টার পর ঘণ্টা আটক রেখে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। সেখান থেকে এখন মুক্ত হয়ে কাজ করছেন সংবাদকর্মীরা। আমরা নিরঙ্কুশ স্বাধীনতা চাই। মামলা-হুমকি যেন আগামীতে না হয় সে বিষয়েও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।
আমার বার্তা/এমই