বিএনপিও সংস্কার চায়—এ কথা জানিয়ে দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, দুর্ভাগ্যজনকভাবে সরকারের কিছু ব্যক্তি এটি ভিন্নভাবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করছেন। প্রতিদিন নতুন নতুন সংস্কারের তালিকা তৈরি করে পরিস্থিতিকে জটিল করে তোলা হচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৮ মে) সন্ধ্যায় সুপ্রিম কোর্ট মিলনায়তনে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন। এ সভা ছিল সাবেক অ্যাটর্নি জেনারেল ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান এ জে মোহাম্মদ আলীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত।
মির্জা ফখরুল বলেন, "বিএনপির সংগ্রাম গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য। কিন্তু দুঃখজনকভাবে, তা এখনো সম্ভব হয়নি। প্রতিদিন নতুন সংস্কারের লিস্ট তৈরি হচ্ছে, যা শুধু জটিলতা বাড়াচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, আমরা স্পষ্ট করে বলছি, বিএনপিও সংস্কার চায়। তবে এখন বলা হচ্ছে—প্রথমে সংস্কার, তারপর নির্বাচন। কথাগুলো এমনভাবে উপস্থাপন করা হচ্ছে, যেন বিএনপি সংস্কারবিরোধী। অথচ বিএনপি বহু আগেই সংস্কারের পক্ষে অবস্থান জানিয়েছে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, বিষয়টি এমনভাবে তৈরি করা হচ্ছে যেন বিএনপি শুধু ক্ষমতা চায়, সংস্কার নয়। হ্যাঁ, বিএনপি অবশ্যই ক্ষমতা চায়—জনগণের ভোটে নির্বাচিত হয়ে দেশ পরিচালনার জন্যই রাজনীতি করে বিএনপি। এটি আমাদের গঠনতন্ত্রে স্পষ্টভাবে উল্লেখ আছে।
সংস্কারকে চলমান প্রক্রিয়া হিসেবে উল্লেখ করে ফখরুল বলেন, সংস্কারে ৫ বা ১০ বছর লেগে যেতে পারে। তবে প্রশ্ন হলো, এই সময়জুড়ে কি নির্বাচন বন্ধ থাকবে? ফ্যাসিবাদের দোসর আমলাদের দিয়ে কি দেশ চলবে? সচিবালয়ের ৯০ শতাংশই বর্তমানে সেই দোসরদের দখলে।
তিনি বলেন, এই অনির্দিষ্টকালীন অনিশ্চিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকার দিয়ে দেশ চালিয়ে জনগণের কী উপকার হবে? অর্থনীতির কি উন্নয়ন হচ্ছে? বিনিয়োগ কি বাড়ছে? অনেকে বলছেন—নির্বাচিত সরকার ছাড়া বিনিয়োগ আসবে না। অনেক গার্মেন্টস বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কাও রয়েছে।
ফখরুল আরও বলেন, ১৫ বছরে যারা ব্যবসা করতে পারেনি, তাদের জন্য কোনো বিশেষ উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। ব্যাংক খাতে শৃঙ্খলা নেই, স্বাস্থ্যসেবায় পরিবর্তন নেই। নতুন বাংলাদেশ গড়তে হলে এসব নিয়ে কথা বলতেই হবে। ভুল যেন না হয়, তা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি অভিযোগ করে বলেন, ৬০ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে, ২০ হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়েছে, গুম করা হয়েছে। এখন যেন বিএনপির সব ইতিহাস মুছে ফেলা হচ্ছে। তবে, বিএনপি চেয়ারপারসনের ফিরে আসা নতুন আশার সৃষ্টি করেছে।
তিনি সবাইকে সতর্ক করে বলেন, এমন কোনো কাজ করা যাবে না, যা জাতির স্বার্থবিরোধী। অনেক সিদ্ধান্ত নেওয়া হচ্ছে, যেগুলো নিয়ে কারও সঙ্গে আলোচনা হচ্ছে না। আমরা বাধা দিতে আসিনি, বরং সংলাপ চাই। কিছু পণ্ডিতকে বসিয়ে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়া হলে, তা কখনোই কার্যকর হবে না।
আমার বার্তা/এমই