তামাকের বহুমাত্রিক ক্ষতি মোকাবিলায় শক্তিশালী আইন সংস্কারের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন অর্থনীতিবিদ ও সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান।
তিনি বলেন, সরকারের বিভিন্ন সংস্কার কার্যক্রমের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে, যা জনস্বাস্থ্য, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
শনিবার (২০ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে প্রজ্ঞা (প্রগতির জন্য জ্ঞান) এবং অ্যান্টি টোব্যাকো মিডিয়া অ্যালায়েন্স (আত্মা) আয়োজিত ‘তামাকমুক্ত প্রজন্ম: আইন শক্তিশালীকরণে নাগরিক ভাবনা’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, তামাকের ক্ষতি বহুমাত্রিক। সরকারের বিভিন্ন রিফর্ম কার্যক্রমের মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংস্কার একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হবে। এটি শুধু জনস্বাস্থ্য নয়, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রেও ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশ ক্যানসার সোসাইটির সভাপতি অধ্যাপক ডা. গোলাম মহিউদ্দিন ফারুক বলেন, তামাক ব্যবহারকারীদের ভয়াবহ অভিজ্ঞতা আমরা শুনেছি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সুরক্ষিত রাখতে দ্রুততম সময়ে খসড়া সংশোধনীটি পাশ করতে হবে।
জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ও পাবলিক হেলথ অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট ইলেক্ট ডা. আবু জামিল ফয়সাল বলেন, অসংক্রামক রোগ মোকাবিলায় শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের কোনো বিকল্প নেই।
বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক আবু তাহের বলেন, আইন সংশোধনে গণমাধ্যম শক্তিশালী ভূমিকা পালন করছে, যা অব্যাহত রাখা জরুরি।
বিএআইআইএসএসের রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মাহফুজ কবীর যোগ করেন, আইন সংস্কারের সঙ্গে রাজস্ব কমে যাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। বরং জনস্বাস্থ্য রক্ষা হবে।
অনুষ্ঠানে বক্তারা জানান, তামাক বাংলাদেশে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনে বড় বাধা হিসেবে কাজ করছে। বিশেষ করে অসংক্রামক রোগে মৃত্যু এক-তৃতীয়াংশ কমিয়ে আনার লক্ষ্যে শক্তিশালী আইন জরুরি। দেশে হৃদরোগ, ক্যানসারসহ বিভিন্ন অসংক্রামক রোগের কারণে মোট মৃত্যুর ৭১ শতাংশ ঘটে, যার অন্যতম প্রধান কারণ তামাক। প্রতিদিন গড়ে ৪৪২ জন মানুষ মারা যাচ্ছে তামাক ব্যবহারের কারণে।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, দেশে ১৫ থেকে ৩৫ বছর বয়সী তরুণ জনগোষ্ঠীর সংখ্যা প্রায় ৫ কোটি। এই বিপুল জনগোষ্ঠীকে তামাকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে রক্ষা করতে তামাক কোম্পানির হস্তক্ষেপমুক্ত একটি শক্তিশালী আইন প্রয়োজন।
প্রজ্ঞার উপস্থাপনায় বলা হয়, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় প্রণীত খসড়া সংশোধনীতে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাব রয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে– পাবলিক প্লেস ও পরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্তকরণ, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কর্মসূচি সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ, খুচরা বা খোলা তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধ এবং ই-সিগারেট, ভ্যাপিং ও হিটেড টোব্যাকো প্রোডাক্ট উৎপাদন, আমদানি ও বিক্রি নিষিদ্ধ।
আমার বার্তা/এমই