
আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ঘিরে দুই-তৃতীয়াংশ ভোটকেন্দ্রকে প্রাথমিকভাবে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর বিপরীতে নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রায় ৭ লাখের বেশি সদস্য মোতায়েনের প্রাথমিক প্রস্তাবনা দিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের চূড়ান্ত সংখ্যা, কেন্দ্রে কতজন নিরাপত্তা সদস্য থাকবেন এবং বাহিনী মাঠে কতদিন মোতায়েন থাকবে— এসব বিষয় নিয়ে ইসি এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়নি। এগুলো কমিশন সভায় চূড়ান্ত হবে।
সম্প্রতি আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত সভায় কেন্দ্রের নিরাপত্তা সদস্য মোতায়েনের সুবিধার্থে একটি ধারণাপত্র উপস্থাপন করা হয়। প্রায় ৪২ হাজার কেন্দ্র বিবেচনায় নিয়ে সেখানে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রের সংখ্যা জানানো হয়। সভায় অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ৮ হাজার ২২৬টি কেন্দ্র, ঝুঁকিপূর্ণ ২০ হাজার ৪৩৭টি কেন্দ্র ও সাধারণ ১৩ হাজার ৪০০টি কেন্দ্র চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানানো হয়।
প্রাথমিক হিসাবে, প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ কেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ বা অধিক ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত। ঝুঁকিপূর্ণ ও অতি ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রগুলোকে ইসি ‘গুরুত্বপূর্ণ’ কেন্দ্র হিসেবে আখ্যায়িত করে থাকে। ভৌত অবকাঠামো, থানা থেকে দূরত্ব, প্রভাবশালীদের বাসস্থান, সীমান্ত এবং সংখ্যালঘু অধ্যুষিত এলাকা বিবেচনায় কেন্দ্রগুলোকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এবারের প্রায় ৪৩ হাজার ভোটকেন্দ্র চূড়ান্ত করে রেখেছে ইসি। ভোটের অন্তত ২৫ দিন আগে তালিকা গেজেট করা হবে।
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্র সংখ্যা ও নিরাপত্তা ব্যবস্থার বিষয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার গণমাধ্যমকে জানান, ফাইনাল ম্যাপিংটা এখনও আমরা করিনি। আরেকটু সময় আছে আমাদের হাতে। এটা নিয়ে আমরা কমিশন সভায় বসবো।
নির্বাচন কমিশন সচিব আখতার আহমেদ আইনশৃঙ্খলা সভা শেষে জানিয়েছিলেন, এবার মোট ৬৪টি জেলার ৩০০টি সংসদীয় আসনে কেন্দ্রের সংখ্যা ৪২ হাজার ৭৬১। কক্ষের হিসাবে পুরুষদের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ১৩৭ এবং নারীদের জন্য ১ লাখ ২৯ হাজার ৬০২ কক্ষ নির্ধারণ করা হয়েছে। অর্থাৎ মোট ভোটকক্ষের সংখ্যা দাঁড়াচ্ছে ২ লাখ ৪৪ হাজার ৬৪৯।
স্বরাষ্ট্র ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বিভিন্ন বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে গত ৯ জুলাই নির্বাচন প্রস্তুতি নিয়ে বৈঠক করে প্রধান উপদেষ্টা গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশনা দেন। বৈঠকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কীভাবে দায়িত্ব পালন করবে ও ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ ভোটের নির্দেশনাও দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে প্রেস সচিব শফিকুল আলম জানান, ‘ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে হবে, কতজন আনসার থাকবেন, কতজন পুলিশের সদস্য থাকবেন, বিজিবি বা সেনাবাহিনী কীভাবে থাকবেন, স্ট্রাইক ফোর্স হিসেবে কীভাবে থাকবেন–সেগুলো নিয়ে মিটিংয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। সেখানে বলা হয়, ৮ লাখের মধ্যে ৫ লাখ ৭০ হাজার হচ্ছেন আনসার এবং ১ লাখ ৪১ হাজার হচ্ছেন পুলিশের সদস্য। বলা হয়েছে, ৪৭ হাজারের মতো পুলিশ ভোটিং কেন্দ্রে থাকবে এবং তারা অ্যাসেসমেন্ট করে দেখেছেন যে ১৬ হাজারের মতো ভোটকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।’
ঝুঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে কীভাবে শান্তিপূর্ণভাবে ভোট নেওয়া যায় সেই বিষয়টি খতিয়ে দেখার নির্দেশনা প্রধান উপদেষ্টা দিয়েছেন তুলে ধরে প্রেস সচিব জানান, তার মধ্যে কিছু মেজর চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সেটা হচ্ছে যে, পুলিশের বডি ক্যাম রাখা এবং প্রত্যেকটা কেন্দ্র যাতে সিসিটিভির আওতায় আসে, সেটা একটা নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
গেল ১ নভেম্বর প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সেনা, নৌ ও বিমানবাহিনীর প্রধান সাক্ষাৎ করেন, যেখানে আসন্ন নির্বাচনের প্রস্তুতি এবং শান্তিপূর্ণ ভোট আয়োজনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের বিষয়ে আলোচনা হয়।
প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় সংবাদবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, নির্বাচন ঘিরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় ৯০ হাজার সেনা, আড়াই হাজার নৌবাহিনী এবং দেড় হাজার বিমানবাহিনীর সদস্য মোতায়েন থাকবে। প্রতিটি উপজেলায় এক কোম্পানি সেনা মোতায়েন থাকবে। নির্বাচন যেন নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকে সেজন্যও তিন বাহিনীকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন প্রধান উপদেষ্টা।
আমার বার্তা/জেএইচ

