হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের তনয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার পঞ্চম বারের মত এবার সরকার গঠন করেছে। গত দেড় দশকে বাংলাদেশের যে বিষ্ময়কর উন্নয়ন হয়েছে তারই ধারাবাহিকতায় বাংলাদেশকে উন্নয়নের শীর্ষে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয়ে বাংলাদেশ আওয়ামীলীগের এবারের নির্বাচনী ইসতেহারে অগ্রাধীকারের তালিকায় থাকা কার্যক্রমসমূহকে বিশেষভাবে প্রাধান্য দিয়ে এবারের বাজেটে আমাদের জাতীয় উন্নয়ন লক্ষ্যসমূহ অর্জনের পথনকশা প্রণয়নের চেষ্টা করা হয়েছে।
বাংলাদেশ স্বল্পোন্নত দেশ থেকে ইতিমধ্যে উত্তরণ হয়েছে। এ ছাড়া উচ্চ-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার অগ্রযাত্রায় এগিয়ে চলেছে বাংলাদেশ । কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি থেকে ক্রমান্বয়ে শিল্পোন্নয়ন ভিত্তিক অর্থনীতিতে রুপান্তর,ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের পর স্মার্ট বাংলাদেশে উত্তরণের উদ্দেশ্যে আধুনিক তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের জন্য কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী তৈরি এবং শিল্পখাতকে উপযোগী করে গড়ে তুলতে এবং উন্নয়নকে একটি শক্ত কাঠামোর উপর দাঁড় করানোর জন্য প্রয়োজন অব্যাহত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি। এ উদ্দেশ্যে একদিকে যেমন রাজস্ব আয় বৃদ্ধি করতে হবে অন্যদিকে দেশীয় শিল্পের প্রতিরক্ষণ,রপ্তানী পণ্যের বহুমুখীকরণে সহায়তা, দেশীয় শিল্পের প্রতিযোগীতা সক্ষমতা বৃদ্ধিকরণ ও ”মেইড ইন বাংলাদেশ” স্লোগানকে বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে কর নীতি সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখতে হবে।একই সাথে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হওয়ার জোর প্রচেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।
সুদীর্ঘ সংগ্রামমুখর এবং গৌরবোজ্জ্বল রজিনৈতিক জীবনে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন ছিল বাংলাদেশকে বিশে^ একটি মর্যাদাশীল রাষ্ট ্রহিসেবে প্রতিষ্ঠিত করা,এ দেশের মানুষকে উন্নয়নের শীর্ষবিন্দুতে পৌছে দেয়া। বিনিময়ে তিনি প্রত্যাশা করেননি কিছুই।জেলে কাটিয়েছেন ৪হাজার ৬৮২ দিন,অমিত সাহসে উপেক্ষা করেছেন মৃত্যুর সম্ভাবনা।তাঁর সব স্বপ্ন,সব পরিকল্পনার কেন্দ্রে ছিল এ দেশ, এ দেশের মানুষ।
এ দেশের সার্বভৌমত্বকে ব্যহত করতে যে ষড়যন্ত্রের জাল কুচক্রিরা বিস্তার করেছিল তার ফলে বঙ্গবন্ধু তার স্বপ্নের বাস্তবায়ন দেখে যেতে পারেননি,এ দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য তিনি যে কর্মপরিকল্পনা সাজিয়েছিলেন তা সমাপ্ত করার জন্য পর্যাপ্ত সময় পাননি। সোনার বাংলা বিনির্মানের সেই অসমাপ্ত ও মহান পরিকল্পনা আজ তারই সুযোগ্য কন্যা, আমাদের জাতির গর্ব, সফল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বলিষ্ঠ নেতৃত্বে পূরণ হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে।আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন বিবেচনায় সমগ্র বিশে^ বাংলাদেশ আজ এক অবাক বিশ^য়। গত দেড় দশকে বাংলাদেশের সামাজিক,আর্থিক,ভৌত অবকাঠামো,তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি, মানবসম্পদ,স্বাস্থ্য,বিজ্ঞানসহ সকল ক্ষেত্রে যে অভ’তপূর্ব উন্নয়ন সংঘটিত হয়েছে তা স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের ভিত রচনা করেছে।বাংলাদেশ পরিনত হয়েছে বিশে^র সকল উন্নয়নশীল দেশের জন্য রোল মডেল। ২০০৯ সাল থেকে বিগত ১৫ বছরে আমাদের উল্লিখিত অগ্রযাত্রার একটি
সংক্ষিপ্ত চিত্র নিন্মরুপ:
গত দেড় দশকে বাংলাদেশ একটি গতিময় ও দ্রুতবর্ধনশীল অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে বিশে^র দরবারে মর্যাদা লাভ করেছে।এই সময়ের মধ্যে মোট দেশজ উৎপাদন বা জিডিপির গড় প্রবৃদ্ধি ৬.৭ শতাংশের বেশি ছিল এবং ২০২২-২৩ অর্থবছর শেষে মাথাপিছু জাতীয় আয়ের পরিমান ছিল ২ লক্ষ ৭৩ হাজার ৩৬০ টাকা।মোট দেশজ উৎপাদের মানদন্ডে ২০২৩ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশ বিশে^র ৩৩তম বৃহৎ অর্থনীতি।
একই সময়ে দারিদ্রের হার ১৮.৭ শতাংশে এবং অতি দারিদ্রের হার ৫.৬ শতাংশে নেমে এসেছে।মানুষের গড় আয়ু বর্তমানে ৭২.৮ বছর,নিরাপদ খাবার পানি পাচ্ছে ৯৮.৮ শতাংশ ও সেনিটারি ল্যাট্রিন ব্যবহার করছে ৯৭.৩২ শতাংশ মানুষ,এবং শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২১ জনে মাতৃমৃত্যু হার প্রতি লাখে ১৬১ জনে নেমে এসেছে।
বিগত ১৫ বছরে বিদ্যুৎ খাতে উৎপাদন সক্ষমতা ৬ গুন বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িঁয়েছে ৩০ হাজার ২৭৭ মেগাওয়াটে।বিদ্যুৎ সুবিধাভোগীর হার ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এর ফলে বর্তমানে শতকরা ১০০ ভাগ জনগনকে বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আনা সম্ভব হয়েছে।
স্বাস্থ্য খাতেও গত দেড় দশকে অভাবনীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে।এ সময়ের মধ্যে সরকারি হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা দ্বিগুণ বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৭১হাজার,সরকারি ডাক্তারের সংখ্যা ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩০ হাজার ১৭৩ জন,সরকারি নােের্সর সংখ্যা ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪৪ হাজার ৩৫৭ জন হয়েছে।নার্সিং কলেজ এন্ড ইনস্টিটিউটের সংখ্যা ৩১টি থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ৯৯টিতে দাঁড়িয়েছে এবং কমিউনিটি ক্লিনিক নির্মাণ করা হয়েছে ১৪ হাজার ৩১১টি।কমিউনিটি ক্লিনিক ও ইউনিয়ন স্বাস্থ্যকেন্দ্র হতে বিনামূল্যে ২৭ প্রকার ঔষধ প্রদান করা হচ্ছে।
শিক্ষা খাতেও আমাদের সাফল্য ঈর্ষনীয়।বিগত ২০০৬ সালে সাক্ষরতার হার ছিল ৪৫ শতাংশ,যা ২০২৩ সালে ৭৬.৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।প্রাথমীক শিক্ষায় মেয়েদের অংশগ্রহণ ছিল ৫৪ শতাংশ,যা বর্তমানে ৯৮.২৫ শতাংশ।কারিগরি শিক্ষায় ভর্তির হার ২০০৬ সালে ছিল ০.৮ শতাংশ,২০২৩ সালে তা ২২ গুণ বেড়ে ১৭.৮৮শতাংশ হয়েছে।
দানাদার শস্যের মোট উৎপাদন ১ কোটি ৮০ লক্ষ মেট্রিক টন হতে ৪ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৪ কোটি ৯২ লক্ষ ১৬ হাজার মেট্রিক টন,মোট মৎস উৎপাদন ২১.৩০ লক্ষ মেট্রিক টন হতে ২.৫ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫৩.১৪ লক্ষ মেট্রিক টন,গবাদি পশুর সংখ্যা ৪ কোটি ২৩ লক্ষ ১ হাজার হতে প্রায় ২ গুণ বৃদ্ধিপেয়ে ৭ কোটি ৯৮ লক্ষ ৭৮ হাজার,পোল্ট্রির সংখ্যা ১৮ কোটি ৬ লক্ষ ২২ হাজার হতে প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ কোটি ৭৯ লক্ষ ১৯ হাজার হয়েছে।
যোগাযোগ অবকাঠামো খাতে জেলা, আঞ্চলিক ও জাতীয় মহাসড়কের পরিমাণ ১২ হাজার ১৮ কিলোমিটার থেকে প্রায় ৩ গুণ বৃদ্ধি করে ৩২ হাজার ৬৭৮ কিলোমিটারে এবং গ্রমীন সড়ক ৩ হাজার ১৩৩ কিলোমিটার হতে প্রায় ৭৬ গুণ বাড়িয়ে ২ লক্ষ ৩৭ হাজার ৪৪৬ কিলোমিটারে উন্নীত হয়েছে। মোট রেলপথ ২ হজার ৩৫৬ কিলোমিটার থেকে দেড় গুণ বৃদ্ধি পেয়ে হয়েছে ৩ হাজার ৪৮৬ কিলোমিটার। ২০০৬ হতে ২০২৩ সময়ের মধ্যে মোট জনগোষ্ঠীর ইন্টারনেট ব্যবহার ০.২৩ শতাংশ হতে ৩৪২ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৭৮.৫৫শতাংশে উন্নীত হয়েছে।এ সময়ের মধ্যে সক্রিয় মোবাইল ফোন সিম সংখ্যা এক কোটি ৯০ লক্ষ হতে প্রায় ১০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ১৮ কোটি ৮৬ লক্ষ ৪০ হাজার,ডিজিটাল সেবা সংখ্যা(সরকারি সংখ্যা কর্তৃক )৮টি হতে ৪০০ গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৩হাজার ২০০টি,ওয়ান স্টপ সেন্টারের সংখ্যা ২াট হতে বৃদ্ধি পেয়ে ৮ হাজার ৯২৮টি,সরকারি ওয়েবসাইটের সংখ্যা মাত্র ৯৮টি হতে ৫৩৩গুণ বৃদ্ধি পেয়ে ৫২ হাজার ২০০টির অধিক হয়েছে।
২০০৬ সালে আইসিটি পণ্য/সেবা রপ্তানির পরিমাণ ছিল ২১ মিলিয়ন ডলার,যা ২০২৩ সালে এসে ১.৯ বিলিয়ন ডলারে পৌছেছে।আইটি ফ্রি-ল্যান্সারের সংখ্যা ২০০ জন হতে বৃদ্ধি পেয়ে বর্তমানে ৬ লক্ষ ৮০ হাজার জনে উন্নীত হয়েছে।ফ্রি-ল্যান্সারের সংখ্যা বিবেচনায় সারা বিশে^ বাংলাদেশ ২য় স্থানে রয়েছে।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯৭৪ সালে জাতিসংঘের ২৯তম সাধারণ পরিষদে বলেছিলেন-“আমরা এমন একটি বিশে^র দিকে তাকিয়ে আছি,মানবতা যেখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে বিস্ময়কর অগ্রগতির যুগে দুর্দান্ত সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম।পৃথিবীর সকল সম্পদ ও প্রযুক্তিগত জ্ঞানের সুষম বন্টনের মাধ্যমে,এমন কল্যানের দ্বার উন্মোচিত হবে যেখানে প্রতিটি মানুষের সুখী ও সম্মানজনক জীবনের নূন্যতম নিশ্চয়তা থাকবে।”জাতির পিতার এ দর্শন হৃদয়ে ধারণ করে এবং প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্নের স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে এখন থেকেই সুচিন্তিত কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়ন হচ্ছে।বিশ^ব্যাপি প্রযুক্তি উন্নয়নের দুর্বার গতির সাথে তাল মিলিয়ে এ দেশের মানুষ যেন উন্নয়নের সর্বোচ্চ শিখরে আরোহন করতে পারে সে লক্ষ্য অর্জনে কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে।
বঙ্গবন্ধু একটি আধুনিক ও প্রযুক্তি-নির্ভর দেশ বিনির্মানের লক্ষ্যে বিজ্ঞান,তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়েছিলেন।স্বল্পতম সময়ের মধ্যেই তিনি আর্থ-রিসোর্স টেকনোলজি স্যাটেলাইট প্রোগ্রাম বাস্তবায়ন, বেতবুনিয়া উপগ্রহ-ভ’-কেন্দ্র স্থাপন,আর্ন্তজাতিক টেলিযোগাযোগ ইউনিয়ন(আইটিইউ)এর সদস্যপদ লাভ, ইউনিভার্সাল পোষ্টাল ইউনিয়ন (ইউপি ইউ) এর সদস্য পদ লাভ,টেলিফোন শিল্প সংস্থা লিমিটেড ( টেশিস) ও বাংলাদেশ ক্যাবল শিল্প সংস্থা প্রতিষঠা,দেশেই প্রযুক্তি পন্য উৎপাদনের নির্দেশ প্রদান, বাংলাদেশ শিল্প ও গবেষণা কাউন্সিল প্রতিষ্ঠাসহ অসংখ্য দূরদর্শী উদ্যোগ গ্রহণ করেছিলেন।
প্রযুক্তি-নির্ভর উন্নত,সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্নকে এগিয়ে নিতে তাঁর সুযোগ্য উত্তরসূরী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২০০৮ সালে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দেন এবং তা বাস্তবায়নে রূপকল্প ২০২১ তথা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০ -২০২১ প্রনয়ন করা হয়। এ পরিকল্পনা সুচারুরূপে বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের লক্ষ্য ইতোমধ্যে অর্জন হয়েছে। “স্মার্ট বাংরাদেশ: উন্নয়ন দৃশ্যমান,বাড়বে এবার কর্মস্থান ” এ দর্শনকে কেন্দ্র করে ২০২৪ সালে পঞ্চম বারের মত প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করেছে। আওয়ামী লীগের বিগত মেয়াদসমূহে ডিজিটাল বাংলাদেশের যে শক্ত ভিত রচিত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য স্মার্ট,সমৃদ্ধ একটি দেশ গড়া এখন সরকারের প্রধান লক্ষ্য।
চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের প্রেক্ষাপটে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার মতো যুগান্তকারী বিভিন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিনির্মিত হবে স্মার্ট বাংলাদেশ,যার চারটি ভিত্তি হবে স্মার্ট নাগরিক, স্মার্ট অর্থনীতি,স্মার্র্ট সরকার এবং স্মার্ট সমাজব্যবস্থা। ‘স্মার্ট বাংলাদেশে ’মাথাপিছু আয় হবে কমপক্ষে ১২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার ; দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকবে ৩ শতাংশের কম মানুষ আর চরম দারিদ্র্য নেমে আসবে শূন্যের কোঠায়; মূল্যস্ফীতি সীমিত থাকবে ৪-৫শতাংশের মধ্যে; বাজেট ঘাটতি থাকবে জিডিপির ৫ শতাংশের নিচে; রাজস্ব-জিডিপি অনুপাত হবে ২০ শতাংশের উপরে;বিনিয়োগ উন্নীত হবে জিডিপির ৪০ শতাংশে। শতভাগ ডিজিটাল অর্থনীতি আর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক স্বাক্ষরতা অর্জিত হবে। সকলের দোরগোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌছে যাবে।স্বয়ংক্রিয় যোগাযোগ ব্যবস্থা,টেকসই নগরায়নসহ নাগরিকদের প্রয়োজনীয় সকল সেবা থাকবে হাতের নাগালে।তৈরি হবে পেপারলেস ও ক্যাশলেস সোসাইটি।আর এ সব কিছুর পেছনে মূল লক্ষ্য হবে সমতা ও ন্যায়ভিত্তিক একটি সুখী সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলা।
বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত বুদ্ধিদীপ্ত,সৃজনশীল এবং পরিশ্রমী। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী প্রযুক্তির উপযুক্ত ব্যবহারের মাধ্যমে এ সম্ভাবনাময় জনগোষ্ঠীর উদ্ভাবনী ক্ষমতা ও স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে সুচিন্তিতভাবে স্বল্প,মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী লক্ষ্যমাত্রা এবং কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ণ করা হচ্ছে।
চলতি বছরের জানুয়ারী মাসে অনুষ্ঠিত জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জয়ের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগ টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করেছে। আওয়ামীলীগের এবারের নিবাচনী ইশতেহারে মোট ১১টি বিষয়ে বিশেষ অগ্রাধীকার দেয়া হয়েছে। যার মধ্যে রয়েছে- দ্রব্যমূল্য সকলের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার জন্য সর্বাঅ¥ক প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়া;কর্মোপযোগী শিক্ষাও যুবকদের কর্মসংস্থান নিশ্চিত করা; আধূনিক প্রযুক্তিনির্ভও স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা;লাভজনক কৃষির লক্ষ্যে সমন্বিত কৃষি ব্যবস্থা, যান্ত্রিকীকরণ ও প্রক্র্রিয়াজাতকরণে বিনিয়োগ বৃদ্ধি; দৃশ্যমান অবকাঠামোর সুবিধা নিয়ে এবং বিনিয়োগ বৃদ্ধি করে শিল্পের প্রসার ঘটানো ; ব্যাংকসহ আর্থিক খাতে দক্ষতাও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা;নিম্ন আয়ের মানুষদের স্বাস্থ্যসেবা সুলভ করা;সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় সকলকে যুক্ত করা; আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কার্যকারীতাও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা; সাম্প্রদায়িকতা এবং সকল ধরনের সন্ত্রাসও জঙ্গিবাদ রোধ করা এবং সর্বস্তরে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সুরক্ষা ও চর্চার প্রসার ঘটানো।
এ সকল অগ্রধীকার হবে আমাদের এবারের বাজেটের সম্পদ সঞ্চালনার প্রধান ভিত্তি।২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত,সমৃদ্ধ, ও স্মার্ট দেশে রুপান্তরিত করতে যে সকল কার্যক্রমকে বিশেষভাবে প্র্রাধান্য দেয়া হয়েছে তা নিন্মরুপ :
অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা রক্ষা, বিজ্ঞান, শিক্ষা,বৈজ্ঞানিক গবেষণা ও উদ্ভাবণ সহায়ক শিক্ষা পরিবেশ নিশ্চিতকরণ। কৃষি খাতে প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান এবং খাদ্য নিরপিত্তা নিশ্চিত করণ।মৌলিক স্বাস্থ্যসেবা উন্নত ও সম্প্রসারিতকরণ। তরুণদের প্রশিক্ষণ ও আত্মকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিতকরণ।গম্ভব্য সকল সেবা ডিজিটালাইজ করাসহ সর্ব¯তরে প্রযুক্তির ব্যবহার।ভৌত অবকাঠামোর উন্নয়ন, সাামুদ্রিক সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার, আর্থিক খাতের শৃঙ্খলা নিশ্চিতকরণ, ২০৩১ সালের মধ্যে অতি দারিদ্র্য নির্মূলকরণ এবং ২০৪১ সাল নাগাদ সাধারণ দারদ্র্যের হার তিন শতাংশে নামিয়ে আনা। শিল্প স্থাপন ও বিনিয়োগে সহায়ক পরিবেশ নিশ্চিতকরন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় পদক্ষেপ গ্রহণ, জনকল্যানমুখী,জবাবদিহিতামূলক,দক্ষও স্মার্ট প্রশাসন গড়ে তোলা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি অব্যাহত রাখা।
এ দেশের মানুষ আমাদের সকল গৌরবোজ্জল অর্জনের প্রকৃত দাবীদার।এ জনশক্তিকে কাজে লাগিয়ে আজ দুর্দমনীয় গতিতে ছুটে চলেছে প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী এবং বলিষ্ঠ নেতৃত্বে ইতোমধ্যে সকল প্রয়োজনীয় শর্ত পূরণ করে বাংলাদেশ ২০২৬ সালে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে উত্তরণ নিশ্চিত হয়েছে। এখন সামনে আরো এগিয়ে যাবার পালা। উন্নত, সমৃদ্ধ, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানে আওয়ামীলীগের এ বছরের নির্বাচনী ইশতেহারে যে অঙ্গীকার করা হয়েছে, সেগুলো বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কর্মক্ষম সবার জন্য উপযুক্ত কর্মসং¯থান, কৃষির উন্নয়ন ,বিনিয়োগ ও শিল্পের প্রসার,ুউপযুক্ত স্বাস্থ্য ও শিক্ষার অধিকার ইত্যাদি নিশ্চিত করার পাশাপাশি মানুষের জীবন মানের সুরক্ষা প্রদান করা।
২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত ও সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ গঠনের লক্ষ্যে সমগ্র রাজস্ব প্রশাসনের সক্ষমতা ও দক্ষতা বৃদ্ধির নানাবিধ সংস্কার কার্যক্রম চলমান রয়েছে।আধুনিক বিশে^র চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় সক্ষম করার লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের অধীন সকল কর্মকর্তা-কর্মচারীকে বিভিন্ন পর্যায়ে যুগোপযোগী প্রশিক্ষণ প্রদানসহ করদাতাবান্ধব সংস্কৃতি এবং যথাযথ ও ন্যায্য শুল্ক-কর আদায়ের মানসিকতা তৈরির মাধ্যমে প্রস্তুত করা হচ্ছে।দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে অর্থনৈতিক সম্প্রসারণ ও গতিশীল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অব্যাহত রাখার স্বার্থে জনগনের সকল পর্যায়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সেবার মানের উৎকর্ষ সাধন এবং শুল্ক-করের আওতা বৃদ্ধিও লক্ষ্যে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ সমগ্র রাজস্ব প্রশাসনের সম্প্রসারণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।যুযোপযোগী শুল্ক-করনীতি,অনলাইনভিত্তিক দক্ষ শুল্ক কর ব্যবস্থাপনা এবং সকল পর্যায়ে সরকারি-বেসরকারি সংস্থা,ব্যবসায়ী ও ব্যবসায়ী সংগঠন,ও অন্যান্য স্টেকহোন্ডারদের সহযোগীতায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের প্রাক্কলিত বাজেট লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে।
লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক, কলামিস্ট, কবি।
আমার বার্তা/কমল চৌধুরী/এমই