জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ দিয়েছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। প্রতিবছর যুক্তরাষ্ট্রের নিউইয়ূর্কে জাতিসংঘের অধিবেশন বসে। সদস্যদেশগুলোর অংশগ্রহণে অধিবেশনের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু হন জাতিসংঘের মহাসচিব ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। সদস্য দেশ হিসেবে বাংলাদেশ পেছনেই পড়ে থাকে। রেওয়াজ অনুযায়ী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী নির্ধারিত সময়ে ভাষণ দেন। অত:পর কিছু নেতার সঙ্গে সাইডলাইনে বৈঠক করেন। জাতিসংঘে গত ৫০ বছর ধরে এটাই চলে আসছে। কিন্তু এভার জাতিসংঘের ৭৯তম অধিবেশনে পাল্টে গেছে দৃশ্যপট। আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ব্যাক্তিত্ব নোবেল বিজয়ী ড. মুহম্মদ ইউনূস বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে অধিবেশনে যোগদান করেছেন। ক্ষুদ্র ঋণের জনক ড. ইউনূসের আন্তর্জাতিক ইমেজে পাল্টে গেছে জাতিসংঘের অধিবেশনের দৃশ্যপট। যুক্তরাষ্ট্র থেকে শুরু করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অধিবেশনে অংশ নেয়া রাষ্ট্রপ্রধান, সরকার প্রধানদের সবার দৃষ্টি ড. ইউনূসের দিকে ছিল। একমাত্র ভারত ছাড়া অন্যান্য দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যাক্তিরা উৎসুক দৃষ্টিতে ড. ইউনূসের দিকে থাকিয়ে থাকছেন। কেউ ছবি তুলছেন, কেউ কাছে এসে করমর্দন করছেন। ইউনূসের সঙ্গে কথা বলতে পেরেই যেন অনেক দেশের প্রতিনিধিরা নিজেদের ধন্য মনে করছেন। এছাড়াও বিশ্বব্যাংক, আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ), জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কমিশনের প্রধানের সঙ্গে বৈঠক ও ক্লিনটন ফাউণ্ডেশনের প্রধান পৃষ্টপোষক সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের অনুষ্ঠানে বক্তব্য দিয়ে সবার দৃষ্টি আকর্ষন করেন। তিনি বাংলাদেশের ছাত্র আন্দোলনের চিত্র তুলে ধরে আগামীর বাংলাদেশের পথরেখা উপস্থাপন করেন।
এ ছাড়াও জাতিসংঘের অধিবেশনের সময় মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে ড. মুহম্মদ ইউনূসের বিশেষ বৈঠক আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক কখনও ভালো, কখনও টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে গেছে। গত এক দশকে বিভিন্ন ইস্যুতে সেই সম্পর্ক একেবারে তলানীতে গিয়ে ঠেকেছে। মূলত আওয়ামী লীগ সরকারের দুঃশাসন, গণতান্ত্রিক চর্চার অভাব, মানবাধিকার লঙ্ঘন, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় চরম ব্যর্থতা, যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে হাসিনা ও তার মন্ত্রীদের তুচ্ছতাচ্ছিল্য উক্তি ও কটাক্ষ, ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতের উপর হামলা থেকে শুরু করে নানাভাবে অপদস্ত করার চেষ্টা দেশটিকে বাংলাদেশ থেকে একটু একটু করে দূরে নিয়ে গেছে। সেই দূরত্ব ঘোচাতে এবং সম্পর্কে পুনরায় গতি ফেরাতে কাজ করে যাচ্ছে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। বিশেষ করে এ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেলজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় দেশ দুটির মধ্যে সম্পর্কের নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। এছাড়াও ২৬ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদর দপ্তরে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস। এই বৈঠকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেছেন। এ সমর্থন ব্যক্ত করে বলেন, জাতিসংঘ বাংলাদেশের সংস্কারে সহায়তা করতে প্রস্তুত। কূটনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের অধিবেশনের ফাঁকে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের সঙ্গে কোনো দেশের শীর্ষনেতার দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের তেমন নজির নেই। যেটি হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে। জাতিসংঘ সম্মেলনে যে ‘ভবিষ্যতের জন্য চুক্তি’ ও ‘ভবিষ্যৎ প্রজন্মের ঘোষণাপত্র’ সর্বসম্মতভাবে গৃহীত হয়েছে তা অ্যাজেন্ডা ২০৩০ পরবর্তী বৈশ্বিক উন্নয়ন কর্মপন্থা নির্ধারনে বিশেষ সহায়ক হবে বলে ড. ইউনূস মনে করেন।
সাথে সাথে তিনি এও বিশ্বাস করেন যে, এ সম্মেলনের অর্জন বৈশ্বিক সমৃদ্ধির জন্য বিশ্বের সবার অভিপ্রায় ও সহযোগিতা কাঠামো প্রণয়নে দিকনির্দেশক হিসেবে কাজ করবে। ড. ইউনূস বলেন, 'জুলাই-আগস্টে বাংলাদেশে যে যুগান্তকারী পরিবর্তন সংঘটিত হয়েছে, তার প্রেক্ষিতেই আজ আমি বিশ্বসম্প্রদায়ের এ মহান সংসদে উপস্থিত হতে পেরেছি'। আমাদের গণমানুষের, বিশেষ করে তরুণ সমাজের অফুরান শক্তি আমাদের বিদ্যমান রাষ্ট্র কাঠামো ও প্রতিষ্ঠানগুলোর আমূল রূপান্তরের এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। বাংলাদেশের ছাত্র ও যুব সমাজের আন্দোলন প্রথমদিকে মূলত ছিল বৈষম্য বিরোধী আন্দোলন। পর্যায়ক্রমে তা গণআন্দোলনে রূপ নেয়। এরপর সারা পৃথিবী অবাক বিস্ময়ে দেখেছে কীভাবে সমগ্র বাংলাদেশের মানুষ একনায়কতন্ত্র, নিপীড়ন, বৈষম্য, অবিচার ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে রাজপথ এবং সামাজিক- যোগাযোগ মাধ্যমে দৃঢ়ভাবে রুখে দাঁড়িয়েছিল। বাংলাদেশের ছাত্রজনতা তাঁদের অদম্য সংকল্প ও প্রত্যয়ের মাধ্যমে একটি স্বৈরাচারী ও অগণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা থেকে আমাদের মুক্তি এনে দিয়েছে। তাদের এই সম্মিলিত সংকল্পের মধ্যেই আমাদের দেশের ভবিষ্যত নিহিত, যা এ দেশটিকে বিশ্ব সম্প্রদায়ের মাঝে একটি দায়িত্বশীল জাতির মর্যাদায় উন্নীত করবে বলে তিনি আশ্বস্ত করেছেন। বাংলাদেশের এই ‘মুনসুন অভ্যুত্থান’ আগামী দিনগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে মানুষকে মুক্তি ও ন্যায়বিচারের পক্ষে দাঁড়াতে প্রেরণা যুগিয়ে যাবে। আমাদের মুক্তি ও গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষাকে বাস্তবে রূপ দিতে আমি তাই বিশ্ব সম্প্রদায়কে আমাদের নতুন বাংলাদেশের সাথে নতুনভাবে সম্পৃক্ত হওয়ার উদাত্ত আহ্বান জানিয়েছেন ড.মুহাম্মদ ইউনূস।এককথায়, কীভাবে প্রত্যেকটি পর্যায়ে ন্যায়, নীতি ও নৈতিকতা অদৃশ্য হয়ে গিয়েছিল। এরকমই এক অবস্থায় দেশকে পুনর্গঠন এবং জনগণের কাঙ্ক্ষিত রাষ্ট্রব্যবস্থা ফিরিয়ে দেয়ার জন্য অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর দায়িত্ব প্রদান করা হয়েছে।
অতীতের ভুলগুলোকে সংশোধন করে একটি প্রতিযোগিতামূলক ও শক্তিশালী অর্থনীতি এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজব্যবস্থা গড়ে তোলাই এই মুহূর্তে বাংলাদেশের মূল লক্ষ্য।মানুষের আস্থা ও আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে এবং নির্মম অতীত যেন আর ফিরে না আসে, সেজন্য অন্তর্বর্তী সরকার কিছু সুনির্দিষ্ট খাতে সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে। সেই লক্ষ্যে দেশের বিদ্যমান নির্বাচন ব্যবস্থা, সংবিধান, বিচার ব্যবস্থা, জনপ্রশাসন, আইন-শৃঙ্খলা ব্যবস্থা সংস্কারে স্বাধীন কমিশন গঠন করা হয়েছে। সংবাদপত্র ও গণমাধ্যমের সংস্কারের জন্যও পৃথক কমিশনসহ আরো কয়েকটি বিষয়ে কমিশন গঠন প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। বর্তমান পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে, সকল রাজনৈতিক দল এখন স্বাধীনভাবে তাঁদের মতামত প্রকাশ করতে পারছে। যেসব ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান রাষ্ট্রীয় কাজ ও সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় সম্পৃক্ত, তাঁদের প্রত্যেকের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করাই হবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার। ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন,বাংলাদেশ যে সব আন্তর্জাতিক, আঞ্চলিক এবং দ্বিপাক্ষিক চুক্তির পক্ষভুক্ত, সেগুলো প্রতিপালনে তার সরকার বদ্ধপরিকর। জাতিসংঘসহ বহুপাক্ষিক বিশ্বকাঠামোতে বাংলাদেশের সক্রিয় অংশগ্রহণ ও অবদান অব্যাহত থাকবে। পারস্পরিক শ্রদ্ধাবোধ, মর্যাদা ও স্বার্থ সংরক্ষণের ভিত্তিতে বাংলাদেশ বিশ্বের সকল রাষ্ট্রের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে আগ্রহী। এমনকি জাতিসংঘে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে অবদানকারী চতুর্থ বৃহত্তম রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত ৪৩টি দেশে ৬৩টি মিশনে শান্তিরক্ষী প্রেরণ করেছে। বসনিয়া থেকে শুরু করে কঙ্গো পর্যন্ত বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে এ সব মিশনে দায়িত্ব পালনকালে, ১৬৮ জন বাংলাদেশী শান্তিরক্ষী নিজেদের জীবন বিসর্জন দিয়েছেন। আমরা আশা করি, যেকোন অবস্থায় নানা প্রতিকূলতা সত্ত্বেও জাতিসংঘের ভবিষ্যত শান্তিরক্ষী কার্যক্রমগুলোতে বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যরা একইভাবে অবদান রাখার সুযোগ পাবেন।
নোবেল বিজয়ী ইউনূস আরো বলেন, পৃথিবীতে বৈশ্বিক অগ্রাধিকারগুলোকে সঠিকভাবে নির্ণয় করতে হবে। জলবায়ু পরিবর্তন আমাদের সকলের অস্তিত্বের প্রতি হুমকিস্বরূপ। এই গ্রীষ্মে সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গকারী তাপদাহ আমাদের জলবায়ুজনিত পরিবর্তনের কথা স্পষ্টভাবে স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। আমাদের যা প্রয়োজন, তা হলো জলবায়ু সম্পর্কিত ন্যায়বিচার, যাতে করে দায়িত্বজ্ঞানহীন সিদ্ধান্ত, উদাসীন আচরণ কিংবা এর মাধ্যমে সাধিত ক্ষতির বিষয়ে যারা সংশ্লিষ্ট তাদের দায়বদ্ধ করা যায় জলবায়ু- পরিবর্তনজনিত দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব গুলো অপূরণীয় ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াচ্ছে। আমরা জীববৈচিত্র্য হারাচ্ছি, প্যাথোজেনের পরিবর্তনের ফলে নতুন রোগ বাড়ছে, কৃষি ক্ষেত্রে চাপ বাড়ছে, ক্রমহ্রাসমান পানিসম্পদ ঝুঁকিতে ফেলছে আমাদের বাসযোগ্যতাকে, সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি এবং লবণাক্ততা আমাদের বাস্তুতন্ত্রের ক্ষতি করছে প্রতিনিয়ত। ঘূর্ণিঝড়ের সংখ্যা ও মাত্রা বৃদ্ধির কারণে যে ক্ষতি হচ্ছে, তাকে উপেক্ষা করার সুযোগ নেই। জলবায়ু সংকটের মোকাবেলা এবং বৈশ্বিক অর্থনীতি সুসংহতকরণে আমাদের যুগপৎভাবে কাজ করতে হবে। বিশ্ব সম্প্রদায় এখন কার্বনমুক্ত পৃথিবী গড়ে তুলতে মনোযোগী হচ্ছে। বিশ্বের অধিকাংশ মানুষকে এ ধরণের পরিবর্তনের সুফলভোগী করতে হলে, নেট-জিরো পৃথিবীর লক্ষ্য সমানভাবে পূরণে বাংলাদেশের মত দেশগুলোকে সাথে নিতে হবে। তা না হলে, 'পারস্পরিক দায়িত্ববোধের' মাধ্যমে ‘পারস্পরিক সমৃদ্ধি’ অর্জনে আমাদের সার্বজনীন অঙ্গীকার পূরণে আমরা পিছিয়ে পড়ব। বহুমুখী সংকটে জর্জরিত বর্তমান বিশ্বে, যুদ্ধ এবং সংঘাতের ফলে ব্যাপকভিত্তিতে মানুষের অধিকার খর্ব হচ্ছে। বিশ্ববাসীর উদ্বেগ এবং নিন্দা সত্ত্বেও গাজায় গণহত্যা থামছে না।ফিলিস্তিনের বিদ্যমান বাস্তবতা কেবল আরব কিংবা মুসলমানদের জন্যই উদ্বেগজনক নয়, বরং তা সমগ্র মানবজাতির জন্যই উদ্বেগের।
একজন মানুষ হিসেবে প্রত্যেক ফিলিস্তিনির জীবন অমূল্য। ফিলিস্তিনের জনগণের বিরুদ্ধে যে মানবতা বিরোধী অপরাধ হচ্ছে, তার জন্য সংশ্লিষ্ট সকলকে দায়বদ্ধ করতে হবে। ফিলিস্তিনের জনগণের উপর চলমান নৃশংসতা, বিশেষত নারী এবং শিশুদের সাথে প্রতিনিয়ত যে নিষ্ঠুরতা বিশ্ব দেখছে, তা থেকে নিস্তারের জন্য বাংলাদেশ অনতিবিলম্বে সম্পূর্ণ যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানিয়েছেন ইউনূস। গত আড়াই বছর ধরে ইউক্রেনে চলমান যুদ্ধে বহু মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। এই যুদ্ধের প্রভাব সর্বব্যাপী। এমনকি বাংলাদেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব অনুভূত হচ্ছে। আমরা তাই উভয়পক্ষকেই সংলাপে বসে বিরোধ নিরসনের মাধ্যমে যুদ্ধের অবসান ঘটানোর আহ্বানও জানিয়েছেন তিনি। বাংলাদেশ গত সাত বছর যাবৎ মায়ানমার হতে আগত ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গাদের মানবিক কারণে আশ্রয় দিয়ে আসছে। এর ফলে, বাংলাদেশ বিশাল সামাজিক-অর্থনৈতিক-পরিবেশগত ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে। তাই রোহিঙ্গাদের টেকসই প্রত্যাবাসন নিশ্চিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের পর্যাপ্ত সহায়তা অব্যাহত রাখার কথাও তুলে ধরেছেন ড.মুহাম্মদ ইউনূস। এই বিশ্বসভায় বিশ্ব নেতৃবৃন্দের উপস্থিতিতে, প্রতিধ্বনিত হচ্ছে শান্তি, নিরাপত্তা ও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা এবং সম্পদের সুষম বন্টনের মাধ্যমে সকলের অন্তর্ভুক্তি নিশ্চিত করার আহ্বান। সদস্য রাষ্ট্র হিসেবে আমাদের প্রত্যেককে আজকে গভীরভাবে অনুধাবন করতে হবে কীভাবে আমরা নারী, পুরুষ, সকলের জন্য আজ ও আগামীর দিনগুলোতে উদ্যোক্তা হবার সমান সুযোগ সৃষ্টি এবং তাঁদের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত করতে পারি।তাই আসুন, আমরা জাতীয় বা আন্তর্জাতিক ভাবে যেসব প্রতিশ্রুতি দিয়েছি, তা বাস্তবায়ন করি; এবং অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে সামাজিক ব্যবসার ধারণা প্রতিষ্ঠিত করে সকল প্রকার বৈষম্য ও অসমতার অবসানে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করি। বাংলাদেশের তরুণরা প্রমাণ করেছে যে, মানুষের স্বাধীনতা, মর্যাদা ও অধিকার সমুন্নত রাখার অভিপ্রায় কোনো উচ্চাভিলাষ নয়। বরং, এটা সকলের নিশ্চিত প্রাপ্য। সুতরাং বলাই যায়, নোবেল বিজয়ী ড.মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে জাতিসংঘ সহ বিশ্ব দরবারে এক অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে।
লেখক: গবেষক ও কলামিস্ট, যুক্তরাজ্য।
আমার বার্তা/রায়হান আহমেদ তপাদার/এমই