ই-পেপার শনিবার, ১০ মে ২০২৫, ২৭ বৈশাখ ১৪৩২

বাংলাদেশে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষ দিশেহারা

কমল চৌধুরী:
২০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:৩৫
আপডেট  : ২০ অক্টোবর ২০২৪, ১৫:৫৬

গত ৫ অক্টোবর শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগ সরকারের পতনের পর ড. মোহাম্মদ ইউনুসের নেতৃত্বে ২১ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতায় আসে। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণে এ সরকার ও হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে। খুচরা বাজারে একশত টাকা কেজির নীচে কোন সব্জি নেই। ইলিশ মাছের কেজি এ দুর্গা পূজার সময় বড় সাইজ ২৭০০ টাকা পর্যন্ত হয়েছে। সাধারণ মানুষের হাহাকারে স্পষ্ট হয় যে সাম্প্রতিক সময়ে দ্রব্যমূল্যের ব্যাপক ঊর্ধ্বগতি পতিত আওয়ামী লীগের জন্য কতোটা চ্যালেঞ্জ তৈরি করেছিল।

উল্লেখ্য যে,আওয়ামীলীগ ২০০৯ সালের শুরুতে ক্ষমতাসীন হবার পর থেকে পরপর তিন মেয়াদে গত ১৫ বছর সরকার পরিচালনা করেছিল। বাংলাদেশের ইতিহাসে এতো দীর্ঘ সময় একটানা আর কোনো দলের ক্ষমতায় থাকার নজির নেই। প্রতিবার নির্বাচনি ইশতেহারে জিনিসপত্রের দাম মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখার অঙ্গীকার করা হলেও এই দেড় দশকের শাসনামলে বেশিরভাগ পণ্যের দাম বেড়েছে কয়েকগুণ।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো বা বিবিএসের তথ্য পর্যালোচনা ও বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) নিজেদের উদ্যোগে সংগ্রহ করা তথ্যের ভিত্তিতে করা সাম্প্রতিক এক জরিপ থেকে জানা যায়, খাদ্য মূল্যস্ফীতি চলতি বছর রেকর্ড ১৫ শতাংশে পৌঁছেছে। অন্যদিকে, বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ-সিপিডির তথ্যমতে, দেশে গত পাঁচ বছরে শুধু ভোগ্যপণ্যের দাম ৩১০ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, এতদিন ধরে দলটির নেতারা দাম বাড়ার পেছনে করোনা পরবর্তী পরিস্থিতি এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, বিশ্ববাজারে পণ্যের দামে ওঠানামা, ডলার সঙ্কটের যুক্তি দাঁড় করেছিল।কিন্তু দেখা গিয়েছে দাম আগের মতোই বাড়তি। অন্যদিকে যেসব পণ্য বিদেশ থেকে আমদানি করা হয় সেগুলোর দাম বিশ্ব বাজারে কমলেও বাংলাদেশের বাজারে তার প্রতিফলন নেই। সিপিডির গবেষণা বলছে চাল, চিনি, সয়াবিন তেল, গরুর মাংসের দাম বিশ্ব বাজারের তুলনায় বাংলাদেশে বেশি।

এমন অবস্থায় পতিত আওয়ামীলীগ সরকার বাজারের লাগাম টানতে বিভিন্ন সময়ে ভোগ্যপণ্যের দাম বেঁধে দিয়ে, অভিযান চালিয়ে, জরিমানা করে, বিদেশ থেকে পণ্য আমদানিসহ নানা উদ্যোগ নিলেও পরিস্থিতির কোন পরিবর্তন হয়নি। অর্থনীতি ও বাজার- এ দুই জায়গায়ই তৈরি হয়েছে অসাধু ব্যবসায়ীদের শক্তিশালী সিন্ডিকেট। যার কারণে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তারা ঝরে পড়ছে এবং পণ্যের মূল্য বেড়ে বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। মানুষ বাজার করতে গিয়ে এখন কাঁদছে।

এমনিতেই ১৯৫৩ সালে প্রণীত মূল্য নিয়ন্ত্রণ ও মজুদদারি-বিরোধী আইন রয়েছে। ২০০৯ সালে প্রণীত হয় ভোগ্যপণ্য সংরক্ষণ আইন। সিন্ডিকেটের লাগাম টেনে ধরতে ২০১২ সালে প্রতিযোগিতা আইন প্রণয়ন এবং ২০১৬ সালে বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন গঠন করা হয়। ২০১৮ সালে কৃষিপণ্য বাজারজাতকরণ আইন প্রণীত হয়। কিন্তু দুর্ভাগ্যের বিষয়, প্রচলিত আইনগুলো প্রয়োগে যে বিচারিক ব্যবস্থা দরকার সেগুলো অনেক সময় কাজ করে না। এই লাগাম দাম বাড়ার পেছনে, বাজার ব্যবস্থাপনায় সরকারের নিয়ন্ত্রণের অভাব এবং বাজারে চাহিদা ও যোগান সম্পর্কিত তথ্যে স্বচ্ছতার অভাব থাকাকে দুষছেন অর্থনীতিবিদ দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য। তার মতে, পতিত আওয়ামীলীগ সরকার সমস্যাগুলো সনাক্ত করলেও এগুলো সমাধানে যে পূর্ণাঙ্গ অর্থনৈতিক কৌশল প্রণয়নের প্রয়োজন সে বিষয়ে কিছু করেনি। তারা কোন কাঠামোগত সংস্কারে যায়নি।

ভোক্তা অধিকার সংগঠন ক্যাব নিত্য-পণ্যের দামের যে তালিকা দিয়েছে সেখান থেকে গত ১৫ বছরের হিসেবে দেখা যায় নিত্য পণ্যের দাম বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ছিল ঊর্ধ্বমূখী। ক্যাবের তালিকা, ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) বাজার দরের তালিকা থেকে মোটা চালসহ এমন নয়টি পণ্যের দাম ধাপে ধাপে কিভাবে এই পর্যায়ে এসেছে । অন্যদিকে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) মতে, ২০১৯ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে পাঁচ বছর ব্যবধানে মোটা চালের দাম বেড়েছে ৩০ শতাংশ।এখন মোটা চাল ৬২ টাকা।

থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনামের চাইতে বাংলাদেশে চালের দাম বেশি। এদিকে ক্যাবের তালিকা অনুযায়ী, প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম ২০০৯ সালে ছিল কেজি-প্রতি গড়ে ১১১ টাকা। যা বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে জাত ভেদে ১২০ থেকে ১৫০ টাকার মধ্যে। তবে গত বছরের শেষে আলুর দাম রেকর্ড পরিমাণ বেড়ে কেজি প্রতি ৬৫ থেকে ৭০ টাকায় দাঁড়ায়। তবে বর্তমানে আলুর দাম প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৭০ টাকার মধ্যে রয়েছে। গত বছর মুরগীর ডিমের দাম রেকর্ড বেড়ে প্রতি হালি ৬০ টাকা। টিসিবির হিসাবে বর্তমানে এই দামই বহাল আছে।

বর্তমানে প্রতি কেজি গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকায়। এমন দামের কারণে স্বল্প আয়ের মানুষেরা শুধুমাত্র কোরবানির ঈদে গরুর মাংস খাওয়ার আশা করেন। ব্রয়লার মুরগীর দাম সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যায়। প্রতি কেজি দাম বেড়ে দাঁড়ায় ২৩৫ থেকে ২৪০ টাকায়।

সিপিডির তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে ব্রয়লার মুরগীর দাম ৬০ শতাংশ বেড়েছে। সিপিডির তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে খোলা সয়াবিন তেলের দাম ৮৪ শতাংশ বেড়ে প্রতি লিটার বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা। ২০১৯ সালের শেষ দিকে পেঁয়াজের দাম বিগত সব রেকর্ড ভেঙে ২৫০ টাকা কেজিতে দাঁড়ায়। বর্তমানে প্রতি কেজি পেঁয়াজ ১২৫ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সিপিডির তথ্য বলছে, গত পাঁচ বছরে পেঁয়াজের দাম ১৬৪ শতাংশ বেড়েছে। অন্যদিকে রশুনের দাম বেড়েছে ৩১০ শতাংশ, যা সর্বোচ্চ। এছাড়া শুকনো মরিচ ১০৫ শতাংশ,আদা ২০৫ শতাংশ এবং গুড়ো হলুদের দাম ৭০ শতাংশ বেড়েছে। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশন (বিএসএফআইসি) সরকারি মিলের চিনির সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য ১৬০ টাকা নির্ধারণ করে। যা দেশের বাজারে চিনির দামে রেকর্ড। বিশ্ববাজারে গড়ে পণ্যটি বিক্রি হয়েছে প্রতি কেজি ৫০ টাকায়। ভোগ্য পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে না পারা সরকারের জন্য বড় ধরনের ব্যর্থতা বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদ।

সিপিডির গবেষণা বলছে, ২০১৯ সাল থেকে খাদ্য মূল্যস্ফীতি অস্বাভাবিক ছিল। মানুষের আয় কম হলেও খাবারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি ব্যয় করতে হচ্ছে। মি. ভট্টাচার্যের মতে, খাদ্য মূল্যস্ফীতির কারণে মধ্যবিত্ত নিম্নবিত্ত মানুষ তাদের আহারের পরিমাণ কমিয়ে এনেছে। এ কারণে তারা আগে যে পরিমাণ পুষ্টি পেত, শিক্ষা-স্বাস্থ্যে খরচ করতো, সেটা আর পারছে না। সরকার কম দামে মানুষকে খাদ্য সহায়তা দিতে যেসব সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নিয়েছে তা চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। সেখানেও দুর্নীতি রয়েছে বলে তিনি জানান।আবার যেসব পণ্যের দাম খুব একটা বাড়ছে না, সেগুলোর ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে পণ্যের পরিমাণ কমিয়ে দেয়া হচ্ছে।

লেখক: নির্বাহী সম্পাদক, দৈনিক সকালের সময়, ঢাকা।

আমার বার্তা/এমই

হজে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক সুস্হ্যতায় কী করবেন

প্রতিবছরের মতো এবারও হাজার হাজার ধর্মপ্রাণ মুসল্লি পবিত্র হজ পালনের উদ্দেশ্যে দেশ ছেড়ে যাচ্ছেন। হজযাত্রীদের

অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনির বিস্ময়কর প্রত্যাবর্তন

অস্ট্রেলিয়ার নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেয়ে আবারো প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হলেন মধ্য বামপন্থী লেবার পার্টির অ্যান্থনি আলবানিজ।

অনিয়ন্ত্রিত ঋণ ও খেলাপি সংস্কৃতি : ব্যাংকিং খাতের আত্মহননের ছক

ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে বলা হয় অর্থনীতির হৃদযন্ত্র। এই হৃদযন্ত্র যদি রক্ত পাম্প না করে, রাষ্ট্র নামের

নৈতিক সাহসের অভাবেই রাষ্ট্রব্যর্থতা, নিজেকে বদলানোই জাতির মুক্তি

আমি কখন ভালো হবো?—এই প্রশ্নটি যতটা ব্যক্তিগত মনে হয়, বাস্তবে তা একটি জাতির আত্মার আর্তনাদ।
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দ্রুত সিদ্ধান্ত না এলে আবারও ‘মার্চ টু ঢাকা’ : নাহিদ ইসলাম

সারাদেশে গণজমায়েতের ডাক দিলেন হাসনাত আবদুল্লাহ

হজে গিয়ে শারীরিক ও মানসিক সুস্হ্যতায় কী করবেন

রপ্তানিমুখী খাতে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দাবি

আ.লীগকে পুনর্বাসন-ঐক্যে ফাটল ধরানোর চেষ্টা করছে সরকার

রোটারি ক্লাব অব ঢাকা নর্থ ইস্টের রিপসা টিমের অফিসিয়াল ক্লাব ভিজিট

পঞ্চগড়ের বোদায় আ.লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য গ্রেফতার

আমতলী উপজেলায় বজ্রপাতে ১৬ দিনে মাথায় ৩ জনের মৃত্যু

সাপাহারে সরকারিভাবে বোরো ধান সংগ্রহের উদ্বোধন

মনপুরায় বিদ্যুৎ সংকট, আলোবঞ্চিত প্রায় ২০ হাজারেরও অধিক মানুষ

একটি দেশ ছাড়া ভারতের পাশে আজ কেউ নেই: পাকিস্তান

বিভিন্ন অজুহাতে সরকার নির্বাচন বিলম্বিত করতে চাইছে : ডা. জাহিদ

মানুষের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটাতে চায় সরকার: পার্বত্য উপদেষ্টা

মাদ্রাসার সহকারী শিক্ষকদের ৮ম গ্রেডে বেতন দেওয়ার দাবি

আবদুল হামিদের দেশত্যাগ প্রসঙ্গে আসিফ নজরুলের ফেসবুকে পোস্ট

ভারতীয়দের ভুয়া খবর না ছড়াতে বললেন রোহিত শর্মা

গোয়েন্দাদের যে খবরে আরব সাগরে টহল বাড়ালো ভারত

আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করছে সরকার

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে গণহত‍্যার তদন্ত প্রতিবেদন সোমবার দাখিল: তাজুল ইসলাম

আ. লীগ নিষিদ্ধে জাতীয় সংলাপের আহ্বান রাশেদ খানের