ই-পেপার বৃহস্পতিবার, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫, ৯ মাঘ ১৪৩২

একটি জাতির গল্প যেন বিন্দু থেকে মহাসাগর

রহমান মৃধা:
৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৫

একটি জাতির গল্প তখনই বিশ্বমঞ্চে পৌঁছায়, যখন সে গল্প শুধু স্থানীয় ঘটনাপ্রবাহে সীমাবদ্ধ থাকে না, বরং তা মানবজাতির বিবেক, ন্যায়ের প্রয়াস এবং ভবিষ্যৎ নির্মাণের তাগিদে গভীরভাবে প্রভাবিত হয়। বাংলাদেশের রাজনীতির নানা বাঁকবদল, ক্ষমতার অপব্যবহার এবং ব্যক্তি আক্রোশের নির্মম উদাহরণগুলোর মধ্যে লুকিয়ে আছে এক গভীর উপলব্ধি: সময়, প্রকৃতি এবং জনগণের ইচ্ছাশক্তিই চূড়ান্ত বিচারক।

আজ আমরা এমন একটি সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে দেশের জনগণ ন্যায়বিচার, স্বাধীনতা এবং প্রকৃত নেতৃত্বের দাবিতে ঐক্যবদ্ধ। এই প্রেক্ষাপটে বেগম খালেদা জিয়ার জীবনসংগ্রাম পরিণত হয়েছে অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের এক প্রতীকী বার্তায়। রাষ্ট্রীয় নিপীড়নের মুখে তার আপোষহীন অবস্থান এবং ইতিহাসের চক্রে ক্ষমতার দম্ভের পতন আমাদের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে—ন্যায়বিচারের পথ কখনো বৃথা যায় না।

সময়টা ছিল প্রায় একযুগেরও বেশি আগের। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাস তখন এক গভীর এবং তিক্ত পরিহাসের সাক্ষী। ক্ষমতার দম্ভ, প্রতিহিংসা, এবং অপব্যবহারের গল্পের ভিড়ে একজন আপোষহীন নেত্রীকে ভোগ করতে হয়েছিল কারাবাস এবং বাড়ি থেকে উচ্ছেদের মতো নির্মম পরিস্থিতিতে। অথচ ইতিহাস সব দেখেছে—একদিন সেই দম্ভের পতনও অবশ্যম্ভাবী।

বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে উঠেছিল এতিমদের ২ কোটি টাকার অভিযোগ, যেটি তার কোনো ব্যক্তিগত খরচে ব্যবহৃত হয়নি। তবুও তাকে সেই অভিযোগে বছরের পর বছর কারাগারে কাটাতে হয়েছিল। এমনকি তার ছেলেদের বেড়ে ওঠার স্থান, তার আবাসস্থল ক্যান্টনমেন্টের বাড়িটি ভেঙে ফেলা হয়েছিল, যা ইতিহাসের এক নির্মম পরিহাস।

অন্যদিকে, সেই সময়ের ক্ষমতাধররা গণভবনকে সাজিয়ে তুলেছিল নিজেদের প্রাসাদ হিসেবে। কিন্তু প্রকৃতির বিচার অদ্ভুতভাবে কাজ করে। আজ, যারা টুস করে নিপীড়নের হুমকি দিয়েছিল, তারাই ইতিহাসের বুকে দুঃখজনক পরিণতির উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। একদিন যারা ক্ষমতার দম্ভে বলেছিল, “টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়া হবে,” তারাই আজ এই দেশে ফিরে আসার সাহসটুকু খুঁজে পাচ্ছে না। একেই বলে প্রকৃতির বিচার—যেখানে মানুষ, সময় এবং প্রকৃতি চূড়ান্ত ফয়সালা দেয়।

এবারের ছাত্র এবং জনতার গণআন্দোলন শুধু বাংলাদেশের জন্য নয়, বিশ্বমানবতার জন্য এক উজ্জ্বল বার্তা। এটি ন্যায়ের পক্ষে জনগণের ইচ্ছাশক্তির প্রমাণ। বর্তমান প্রজন্ম আজ বুঝে গেছে, অন্যায় কখনো চিরস্থায়ী হতে পারে না। সময়ের সঙ্গে সবকিছুর পরিবর্তন হয়, এবং পরিবর্তনের এই চক্রেই প্রতিষ্ঠিত হয় মানবতার জয়।

ড. মুহাম্মদ ইউনূস—বাংলাদেশের এক অনন্য গর্ব, যিনি নোবেল বিজয়ী হয়ে শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দিয়েছেন। তার কর্মকাণ্ড লাখো মানুষের জীবন বদলে দিয়েছে। হয়তো তার মতো একজনের হাত ধরেই শুরু হতে পারে এক নতুন বিপ্লব, যেখানে মানবতা এবং ন্যায়ের পতাকা সগর্বে উত্তোলিত হবে। যেন একটি বিন্দু থেকে আবারও সৃষ্টি হবে সিন্দু নদীর মতো বিস্ময়কর এক নতুন বাংলাদেশ।

একটি বিন্দু থেকে সিন্দু নদীর উৎপত্তির মতো—এই বার্তা প্রবাহিত হবে, ছুঁয়ে যাবে পদ্মা, মেঘনা এবং যমুনার মতো জলরাশি। মহাসাগরের গভীরে এই বার্তা হয়ে উঠবে নতুন পৃথিবীর পথপ্রদর্শক।

তবুও স্বীকার করতে হয়, প্রকৃতির বিচার অপরিহার্য। আজ সেই নেত্রী যাকে এক যুগের বেশি সময় কারাগারে বন্ধী করে রাখা হয়েছিল, তিনি আজ সসম্মানে ফিরে এসেছেন, আর একসময়ে তার বিরুদ্ধে অন্যায় কারী ব্যক্তিরা নিজেদের ক্ষমতা হারিয়ে দেশান্তরী হয়েছেন। ইতিহাস আমাদের শিখিয়েছে, ক্ষমতা চিরস্থায়ী নয়। দিনশেষে প্রকৃতি এবং জনগণের ইচ্ছাশক্তিই চূড়ান্ত।

বাংলাদেশের এই গল্প শুধু একটি নেত্রীর সম্মান পুনরুদ্ধারের নয়। এটি সমগ্র জনগণের স্বাধিকার, ন্যায়বিচার, এবং মানবিক ঐক্যের জয়গান। এই গল্পের বার্তা একদিন পৃথিবীজুড়ে ছড়িয়ে পড়বে।

আজকের গণআন্দোলন কেবল ব্যক্তিগত নয়, এটি জাতীয়। ছাত্র ও জনতার সম্মিলিত প্রচেষ্টা দেশের প্রতিটি নাগরিকের হৃদয়ে আশা জাগিয়েছে। এটি বিশ্বকে একটি নতুন বার্তা দিয়েছে—ন্যায়বিচার এবং অধিকার আদায়ের লড়াই কখনোই বৃথা হতে পারে না।

আমার চোখে বিশ্ব পরিস্থিতি এবং বাংলাদেশের সংগ্রাম: একটি মানবিক দৃষ্টিকোণ

বর্তমানে, পৃথিবী একটি অস্থির এবং বিপজ্জনক সময়ে প্রবেশ করছে। বিশ্বের ক্ষমতাশালী দেশগুলো পরস্পরের বিরুদ্ধে এক ভয়ঙ্কর হিংসাত্মক পরিবেশ তৈরি করেছে, এবং এটা মনে হচ্ছে যে যেকোনো মুহূর্তে একটি নতুন বিশ্বযুদ্ধের সূচনা হতে পারে। বিশেষ করে, যুদ্ধের ক্ষেত্রে নিউক্লিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের সম্ভাবনা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা মানবতার অস্তিত্বের জন্য একটি অপ্রতিরোধ্য হুমকি।

এমন পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের সংগ্রাম কেবল একটি দেশীয় বিষয় নয়, এটি বিশ্বের জন্য একটি দৃষ্টান্ত। যখন বিশ্বের বড় শক্তিগুলো নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতে পারমাণবিক শক্তি এবং সামরিক সংঘর্ষে প্রলুব্ধ হচ্ছে, তখন বাংলাদেশ শান্তি, ন্যায়বিচার এবং মানুষের মৌলিক অধিকার রক্ষার পক্ষে সংগ্রাম করে দেখাচ্ছে, যে, সশস্ত্র সংঘর্ষের পরিবর্তে, মানবিক মূল্যবোধের ওপর দাঁড়িয়ে একটি নতুন পৃথিবী নির্মাণ করা সম্ভব।

এটি একটি বিশ্বব্যাপী শান্তির বার্তা, যা জাতিগত, আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক দ্বন্দ্ব দূর করতে সহায়ক হতে পারে। বাংলাদেশের এই সংগ্রাম আজ একটি বিশাল মানবিক বার্তায় রূপান্তরিত হতে পারে। এটি শুধু একটি নেত্রীর সম্মান পুনঃপ্রতিষ্ঠার লড়াই নয়, এটি জনগণের অধিকার, ন্যায়বিচার এবং সম্মিলিত প্রচেষ্টার জয়গান। পদ্মা-মেঘনা-যমুনার মতো এই বার্তা বিস্তৃত হতে পারে সারা বিশ্বে।

আজকের এই গল্প নতুন প্রজন্মের জন্য অনুপ্রেরণা হয়ে থাকবে। এটি দেখাবে, অন্যায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে কখনো ভয় পাওয়া উচিত নয়। সময়, প্রকৃতি এবং জনগণ—এদের সম্মিলিত শক্তির কাছে সব অন্যায় একদিন পরাজিত হয়।

অতএব, বাংলাদেশের সংগ্রাম কেবল দেশীয় নয়, বরং এটি একটি বৈশ্বিক সংগ্রাম, যা শান্তি, ন্যায়ের এবং মানবতার জন্য বিশ্বকে উদ্বুদ্ধ করার আহ্বান জানায়।

আশা করি আমার এই গল্প হবে একটি নতুন পৃথিবীর আলোকবর্তিকা—শান্তি, ন্যায়বিচার এবং মানবিকতার ভিত্তিতে গড়ে উঠুক একটি দুর্নীতিমুক্ত পৃথিবী। আসুন, আমরা সবাই মিলে গড়ে তুলি সেই পৃথিবী, সেই দেশ, যার নাম হবে দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ।

লেখক: সাবেক পরিচালক, ফাইজার, সুইডেন।

আমার বার্তা/জেএইচ

যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ত্যাগ: বাংলাদেশের জন্য সংকেত এবং ভবিষ্যৎ বিশ্লেষণ

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্টের শপথ নেওয়ার পর যুক্তরাষ্ট্রকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)

ফ্যাসিস্ট আমলে মিডিয়া ট্রায়ালে হেনস্থা ও অপরাধী প্রমাণের অপচেষ্টা

একজন অভিযুক্ত ব্যক্তি খুন, ধর্ষণ, ডাকাতি, অর্থ আত্মসাৎ, মাদক পাচার, যৌতুক দাবি, এসিড নিক্ষেপ বা

প্রবাসী রেমিট্যান্সযোদ্ধাদের জন্য পেনশন ও গ্র্যাচুইটি সময়ের দাবি

দেশের চাকরিজীবীরা নানা সরকারি সুযোগ-সুবিধা পান—নির্ধারিত বাসাবাড়ি, গাড়ি ও অবসরের পর পেনশন, গ্র্যাচুইটি ইত্যাদি। কিন্তু

ক্ষমতার অপব্যবহার সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

ক্ষমতার অপব্যবহার একটি গুরুতর বিষয়, যা ব্যক্তি, সমাজ এবং জাতির জন্য ক্ষতিকর। ইসলামের দৃষ্টিতে ক্ষমতা
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

শ্রমিকদের অযৌক্তিক দাবিতে বেক্সিমকোর বন্ধ কারখানা চালু হচ্ছে না

ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনৈতিক দল ঘোষণা

বিশ্বের প্রথম উড়ন্ত বৈদ্যুতিক বাইক উন্মোচন করা হলো যুক্তরাষ্ট্রে

বিএনপি নিরপেক্ষ সরকারের নামে আরেকটি ১/১১ চাইছে: নাহিদ ইসলাম

দেশের জন্য ত্যাগ স্বীকারে প্রস্তুত থাকার আহ্বান সেনাপ্রধানের

জনগণের আস্থা অর্জনে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালন করুন: আইজিপি

নির্বাচনী এজেন্টদের প্রশিক্ষণ দিতে চায় ইউএনডিপি

সাবেক সেনা কর্মকর্তা জিয়াউল আহসানের বিরুদ্ধে দুদকের মামলা

বেক্সিমকোর অস্তিত্বহীন ১৬ প্রতিষ্ঠানের নামে ১২ হাজার কোটি টাকা ঋণ

ডিজিটাল ওয়ালেটে দেখেন ৬৪ লাখ, কিন্তু তুলতে পারেননি এক টাকাও

রংপুরের জয়যাত্রা থামিয়ে প্লে-অফের লড়াইয়ে টিকে রইল রাজশাহী

দেশের প্রতিটি ক্রান্তিলগ্নে বিএনপি হাল ধরেছে: সেলিমা রহমান

ড. ইউনূসের সঙ্গে মেটার গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স প্রেসিডেন্টের সাক্ষাৎ

টেলিভিশন চ্যানেলে বিজ্ঞাপন প্রচারের সময়সীমা নির্ধারণ চেয়ে আইনি নোটিশ

প্রধান উপদেষ্টার সফর থেকে ভালো কিছু রেজাল্ট পাবো: প্রেস সচিব

৬ মাসে রাজস্ব ঘাটতি ৫৮ হাজার কোটি টাকা

দেশের বিদ্যুৎ খাতে অতিরিক্ত ৩৬৭ কোটি টাকা দিচ্ছে বিশ্বব্যাংক

মুসলিমপ্রধান দেশের নাগরিকদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশে ফের নিষেধাজ্ঞা?

বাংলাবাজার থেকে ১০ হাজার সরকারি বইসহ আটক ২

‘কর্নেল অব দি রেজিমেন্ট’ হিসেবে অভিষিক্ত হলেন সেনাপ্রধান