ই-পেপার সোমবার, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ১৬ অগ্রহায়ণ ১৪৩২

ভূমিকম্পের পরিমাপক রিখটার স্কেল: ভূমিকম্প পরিমাপের বিজ্ঞান

মো. মোশারফ হোসাইন:
০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৪৩
আপডেট  : ০১ ডিসেম্বর ২০২৫, ০৯:৫৩

ভূমিকম্প মানবসভ্যতার ইতিহাসে এক অনিবার্য ও ভয়ংকর প্রাকৃতিক ঘটনা, যা পৃথিবীর ভূত্বকের অভ্যন্তরের শক্তি সঞ্চয় ও আকস্মিক মুক্তির ফলে সৃষ্ট হয়। পৃথিবীর জন্মলগ্ন থেকেই এই শক্তির খেলা চলছে এবং মানবজাতি এর কারণ, কার্যকারণ, মাত্রা ও প্রভাব বুঝতে চেষ্টা করে এসেছে যুগের পর যুগ। কিন্তু ভূমিকম্পের পরিমাণ বা তীব্রতা নির্ণয় করার মতো কোনো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি দীর্ঘদিন ছিল না। মানুষ শুধু ধ্বংস দেখে বুঝতে পারত কম-বেশি কতটা শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। এর পরিবর্তন ঘটলো বিংশ শতাব্দীতে, যখন মার্কিন ভূকম্পবিদ চার্লস ফ্রান্সিস রিখটার পৃথিবীর ভূকম্প পরিমাপের জন্য এক বিপ্লবাত্মক স্কেল তৈরি করলেন। তাঁর নামেই পরিচিত হলো “রিখটার স্কেল” একটি লগারিদমিক মাত্রা-পরিমাপক পদ্ধতি, যা ভূমিকম্পের সুনির্দিষ্ট মান নির্ণয়ে বিজ্ঞানের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হয়ে ওঠে। ভূকম্পবিদ্যার ইতিহাসে রিখটার স্কেলের আবির্ভাব শুধু প্রযুক্তিগত উন্নয়নই নয়, বরং পৃথিবীকে বোঝার এক নতুন পথ খুলে দিয়েছিল।

রিখটার স্কেলের নামকরণের পেছনে আছে ব্যক্তিগত গবেষণা, অধ্যবসায় এবং তৎকালীন বিজ্ঞানচর্চার রূপান্তর। ১৯৩৫ সালে চার্লস এফ. রিখটার এবং তাঁর সহকর্মী বেনো গুটেনবার্গ, ক্যালিফোর্নিয়া ইন্সটিটিউট অফ টেকনোলজিতে কাজ করার সময় ভূমিকম্পের মাত্রা পরিমাপের একটি যৌথ পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। রিখটার ছিলেন একজন পদার্থবিদ—তাঁর বিশেষ আগ্রহ ছিল ভূকম্পের তরঙ্গ ও তার গাণিতিক বৈশিষ্ট্য নিয়ে। গুটেনবার্গ ছিলেন অভিজ্ঞ ভূতাত্ত্বিক গবেষক। তারা দু’জনে মিলে এমন একটি পদ্ধতি তৈরি করতে চেয়েছিলেন যা পুরো ক্যালিফোর্নিয়া অঞ্চলের ভূমিকম্পকে তুলনামূলকভাবে এক মানদণ্ডে আনা যায়। এই কারণেই প্রথমদিকে স্কেলটির নাম ছিল “লোকাল ম্যাগনিটিউড স্কেল” (ML), কিন্তু পরবর্তীতে এটি রিখটার স্কেল নামেই পরিচিতি পায় এবং বিশ্বব্যাপী গ্রহণযোগ্যতা অর্জন করে। যদিও আধুনিক বৈজ্ঞানিক সমাজ এখন মোমেন্ট ম্যাগনিটিউড স্কেল ব্যবহার করে, তবুও রিখটার স্কেল ভূমিকম্প পরিমাপের ইতিহাসে আজও সবচেয়ে জনপ্রিয়, পরিচিত এবং সহজবোধ্য স্কেল। রিখটার স্কেল মূলত একটি লগারিদমিক স্কেল। অর্থাৎ, এই স্কেলে প্রতিটি ধাপ পূর্ববর্তী ধাপের চেয়ে দশ গুণ বৃদ্ধি নির্দেশ করে। উদাহরণস্বরূপ, ৪ মাত্রার একটি ভূমিকম্প ৩ মাত্রার ভূমিকম্পের তুলনায় ১০ গুণ বেশি শক্তির ভূকম্পন সৃষ্টি করে। আবার, ৫ মাত্রার ভূমিকম্প ৩ মাত্রার তুলনায় ১০০ গুণ শক্তিশালী। কিন্তু সৃষ্ট শক্তির পরিমাণ অনুযায়ী পার্থক্য আরও বেশি—প্রতিটি মাত্রা বৃদ্ধিতে শক্তির পরিমাণ প্রায় ৩২ গুণ বেড়ে যায়। এই লগারিদমিক প্রকৃতি ভূমিকম্পের ক্ষুদ্র ও বৃহৎ তীব্রতার পার্থক্য বোঝা সহজ করে তোলে। পৃথিবীর ভূত্বকে শক্তির নিঃসরণ একবারে খুব কম পরিমাণেও হতে পারে, আবার শ’ কোটি টন টিএনটি বিস্ফোরণের সমপরিমাণ শক্তিও মুক্তি দিতে পারে একটি বড় ভূমিকম্প। রিখটার স্কেল সেই বিশাল শক্তি-পার্থক্যকে সুন্দরভাবে পরিমাপযোগ্য করে তুলেছে।

এখন প্রশ্ন আসে রিখটার স্কেল কিভাবে কাজ করে? এর মূল উৎস হলো সিসমোগ্রাফ নামক যন্ত্র। সিসমোগ্রাফ হচ্ছে এমন একটি সংবেদনশীল যন্ত্র, যা পৃথিবীর ভেতর থেকে আগত ভূকম্প তরঙ্গকে নিবন্ধিত করে এবং সেটিকে গ্রাফের মতো একটি রেকর্ডে রূপ দেয়। পৃথিবীতে ভূকম্প সংঘটিত হলে তা একপ্রকার তরঙ্গ আকারে ছড়িয়ে পড়ে—এস-ওয়েভ, পি-ওয়েভ, সারফেস ওয়েভ—প্রতিটি তরঙ্গের গতি, তীব্রতা ও দোলনের ধরন ভিন্ন। সিসমোগ্রাফে সাধারণত একটি ওজনযুক্ত পেন্ডুলাম থাকে, যা স্থির অবস্থায় ঝুলে থাকে এবং পাথর বা মাটির সঙ্গে যুক্ত স্থাপনা ভূকম্পনে কেঁপে উঠলেও পেন্ডুলাম স্থির থাকে। এর ফলে মেশিনে যুক্ত সুইটি কাগজের উপর দুলে দুলে রেখা টানে। এই রেখাই সিসমোগ্রাম বা ভূকম্পন-রেকর্ড। এই রেকর্ডের তরঙ্গের উচ্চতা (amplitude) এবং উৎস থেকে সিসমোগ্রাফের দূরত্ব এই দুই উপাত্ত থেকেই রিখটার স্কেলের মান নির্ণয় করা হয়। রিখটার তাঁর স্কেল নির্ধারণ করতে নির্দিষ্ট ধরনের সিসমোগ্রাফ ব্যবহার করেছিলেন, যার নাম ছিল "উড-অ্যান্ডারসন সিসমোগ্রাফ"। এই যন্ত্র সূক্ষ্ম ভূকম্পনও শনাক্ত করতে সক্ষম ছিল এবং ক্যালিফোর্নিয়ার শিলাস্তর ও ভূসংস্থান অনুযায়ী তৈরি হওয়ায় পরীক্ষার প্রাথমিক পর্যায়ে এটি আদর্শ ছিল। রিখটার স্কেলে কোনো ভূমিকম্পের মাত্রা নির্ণয়ে দুইটি বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণ প্রথমত, সিসমোগ্রাফে চিহ্নিত তরঙ্গের সর্বোচ্চ উচ্চতা, এবং দ্বিতীয়ত, ভূমিকম্পের কেন্দ্র বা হাইপোসেন্টার থেকে সিসমোগ্রাফের অবস্থানের দূরত্ব। গবেষকরা এই তথ্যগুলো একটি নির্দিষ্ট গাণিতিক সূত্রে বসিয়ে বের করেন ভূমিকম্পের মাত্রা। এ পদ্ধতি ব্যবহারের মাধ্যমে বিশ্বের বিভিন্ন এলাকায় সংঘটিত ভূমিকম্পের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা সম্ভব হয়। তাই শুধু কোথায় কতটা ধ্বংস হয়েছে দেখে নয়, বৈজ্ঞানিকভাবে নির্ধারিত মানের ভিত্তিতে ভূমিকম্পের তীব্রতা নির্ণয় করা যায়।

রিখটার স্কেলটি পৃথিবীর বিজ্ঞানচর্চায় বিপ্লব ঘটালেও এর কিছু সীমাবদ্ধতা ছিল। যেমন, রিখটার স্কেল মূলত স্থানীয় ছোট থেকে মাঝারি ভূমিকম্প মাপার জন্য নির্মিত। বড় ভূমিকম্পে পৃথিবীর খুব গভীরে সৃষ্ট শক্তি বা টেকটোনিক প্লেটের বৃহৎ সঞ্চালন থেকে সৃষ্ট কম্পন রিখটার স্কেল সম্পূর্ণ সঠিকভাবে নির্দেশ করতে পারে না। বড় ভূমিকম্পে তরঙ্গের উচ্চতা এত বেশি হয় যে স্কেল তার রেঞ্জের বাইরে চলে যায়। এই সীমাবদ্ধতা কাটিয়ে উঠতে পরবর্তীতে মোমেন্ট ম্যাগনিটিউড স্কেল তৈরি করা হয়, যা এখন আন্তর্জাতিক মানদণ্ড হিসেবে ব্যবহৃত হয়। তবে সাধারণ মানুষ এখনও ভূমিকম্পের তীব্রতা সম্পর্কে রিখটার স্কেলই ব্যবহার করে, কারণ এটি সহজ, পরিচিত এবং গণমাধ্যমে প্রচলিত। এই স্কেল বিভিন্ন মাত্রার ভূমিকম্পকে নির্দিষ্ট শ্রেণিতে ভাগ করে বোঝাতে সাহায্য করে। ২ মাত্রার নিচের ভূমিকম্প সাধারণত মানুষ টের পায় না। এগুলোকে “মাইক্রোকোয়েক” বলা হয় এবং বছরে লাখ লাখবার ঘটে থাকে। ২ থেকে ৩ মাত্রার ভূমিকম্প সামান্য অনুভূত হলেও কোনো ক্ষতির কারণ হয় না। ৪ মাত্রার ভূমিকম্প মানুষ পরিষ্কারভাবে টের পায়, ঘরবাড়ি কেঁপে ওঠে, কিন্তু সাধারণত বড় ক্ষয়ক্ষতি হয় না। ৫ মাত্রার ভূমিকম্পে কিছুটা ক্ষতি হতে পারে; দুর্বল ভবন বা পুরোনো স্থাপনা ফাটতে পারে। ৬ মাত্রার ভূমিকম্প ধ্বংসাত্মক—বেশ কিছু ভবন ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সেতু বা রাস্তার কিছু অংশ ভেঙে পড়তে পারে। ৭ মাত্রার ভূমিকম্প অত্যন্ত ধ্বংসাত্মক, বড় শহরগুলোর ভবন ও অবকাঠামোতে বিপুল ক্ষতির সৃষ্টি করতে পারে। ৮ মাত্রার ভূমিকম্পকে বলা হয় “মেগাকোয়েক” এটি একাধিক দেশের অঞ্চল ধ্বংস করে দিতে পারে, সুনামি সৃষ্টি করতে পারে এবং ভূতাত্ত্বিক গঠনে স্থায়ী পরিবর্তন ঘটাতে পারে। আর ৯ বা তার বেশি মাত্রার ভূমিকম্প পৃথিবীর সবচেয়ে বিধ্বংসী প্রাকৃতিক ঘটনার একটি, যা ইতিহাসে অতি বিরল। ২০১১ সালের জাপানের তোহোকু ভূমিকম্প ছিল ৯.১ মাত্রার; ২০০৪ সালের ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ভূমিকম্পও ৯.১ মাত্রার ছিল, যা সুনামির জন্ম দিয়ে লাখো মানুষের প্রাণহানি ঘটায়।

রিখটার স্কেল মানবসভ্যতাকে শুধু ভূকম্প পরিমাপের প্রযুক্তি দেয়নি, বরং ভূমিকম্পের প্রকৃতি, উৎস, তরঙ্গ, শক্তি, ক্ষয়-ক্ষতি এবং প্রতিরোধ ব্যবস্থা সম্পর্কে গভীরতর জ্ঞান অর্জনের পথ খুলে দিয়েছে। পৃথিবীর ভেতরকার শক্তি নির্ণয় করা যতটা কঠিন মনে হয়, ততটাই সূক্ষ্ম এবং বিজ্ঞানের জন্য অপরিহার্য। ভূমিকম্পের শক্তি এককভাবে মাপা মানেই হচ্ছে ভবিষ্যতের নিরাপত্তা কাঠামো তৈরি করা, নগরায়ণের পরিকল্পনা নির্ধারণ করা, উচ্চ ভবন নির্মাণে উপযুক্ত মানদণ্ড প্রয়োগ করা, সেতু, টানেল ও রেলপথ নির্মাণে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। ভূমিকম্পের সুনির্দিষ্ট মাত্রা জানার ফলে ইঞ্জিনিয়াররা নির্ধারণ করতে পারেন কোন অঞ্চলে কত মাত্রার চাপ সহ্য করতে সক্ষম স্থাপনা তৈরি করতে হবে। এমনকি ভূমিকম্প-পরবর্তী উদ্ধার পরিকল্পনাও স্কেল অনুযায়ী দ্রুত সাজানো যায়। রিখটার স্কেলের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হলো এটি মানুষের চেতনায় ভূমিকম্প সম্পর্কে একটি স্পষ্ট ধারণা তৈরি করেছে। আগে মানুষ ভূমিকম্প বলতে শুধু ভয় পেত; কিন্তু কতটা বড়, কতটা ছোট, ক্ষতির সম্ভাবনা কত—এসব বিষয়ে সুনির্দিষ্ট মানদণ্ড না থাকায় সমগ্র সমাজে আতঙ্ক বেশি ছড়িয়ে পড়ত। রিখটার স্কেল সেই আতঙ্ককে নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করেছে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণের মাধ্যমে। সংবাদ মাধ্যমে যখন বলা হয় কোনো দেশে ৬.৪ মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে, তখন সাধারণ মানুষেরও ধারণা থাকে যে এটি মাঝারি থেকে শক্তিশালী ভূমিকম্প, এবং ক্ষতির সম্ভাবনা যথেষ্ট। ফলে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণ সহজ হয়। তবে রিখটার স্কেলের জনপ্রিয়তার পাশাপাশি বিজ্ঞানীরা এর সীমাবদ্ধতা দূর করতে নতুন গবেষণা চালিয়ে গেছেন। আজকের যুগে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি, জিপিএস, ভূতাত্ত্বিক সেন্সর এবং ডিজিটাল সিসমোগ্রাফের মাধ্যমে ভূমিকম্প পরিমাপ আরও নিখুঁতভাবে করা যায়। তবু রিখটার স্কেল সবসময় ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে—ভূকম্পবিদ্যার প্রথম পূর্ণাঙ্গ এবং মানসম্মত পরিমাপ পদ্ধতি হিসেবে। এটি শুধু একটি প্রযুক্তি নয়, বরং পৃথিবীর গভীরে লুকিয়ে থাকা অস্থিরতাকে পরিমাপ করার মানবজাতির প্রথম সফল চেষ্টা।

সিসমোগ্রাফ থেকে তথ্য সংগ্রহের প্রক্রিয়া প্রযুক্তিগতভাবে যত উন্নত হয়েছে, ভূমিকম্প সম্পর্কে জ্ঞান ততই সমৃদ্ধ হয়েছে। একটি সিসমোগ্রাফ কেন্দ্র থেকে কত দূরে অবস্থান করছে, কখন প্রথম ভূকম্প তরঙ্গ পৌঁছেছে, কোন তরঙ্গ কত উচ্চতায় লিপিবদ্ধ হয়েছে—এসব মিলিয়ে সুনির্দিষ্ট বিশ্লেষণ করা হয়। আধুনিক ডিজিটাল সিসমোগ্রাফে প্রতিটি তথ্য স্বয়ংক্রিয়ভাবে কম্পিউটার ডাটাবেজে চলে যায় এবং মুহূর্তের মধ্যে বিজ্ঞানীরা পুরো ভূমিকম্পের প্রকৃতি জানাতে পারেন। কোথায় ফাটল ধরেছে, কোন টেকটোনিক প্লেট কতটা সরে গেছে, ভবিষ্যতে আবার সরে যাওয়ার সম্ভাবনা আছে কি না—এসব তথ্যও আধুনিক বিশ্লেষকরা রিখটার স্কেলের মূল নীতিকে ভিত্তি করে সংগ্রহ করেন। তাই রিখটার স্কেল কেবল পরিমাপক নয়; এটি ভূকম্পবিদ্যার ভিত্তি। ভূমিকম্প পরিমাপের ক্ষেত্রে রিখটার স্কেলের আরেকটি সৌন্দর্য হলো এর সহজতা। মাত্রাগুলোর পার্থক্য মানুষের দ্রুত বুঝতে সুবিধা হয়। যেমন—৩ মাত্রার ভূমিকম্প মানে শুধু হালকা কাঁপুনি; ৬ মাত্রা মানেই ধ্বংসাত্মক সম্ভাবনা; ৮ মাত্রা মানেই মহাবিপর্যয়। এই সরলতা পৃথিবীর সাধারণ মানুষকে ভূমিকম্প সম্পর্কে সচেতন করেছে। শিশুরা স্কুলে ভূমিকম্পের মাত্রা শিখে, সংবাদকর্মীরা রিপোর্টে ব্যবহার করেন, জরুরি বিভাগ ঝুঁকি মূল্যায়নে ব্যবহার করে। এভাবে রিখটার স্কেল শুধু ভূকম্পবিদদের হাতিয়ার নয়, বরং সবার জ্ঞানভাণ্ডারের অংশ হয়ে উঠেছে। রিখটার স্কেলের ঐতিহাসিক গুরুত্ব আজও কমেনি। বিজ্ঞানীরা ভবিষ্যতে আরও উন্নত স্কেল তৈরি করলেও রিখটার স্কেল অগ্রদূত হিসেবে থেকে গেছে। টেকটোনিক প্লেট তত্ত্ব, প্লেটের গতি, সাবডাকশন জোন, ফ্র্যাকচার, ফল্ট লাইন—সবকিছু বিশ্লেষণের পথ রিখটার স্কেলই প্রশস্ত করেছে। ভূমিকম্প গবেষণায় শত বছর আগেও যে ধোঁয়াশা ছিল, রিখটার স্কেল তা দূর করে এনেছে সংখ্যাভিত্তিক, নির্ভরযোগ্য ও তুলনাযোগ্য একটি পদ্ধতি। যেকোনো বিজ্ঞান তখনই যথার্থ যখন তা মানুষের বোঝার মতো হয়—রিখটার স্কেল সেই কাজটিই করেছে।

মানুষের জীবন সর্বদাই ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকে, বিশেষ করে যেসব অঞ্চল টেকটোনিক প্লেটের সংযোগস্থলে অবস্থিত। বাংলাদেশও ভূমিকম্পপ্রবণ একটি দেশ। তাই ভূমিকম্প সম্পর্কে বিজ্ঞানসম্মত বোঝাপড়া যত বেশি হবে, ততই নিরাপত্তা নিশ্চিত করা সহজ হবে। ভবন নির্মাণে রিখটার স্কেলভিত্তিক কোড অনুসরণ করা, বিপর্যয় মোকাবিলায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা, সতর্কতামূলক সিস্টেম তৈরি—All are grounded in the measurement systems pioneered by Richter. রিখটার স্কেল আমাদের শিখিয়েছে, প্রাকৃতিক শক্তিকে বুঝতে হলে তার পরিমাপ করতে হয়; চোখে দেখা যায় না এমন শক্তিরও সংখ্যা থাকে; পৃথিবীর নীরব গভীরতল থেকেও এমন কম্পন ওঠে যা পুরো পৃথিবী বদলে দিতে পারে। সেই অদৃশ্য শক্তিকে দৃশ্যমান করেছে একটি স্কেল—যার পেছনে ছিল এক বিজ্ঞানীর নিরবচ্ছিন্ন গবেষণা, এক যুগান্তকারী আবিষ্কার এবং পৃথিবীর বিজ্ঞানচর্চার নতুন দিগন্ত। রিখটার স্কেল তাই শুধু একটি সংখ্যা নয়, বরং মানবজাতির পৃথিবীকে বোঝার সংগ্রামের এক চিরন্তন স্মারক।

লেখক : মো. মোশারফ হোসাইন উপজেলা নির্বাহী অফিসার, পরশুরাম, ফেনী।

আমার বার্তা/এমই

সমন্বিত চিন্তায় এফবিসিসিআই: শিল্প, বাণিজ্য ও প্রযুক্তির সেতুবন্ধন

বর্তমানে বাংলাদেশের অর্থনীতি এক ক্রান্তিলগ্নে অবস্থান করছে, যখন ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ (LDC) থেকে উত্তরণ

ভূমিকম্প: একটি প্রাকৃতিক দুর্যোগের বৈজ্ঞানিক, ঐতিহাসিক ও সমসাময়িক বিশ্লেষণ

বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্য অনুযায়ী, সকাল ১০টা ৩৮ মিনিট ২৬ সেকেন্ডে সারাদেশে একটি ভূমিকম্প অনুভূত

ক্লাউড, স্টোরেজ ও ইন্টারনেট গেটওয়ের স্বনির্ভরতা অর্জনে বাংলাদেশের করণীয়

একবিংশ শতাব্দীর ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি অবকাঠামো (ICT Infrastructure) এখন একটি দেশের সার্বভৌমত্ব,

ইন্টেলেকচুয়াল প্রপার্টি (IP) ও উদ্ভাবনী অর্থনীতি: বাংলাদেশের পরবর্তী চালিকাশক্তি

আজকের বিশ্বে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং দীর্ঘমেয়াদী সাফল্যের মূল চালিকাশক্তি আর কেবল সস্তা শ্রম বা কাঁচামাল
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

হাসিনা-রেহানা-টিউলিপের রায়, আদালত প্রাঙ্গণে বিজিবি মোতায়েন

খালেদা জিয়ার অবস্থা স্থিতিশীল, কিছুটা ভালোর দিকে: তথ্য উপদেষ্টা

বিশ্ব এইডস দিবস: দেশে এইচআইভি সংক্রমণ ঊর্ধ্বমুখী

লিটারে ২ টাকা করে বাড়ল জ্বালানি তেলের দাম

ঘূর্ণিঝড় ‘ডিটওয়াহ’র তাণ্ডবে শ্রীলংকায় মৃতের সংখ্যা ২০০ ছাড়াল

১৩ ডিগ্রির ঘরেই তেঁতুলিয়ার তাপমাত্রা, শীতের দাপট বাড়ছে

ভূমিকম্পের পরিমাপক রিখটার স্কেল: ভূমিকম্প পরিমাপের বিজ্ঞান

ভয়াবহ ঝড়ের কবলে এশিয়া: চার দেশে মৃত ৯ শতাধিক, নিখোঁজ বহু

প্লট বরাদ্দে জালিয়াতি : হাসিনা-রেহানা ও টিউলিপের রায় আজ

ভুয়া ঋণে ৯ কোটি আত্মসাৎ: আনসার-ভিডিপি ব্যাংক ম্যানেজার কারাগারে

বিডিআর হত্যাকাণ্ডের উদ্দেশ্য ছিল বাহিনীকে দুর্বল ও ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করা

১ ডিসেম্বর ঘটে যাওয়া নানান ঘটনা

সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ জারি, পৃথক হলো বিচার বিভাগ

বিডিআর হত্যাকাণ্ডে জড়িত আ.লীগ, মূল সমন্বয়কারী তাপস: কমিশন

ইমরান খান বেঁচে আছেন, দেশ ছাড়তে চাপ দিচ্ছে সরকার: পিটিআই

চলতি সপ্তাহে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক জোটের আত্মপ্রকাশ!

রাজনৈতিক দলে যোগদান ও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ইচ্ছা নেই: ফাওজুল কবির

স্বৈরাচারী শাসন ব্যবস্থা রুখতে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন জরুরি

রেমিট্যান্সে উল্লম্ফন: ২৯ দিনেই এসেছে ৩২ হাজার কোটি টাকা

ডিআরইউর সভাপতি আবু সালেহ আকন, সম্পাদক মাইনুল হাসান