হজরত আইয়ুব আ. তৎকালীন সময়ের সম্ভ্রান্ত, ধনী ও সম্পদশালী ব্যক্তিদের একজন ছিলেন। গৃহপালিত চতুষ্পদ প্রাণী, দাস-দাসী, বিস্তৃর্ণ এলাকার জমির মালিকানা তার হস্তগত ছিল। ধনাঢ্য নবী আইয়ুব আ.-এর অনেক সন্তান-সন্তুতি ছিল।
আল্লাহ তায়ালা তাঁর সন্তান-সন্তুতি, ধন-সম্পদ ছিনিয়ে নিয়ে তাঁকে পরীক্ষায় ফেলেন। তিনি এক ধরনের শারীরিক রোগে আক্রান্ত হন।
এই রোগের সময় তাঁর শরীরের ওপরে বিভিন্ন কীট-পতঙ্গ চলাফেরা করতো। রোগের কারণে তার শরীর থেকে মাংস খসে পড়ে এমনকি তাঁর শরীরে হাড় ও শিরা ছাড়া আর কিছুই ছিল না। তাঁর স্ত্রী তার শরীরের নিচে ছাই বিছিয়ে রাখতেন।
পুরো শরীর আক্রান্ত হওয়ার পর শুধু জিহ্বা ও হৃৎপিণ্ড অক্ষত ছিল। এর মাধ্যমে তিনি আল্লাহ তায়ালার জিকির করতেন। এমন কঠিন পরিস্থিতেও আল্লাহর প্রশংসা করতেন।
রোগ বাড়তে থাকলে তিনি মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতে থাকেন। তিনি আল্লাহর কাছে যে দোয়াটি করেছিলেন তাহলো—
اَنِّیۡ مَسَّنِیَ الضُّرُّ وَ اَنۡتَ اَرۡحَمُ الرّٰحِمِیۡنَ
উচ্চারণ: ‘আন্নী মাসসানিয়াদ দুররু ওয়াআনতা আরহামার রা-হিমীন।’ অর্থ: ‘আমি তো দুঃখ-কষ্টে পড়েছি, আর আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু!’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৩)
দোয়ার ধরন অত্যন্ত নমনীয় ও মার্জিত; যথাযথ আদব ও শিষ্টাচারপূর্ণ। নেই অভিযোগ, নেই অনুযোগ। ‘কষ্ট আমাকে স্পর্শ করেছে’—কঠিন বিপদেও মধুময় আবেদন। আবেদনের ভেতর ভাব আছে, মর্মস্পর্শী আবেগ আছে, আছে কষ্টের কথাও। তবু কোনো আবদার নেই, চাওয়া-পাওয়া নেই। শুধু এ কথা বলে থেমে যাচ্ছেন : ‘আপনি তো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।’
আল্লাহর বিরুদ্ধে কোনো নালিশ নেই, কোনো জিনিসের দাবি নেই। তাতেই খুশি হয়ে মহান আল্লাহ তাঁর দোয়া কবুল করেন। তাঁর দোয়া কবুল করে আল্লাহ বলেন, ‘আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম। আর তার যত দুঃখ-কষ্ট ছিল তা দূর করে দিলাম এবং তার পরিবার-পরিজন তাকে দিয়ে দিলাম। তাদের সঙ্গে তাদের মতো আরো দিলাম আমার পক্ষ থেকে রহমত এবং ইবাদতকারীদের জন্য উপদেশস্বরূপ।’ (সূরা আম্বিয়া, আয়াত : ৮৪)