মোহামেডান-আবাহনী ম্যাচের দুই চির প্রতিদ্বন্দ্বীর জৌলুস, আকর্ষণ, উত্তেজনা আর প্রতিদ্বন্দ্বীতার লড়াই বাংলাদেশের টক অফ দ্য কান্ট্রিই হয়ে থাকতো। আজ সে সবের কিছুই নেই। তারপরও সাদা কালো আর আকাশী হলুদ দ্বৈরথে ওসব কিছুই নেই। নাজমুল হোসেন শান্তর অবাহনী আর তাওহিদ হৃদয়ের মোহামেডান ম্যাচ দেখতে শেরে বাংলায় আজ শনিবার ১০০ দর্শকও হাজির নেই। গ্যালারি খাঁ খাঁ করছে।
কিন্তু এই খালি মাঠে আকর্ষণ কমে যাওয়া মোহামেডান-আবাহনী দ্বৈরথকে স্মরণীয় করে রাখলেন এক তরুণ ওপেনার; আনিসুল ইসলাম ইমন। আবাহনীর বিপক্ষে দারুণ এক সেঞ্চুরি উপহার দিয়েছেন নারায়নগঞ্জের এই ২৫ পার করা যুবা।
১১৮ বলে আনিসুলের করা ১১৪ রানের ওপর ভর করে ২৬৪ রান সংগ্রহ করে মোহামেডান। টস হেরে ব্যাট করতে নেমে ৪৮.২ ওভারেই অলআউট হয়ে যায় তারা।
পুরো লিগে প্রায় বসেই ছিলেন। না থেকে উপায় কি! মোহামেডান ওপেনিং স্লটটাতো সাজানো ছিল দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল আর রনি তালুকদারে গড়া। ৭ নম্বর ম্যাচে তামিম হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হওয়ার পর ওপেনিং জুটিতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য হয়েছে মোহামেডান। সেই খেলায় তামিমের জায়গায় ওপেন করতে নেমে সেঞ্চুরি হাঁকিয়েছিলেন মেহেদি হাসান মিরাজ।
এরপরের ২ খেলায়ও সুযোগ পাননি আনিসুল ইসলাম ইমন। ঠিক আগের ম্যাচে অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে রনি তালুকদারের সাথে ওপেন করতে নেমে রান আউট হয়ে গিয়েছিলেন ২ রানে। আজ শনিবার যেন ধনুর্ভঙ্গ পণ করেই নেমেছিলেন ইমন, ‘আমাকে কিছু একটা করে দেখাতেই হবে, সেই সংকল্পই যেন ছিল। যার প্রমাণ অনবদ্য এই সেঞ্চুরি।’
মিরপুরে হোম অফ ক্রিকেট শেরে বাংলা স্টেডিয়ামে ইমনের সেঞ্চুরির খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়তেই একটি প্রশ্ন সবার মনে উঁকি দিচ্ছে। কে এই ইমন? কি তার পরিচয়? বয়স ভিত্তিক পর্যায়ে কোথায় খেলেছেন? জাতীয় যুব (অনূর্ধ্ব-১৯) দলে খেলেছেন কখনো? তার ক্রিকেট ক্যারিয়ারই বা কতদিনের? এর আগে ঢাকার ক্লাব ক্রিকেটে শতরানের কৃতিত্ব আছে কি তার?
এসব কৌতুহলি প্রশ্ন অনেকের মনেই। সেই কৌতুহল মেটাতে বলা, এমনিতে তেমন নাম-ডাক না থাকলেও আনিসুল ইমন ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ খেলছেন গত ৬-৭ বছর ধরে; ২০১৮- ২০১৯ সাল থেকে।
তবে অনূর্ধ্ব-১৯ জাতীয় দলে খেলা হয়নি তার। আর ঢাকা লিগে তার একাটি সেঞ্চুরিও আছে। সেটা ২০২৩ সালে ব্রাদার্স ইউনিয়নের পক্ষে অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে। ২ বছর আগে ২৮ মার্চ বিকেএসপি ৩ নম্বর মাঠে অগ্রণী ব্যাংকের বিপক্ষে ৪ নম্বরে নেমে ১১৪ বলে ৫ ছক্কা ও ৭ বাউন্ডারিতে ১০৭ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলেছিলেন ইমন।
আর আজ ১২ এপ্রিল শেরে বাংলায় আবাহনীর বিপক্ষে ১১৮ বলে ১৮ বাউন্ডারি আর ২ ছক্কায় ১১৪ রানের দারুন ইনিংস খেলেছেন নারায়নগঞ্জের এ যুবা। পেসার নাহিদ রানার বাউন্সারে পুল খেলতে গিয়ে ডিপ স্কোয়ার লেগে ক্যাচ দিয়ে ফেরার আগে আবাহনীর সব বোলারকে স্বচ্ছন্দে খেলেছেন।
ঢাকাই ক্রিকেটের খুটিনাটি খোঁজ খবর যারা রাখেন, তারা জানেন আনিসুল ইসলাম ইমন মানেই ২৫ থেকে ৩০-৩৫ রানের মাঝারি অথচ ঝোড়ো ইনিংস খেলে আউট হওয়া এক তরুণ ওপেনার। ওই ৩০ রানের আশপাশের ইনিংসে থাকে ৫-৬ টা চারের মার ও এক থেকে দুটি ছক্কা।
কিন্তু আজ দেখা মিলেছে এক অন্য ইমনের। প্রায় একই গতি ও ছন্দে খেলেছেন। প্রথম ফিফটি করতে খেলেছেন ৪৫ বল। ৯ বাউন্ডারি ও ১ ছক্কার মার মারেন তিনি। পরের পঞ্চাশ করতে খেলেছেন আরও বেশি ৫৯ বল। মৃত্যুঞ্জয়ের বলে একস্ট্রা কভার দিয়ে বাউন্ডারি হাঁকিয়ে ৯৫ থেকে ৯৯-তে পৌছানোর পর তার একবল পরে পয়েন্ট ও গালির মাঝখান দিয়ে কাট করে শতক পূর্ণ করেন ইমন।
একদিকে রানের চাকা সচল রেখে ইমন শতরান পূর্ণ করলেও অন্যপ্রান্তে মোহামেডানের ব্যাটিং ভাল হয়নি। একমাত্র মাহিদুল ইসলাম অংকন (৫৫ বলে ৪৮) ছাড়া আর কেউ রান পাননি। রনি তালুকদার (১৬), তাওহিদ হৃদয় (৩), মুশফিকুর রহিম (২০), মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ ( ১৭) আর সাইফউদ্দীন (১) ব্যর্থতার মিছিল করেছেন।
আমার বার্তা/এল/এমই