বর্ণিল আয়োজনে শুরু হয়েছে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। ঢল নেমেছে হাজারো মানুষের। ঢাবি এলাকায় যেন উৎসবের ঢেউ নেমেছে। এই ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ ঘিরে রাজধানী জুড়েই জোরদার করা হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। তবে শাহবাগ-ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) ‘বাংলা নববর্ষ ১৪৩২’ উদযাপন উপলক্ষ্যে গতকাল রাত থেকেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। যেকোনো অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পুলিশ, র্যাবসহ অ্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সতর্ক অবস্থানে দেখা গেছে।
ডিএমপির একাধিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাঙালির প্রাণের নববর্ষের উৎসবের টানে শুধু রমনা পার্ক, সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা নয়, জাতীয় সংসদ ভবন, রবীন্দ্র সরোবর ও হাতিরঝিল এলাকার বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। উল্লিখিত এলাকা ছাড়াও ঢাকার অধিকাংশ স্থানে নববর্ষের উৎসব উদযাপিত হচ্ছে। এ উৎসব মুখর অনুষ্ঠানে যাতে জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই নির্বিঘ্নে উদযাপন করতে পারে তার জন্য ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।
শহর ঘুরে দেখা যায়, বাংলামোটর মোড়ে ব্যারিকেড দিয়ে ডাইভারশন দেওয়া হয়েছে। যাতে বাসসহ বড় যানবাহন শাহবাগের দিকে যেতে না পারে। নেভি গলির মুখে পুলিশের আরেকটি ব্যারিকেড আছে। যাতে ছোট যানবাহনগুলোও শাহবাগের দিকে যেতে না পারে। এরপর থেকে শাহবাগ যাওয়া মানুষজনকে হেঁটেই আসতে হচ্ছে।
এদিকে পুরো শাহবাগ মোড় ব্যারিকেড দিয়ে বন্ধ করে রাখতে দেখা যায়। যাতে কেউ শোভাযাত্রায় সামনে দিয়ে প্রবেশ করতে না পারে। পুলিশের পাশাপাশি র্যাব ও সেনাবাহিনীসহ অন্যনা বাহিনীর সদস্যদেরও দায়িত্ব পালন করতে দেখা যায়।
ঢাকাবাসীকে নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) এস এন মো. নজরুল বলেন, ঢাকাবাসী আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা যে ব্যারিকেড দিয়েছি সেগুলো তারা মেনে চলছে। ডিএমপির পক্ষ থেকে দেওয়া নির্দেশনা মেনে তারা নববর্ষ পালন করতে আসছে।
তিনি আরও বলেন, পুরো রাজধানীর নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা রয়েছে। ডিএমপির ১৮ হাজার ফোর্সের পাশাপাশি র্যাব, সেনাবাহিনীসহ আমাদের সাইবার ও ডিবি টিম কাজ করছে। আমরা সর্বোচ্চ সতর্ক আছি। সবাই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতা করবেন এমনটাই প্রত্যাশা করছি।
রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম জানান, বাংলা বর্ষবরণ উৎসবকে কেন্দ্র করে ঢাকা মহানগরকে ২১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়েছে। সিটিটিসি, সোয়াট ছাড়াও পর্যাপ্ত পরিমাণে পোশাকে ও সাদা পোশাকে পুলিশ সদস্য মোতায়ন রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনাস্থল ডগ স্কোয়াড দ্বারা সুইপিং করা হচ্ছে। রমনা পার্ক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানসহ মোট ২১টি স্থানে ব্যারিকেট দিয়ে যানচলাচল নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
অনুষ্ঠানস্থলে যাওয়া ও শোভাযাত্রার রোডসমূহ সিসি ক্যামেরাসহ স্থির ও ভিডিও ক্যামেরা দ্বারা এবং ড্রোনের মাধ্যমে সার্বক্ষণিক মনিটরিং করা হচ্ছে। চারপাশে পর্যাপ্ত পরিমাণ ফুট পেট্রোল সক্রিয় রয়েছে।
তিনি জানান, ইভটিজিং ও ছিনতাই প্রতিরোধে বাড়তি নজরদারি রয়েছে। রমনা ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের অভ্যন্তরে লস্ট অ্যান্ড ফাউন্ড সেন্টার স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে মাইকিং ব্যবস্থা রয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে, 'নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’ প্রতিপাদ্য নিয়ে সোমবার সকাল ৯টায় চারুকলা অনুষদের সামনে থেকে ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’ বের করা হয়।
শোভাযাত্রা চারুকলা থেকে শুরু হয়ে শাহবাগ মোড়, টিএসসি, শহীদ মিনার, দোয়েল চত্বর, বাংলা একাডেমি, টিএসসি হয়ে পুনরায় চারুকলা এগিয়ে শেষ হয়েছে।
ডিএমপির পক্ষ থেকে আগেই জানানো হয়েছে, শোভাযাত্রা যখন শুরু হবে তখন মাঝখান দিয়ে কেউ শোভাযাত্রায় প্রবেশ করতে পারবেন না। শোভাযাত্রায় যারা যোগদান করবেন তাদের শাহবাগ মোড় থেকে অথবা অথবা ছায়ানটের অনুষ্ঠান শেষে যারা শোভাযাত্রা অংশ নিতে চান তারা শাহবাগ হয়ে কাটাবন মোড়ে নীলক্ষেত মোড় হয়ে ঢাবি ভিসির বাংলোর সামনে থেকে অংশ নেবেন।
আমার বার্তা/জেএইচ