প্রবাসেও বৈশাখের ছোঁয়া লেগেছে। বাংলা বছরের শুরুর দিনটি কীভাবে পালিত হয় যুক্তরাজ্যে? দীর্ঘদিন লন্ডনে বাস করেন এমন কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, পহেলা বৈশাখের দিনটি সাপ্তাহিক ছুটির দিন হলে একরকম, কাজের দিন হলে আরেক রকমভাবে কাটাতে হয়।
দিনটি সাপ্তাহিক ছুটির দিনে পড়লে সন্তান নাতি নাতনিরা বাসায় একসাথে হন,আয়োজন হয় বাঙালি খাবারের। বছরের এই সময়ে শীত কম থাকায় বাংলার ঐতিহ্যবাহী শাড়ি পাঞ্জাবি পরে ফটো তোলার, একসাথে খাওয়া, বৈশাখী মেলায় কেনাকাটায় কাটিয়ে দেন দ্বিতীয় আর তৃতীয় প্রজন্মের বাংলাদেশিরা। আর কাজের দিন হলে, আশেপাশে ছুটির দিনকে ঘিরে আয়োজনটি সেরে নিতে চেষ্টা করেন। আর বাসায় নিজেরা ভালো কিছু খাওয়া-দাওয়ার আয়েজন করে নেন। দীর্ঘদিন ধরেই বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে ব্রিটিশ বাংলাদেশি প্রবাসীরা তাদের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উদযাপনের জন্য একত্রিত হন। আয়োজনের ধারাবাহিকতায় ব্রিটিশ বাংলাদেশি পরিবারগুলোর মধ্যে পহেলা বৈশাখের উদযাপন একটি অনন্য চরিত্র পেয়েছে। পরিবারগুলো বিশেষ খাবার ভাগ করে নেওয়ার জন্য একত্রিত হয়, যেখানে প্রায়শই পান্তা ভাত এবং ইলিশ মাছের মতো ঐতিহ্যবাহী খাবার থাকে। শিশুরা রঙিন পোশাক পরে এবং বাড়িগুলো প্রাণবন্ত আলপনা এবং ফুলের সজ্জা দিয়ে সজ্জিত করা হয়। এই অন্তরঙ্গ উদযাপন পরিবার এবং সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতার গুরুত্বকে তুলে ধরে।
ব্রিটিশ বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের পহেলা বৈশাখ উদযাপনের ইতিহাস থেকে জানা যায়, লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের 'বাংলাটাউন' এর বৈশাখী মেলা উদযাপনের সবচেয়ে জরুরি এবং কাঙ্ক্ষিত ইভেন্টে পরিণত হয়েছে। ১৯৯৭ সালে আনুষ্ঠানিক বৃহৎ-পরিসরের উদযাপন শুরু হয়েছিল, যা প্রতি বছর দ্রুত বৃদ্ধি পেয়েছে এবং লন্ডন ক্যালেন্ডারে একটি প্রধান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হিসাবে এর অবস্থান সুদৃঢ় করেছে। এই উদযাপনগুলোর শিকড় লন্ডন ছাড়িয়ে বিস্তৃত। যুক্তরাজ্য এবং ইউরোপ জুড়ে বাংলাদেশি সম্প্রদায়গুলো তাদের নিজস্ব অনন্য ঐতিহ্য প্রতিষ্ঠা করেছে, যা পহেলা বৈশাখের মধ্যে স্থানীয় প্রভাবগুলোকে বুনেছে। যুক্তরাজ্যে বার্মিংহাম, ম্যানচেস্টার এবং লুটনের মতো শহর এবং বিভিন্ন ইউরোপীয় শহরে বাংলাদেশী সম্প্রদায়ের ছোট ছোট অংশে, তাদের নিজস্ব প্রাণবন্ত উদযাপনের সংস্করণ দেখা যায়।
আজ বছর ঘুরে যখন পহেলা বৈশাখ এসেছে, যুক্তরাজ্য জুড়ে সম্প্রদায়গুলো নতুন বছরকে স্বাগত জানিয়েছে নিজ সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়েছে আপন গতিতে। পরবর্তী প্রজন্ম, যাদের জন্ম দেশের বাইরে, তাদের কাছে দেশীয় সংস্কৃতিকে তুলে ধরার দায়িত্ব তাদের অভিভাবকদেরই। তারা সেই দায়িত্ব পালন করে চলেছেন লন্ডনের বুকে যেন এক টুকরো বাংলাদেশে।
আমার বার্তা/এমই