আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর এর অবকাঠামো নির্মাণের বিভিন্ন প্রকল্পের বাজেট তছরুপ করে শত শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ অর্থ পরিচালক সৈয়দ মোঃ হাবিবুর রহমান। স্বাস্থ্য খাতের বিভিন্ন প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক ও প্রধান প্রকৌশলীর সাথে একজোট হয়ে দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পূর্ণ অবৈধ পন্থায় তিনি লুটেছেন শত কোটি টাকা। নিজেকে খুবই খানদানি ও ধনী পরিবারের সন্তান হিসেবে দাবি করা এই সৈয়দ হাবীবুর রহমান পৈত্রিক সূত্রেই নাকি শতকোটি টাকার মালিক।
রাজধানী ঢাকার কাফরুলে স্থানীয় সৈয়দ হাবিবুর রহমান ও তার পরিবার দানবীর পরিবার হিসেবে সুপরিচিত। তার আপন বড় ভাই কাশেম একজন সুপরিচিত আওয়ামী লীগ নেতা। ২০১৮ সালে রাতের ভোটের নির্বাচনে বড়ভাই কাশেম এমপি হওয়ার জন্য আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনেছিলেন। কিন্তু শেখ হাসিনা তাকে অন্য বড় কোথাও বসানোর আশ্বাস দিলে তিনি আর মনোনয়নপত্র জমা দেননি। সৈয়দ হাবিবুর রহমানের দুর্নীতির খবর জেনে যাওয়ায় তারই অফিসের অ্যাকাউন্ট সেকশনের সৎ কর্মকর্তা সিরাজ কে চাকুরী জীবন শেষ হওয়ার পূর্বেই এই হাবিবুর রহমান চক্রান্ত করে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠান। ওই পদে এখন তিনি নিয়োগ দিয়েছেন মুরাদ নামের একজন ব্যক্তিকে। এই মুরাদই এখন সৈয়দ হাবিবুর রহমানের দুর্নীতির অন্যতম সহযোগী। অধিদপ্তরের ক্যাশিয়ার আইয়ুবুর রহমান আকন্দ তার আরেক সহযোগী। আইয়ুবুর রহমানই সৈয়দ হাবিবুর রহমানের নির্দেশে টাকার হিসেবে নয় ছয় করে লোপাটকৃত টাকার হিসেব মিলিয়ে দেন। বিনিময়ে আইয়ুব এর পকেটও ভারী হচ্ছে কোটি কোটি টাকায়।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের অন্যতম দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা ইঞ্জিনিয়ার জাকির হোসেনের সাথে মিলে দুর্নীতিবাজ এই অর্থ পরিচালক সৈয়দ হাবিবুর রহমান লুটেছেন শত কোটি টাকা। রাজধানী ঢাকায় নামে বেনামে গড়েছেন অগাধ সম্পদ। মে ২০২৪ এর শেষে তিনি অবসরে যাবেন।
ক্ষমতার পালা বদলে আওয়ামী সরকারের পতনের পর অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের স্বাস্থ্য সচিব ও স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী পরিবর্তন হলেও অর্থ পরিচালক দুর্নীতিবাজ সৈয়দ হাবিবুর রহমান রয়েছেন বহাল তবিয়তে। তার বিরুদ্ধে যেন বিভাগীয় কোন তদন্ত না হয় সেজন্য নবনিযুক্ত প্রধান প্রকৌশলী ও স্বাস্থ্য সচিব কে মোটা অংকের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করে রেখেছেন। এছাড়া গণমাধ্যমের মুখ বন্ধ রাখতে তিনি ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিকে কর্মরত বরিশাল বিভাগের এক সাংবাদিককে অন্যান্য সাংবাদিকদের সাথে মধ্যস্থতাকারী হিসেবে ব্যবহার করেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, সৈয়দ হাবিবুর রহমানের হয়ে কাজ করা "জ" অদ্যাক্ষর নামীয় ওই সাংবাদিক পল্টনে শেয়ারে একটি রেস্টুরেন্টের মালিক এবং নিয়মিত জুয়া খেলেন। আর এক মাস পর স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ এই অর্থ পরিচালক সৈয়দ মোঃ হাবিবুর রহমান অবসরে গেলে এমনিতেই তিনি চলে যাবেন লোকচক্ষুর অন্তরালে।
অধিদপ্তরে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী এই প্রতিবেদককে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সৈয়দ হাবিবুর রহমান বিগত সরকার আমলে উন্মুক্তভাবে দুর্নীতির মাধ্যমে শত শত কোটি টাকা লুট করে এখন চাকরি থেকে অবসরের পথে। একবার অবসরে চলে গেলে তাকে নিয়ে আর কেউ মাথা ঘামাবে না। তার বিষয়ে তদন্ত করলে কেঁচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে যাবে। তাই অবিলম্বে তাকে দুর্নীতি দমন কমিশনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করা অধিদপ্তরের শ্রমিক কর্মচারীদের প্রানের দাবি।
এ বিষয়ে সৈয়দ হাবিবুর রহমানের বক্তব্য জানতে চাইলে, তিনি মুঠোফোনে প্রতিবেদককে বলেন "একজন সাংবাদিক আপনার সাথে যোগাযোগ করবে। আপনার জন্য ১ লক্ষ টাকা পাঠিয়েছি। দয়া করে নিউজটা করবেন না।" প্রতিবেদক টাকা নিতে অস্বীকৃতি জানালে তিনি প্রতিবেদকের বিরুদ্ধে মামলা করবেন বলে হুমকি দেন।
স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুর্নীতিবাজ অর্থ পরিচালক সৈয়দ মোঃ হাবিবুর রহমানের বিলাসী জীবন, ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের সাথে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা, নামে বেনামে অবৈধ সম্পদ ও অর্থ kকেলেঙ্কারি নিয়ে অনুসন্ধান চলমান। শীঘ্রই অনুসন্ধানের বিস্তারিত তথ্য সম্মানিত পাঠকদের উদ্দেশ্যে পরবর্তী পর্বে তুলে ধরা হবে। পর্ব (১)
আমার বার্তা/জেএইচ