আজ চাঁদ দেখা গেলে আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে পবিত্র রমজান মাস। রমজানে নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ে রীতিমতো ‘সয়াবিন তেল’ আতঙ্ক পেয়ে বসেছে ভোক্তাদের। প্রায় দুই মাস ধরে সরবরাহ সংকটে থাকা সয়াবিন তেলের বাজার এখনো স্বাভাবিক হয়নি। এর সঙ্গে দাম বেড়েছে গরুর মাংস, মুরগি, শসা, লেবু ও বেগুনের।
বাজারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, পবিত্র রমজানে সয়াবিন তেল চাহিদার তুলনায় বেশি আমদানি হয়েছে। তাহলে কেন এ পরিস্থিতিতে পড়তে হবে? এদিকে রমজানকে উপলক্ষ্য করে বাজারে মাছ, মুরগি, লেবু, শসা, বেগুনের দাম কিছুটা বেড়েছে।
শনিবার (১ মার্চ) রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সরেজমিনে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোম্পানির ডিলাররা পর্যাপ্ত তেল সরবরাহ করছে না। শুধু তা-ই নয়, বোতলজাত সয়াবিনের সঙ্গে নানা পণ্য নেওয়ার শর্ত জুড়ে দিচ্ছেন।
এদিকে রমজান শুরুর আগে শুক্রবার বাজারে গরুর মাংস, মুরগি, মাছ, লেবু, শসা ও বেগুনের দাম বেড়েছে। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ টাকা থেকে ২০ টাকা বেড়ে। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকা থেকে ২১০ টাকা ও সোনালি মুরগি ২৮০ টাকা থেকে ৩১০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। এছাড়া, প্রতি কেজি গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা গত সপ্তাহের তুলনায় কেজিতে ২০ থেকে ৩০ টাকা বেশি।
মাংসের পাশাপাশি বাজারে সব ধরনের মাছের দামই কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বাড়তি দরে বিক্রি হতে দেখা গেছে।
দাম বেড়েছে, লেবু, শসা ও বেগুনের। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, দুই সপ্তাহ আগে যে লেবুর হালি ছিল ২০ থেকে ৪০ টাকার মধ্যে। তা শুক্রবার ৪০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া প্রতি কেজি বেগুন ৪০ থেকে ৬৫ টাকা, হাইব্রিড শসা ৫০ থেকে ৬০ টাকা ও দেশি শসা ৮০ থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা বেশি।
প্রতি বছর রমজানের আগে নিত্যপণ্যের বাজারে যে ‘আগুন ভাব’ থাকে। এবার তা নেই। সয়াবিন তেল ও আরও দুই-একটি পণ্য বাদে খেজুর, চিনি, ছোলাসহ অন্যান্য পণ্যের বাজার এখন পর্যন্ত স্থিতিশীল আছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতিবেদন বলা হয়েছে—গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি এই চার মাসে চিনি আমদানি আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২০ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৫৪ হাজার ৩৪ মেট্রিক টন। আলোচ্য সময়ে ডালজাতীয় পণ্যের আমদানি ৪৪ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ১ লাখ ৫৭ হাজার ৮৩৭ মেট্রিক টন। ছোলা আমদানি হয়েছে ৯৭ হাজার ৫৫৫ মেট্রিক টন, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৬৪ শতাংশ বেশি। উল্লিখিত সময়ে সর্বোচ্চ ৮৫ শতাংশ বেড়ে মটর ডালের আমদানি হয়েছে ২ লাখ ২ হাজার ৮৪৫ মেট্রিক টন। পেঁয়াজ আমদানি ২ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ২ লাখ ৮০ হাজার ৬১১ মেট্রিক টন। রসুনের আমদানি বেড়েছে ২০ শতাংশ। গত অক্টোবর থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত পণ্যটি আমদানি হয়েছে ৬১ হাজার ৩৮১ মেট্রিক টন। আদার আমদানি ৫৬ শতাংশ বেড়ে হয়েছে ৫২ হাজার ৫১৫ মেট্রিক টন। ফলে কোনো পণ্যেরই সংকট নেই। দামও স্থিতিশীল রয়েছে। গতকাল বাজারে একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, ক্রেতারা রমজানের শুরুতে বাজারে কেনাকাটা করার জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন, যে কারণে বাজারে হঠাত্ করে বিভিন্ন পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। ফলে দামও বাড়ে। প্রয়োজনের অতিরিক্ত পণ্য না কিনলে রমজানের এক সপ্তাহের মধ্যেই সব পণ্যের দামই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।
আমার বার্তা/এমই