ক্রমবর্ধমান নিরাপত্তাঝুঁকি কারণে ইরাকের রাজধানী বাগদাদে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাসের অপরিহার্য নয়, এমন কর্মী ও তাদের স্বজনদের সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। এছাড়া বাহরাইন, কুয়েত এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন স্থান থেকে মার্কিন কর্মীদের স্বেচ্ছায় প্রস্থানের অনুমতি দেয়া হয়েছে।
একাধিক সূত্রের বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
ঠিক কী কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে কর্মকর্তারা তা স্পষ্ট করেননি। তবে সম্প্রতি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ায় এ অঞ্চলের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বিষয়টি সম্পর্কে অবগত কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বিবিসির মার্কিন অংশীদার সিবিএস নিউজ জানিয়েছে, বুধবার (১১ জুন) মার্কিন কর্মকর্তাদের বলা হয়েছে যে ইসরাইল ইরানে অভিযান শুরু করতে প্রস্তুত।
কর্মকর্তারা বলছেন, এমন কিছু হলে ইরান ইরাকের কিছু মার্কিন স্থাপনায় প্রতিশোধ নিতে পারে। এছাড়া সম্প্রতি ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা স্থবির হয়ে পড়ায় এ অঞ্চলের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
কর্মকর্তারা সিবিএসকে জানিয়েছেন, আগামী রোববার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য বিষয়ক দূত স্টিভ উইটকফ ইরানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করবেন।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের এক কর্মকর্তা বিবিসিকে বলেন, ‘আমরা আমাদের প্রতিটি দূতাবাসের কর্মীসংখ্যা নিয়ে নিয়মিত পর্যালোচনা করি। সর্বশেষ বিশ্লেষণ অনুযায়ী, আমরা ইরাকে আমাদের মিশনের পরিসর সীমিত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’
বুধবার কেনেডি সেন্টারে এক অনুষ্ঠানে ট্রাম্প ইরান সম্পর্কে সাংবাদিকদের বলেন, আমেরিকানদের ওই অঞ্চল থেকে সরিয়ে নেয়া হচ্ছে। কারণ এটি বিপজ্জনক স্থান হতে পারে এবং আমরা দেখব কী হয়। ট্রাম্প আরও বলেন, আমেরিকা ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেবে না, আমরা তা কখনোই অনুমোদন করব না।
এছাড়া বুধবার এক পডকাস্টে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে কোনো সমঝোতা হওয়ার সম্ভাবনা ক্রমেই ক্ষীণ হয়ে আসছে।
এদিকে বুধবার মার্কিন কংগ্রেসে দেয়া সাক্ষ্যে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ বলেন, তিনি এমন ‘অনেক ইঙ্গিত’ পেয়েছেন, যা থেকে তার মনে হয়েছে, ইরান ‘পারমাণবিক অস্ত্রের মতো’ কিছু একটা বানানোর চেষ্টা করছে।
যুক্তরাষ্ট্র চায়, ইরান যেন ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধ করে। কারণ, তা পারমাণবিক বোমা তৈরিতে ব্যবহার করা হতে পারে, এমন আশঙ্কা তাদের।
সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বন্ধের বিনিময়ে তেহরানের ওপর আরোপিত অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা শিথিল করার প্রস্তাব দিয়েছে ওয়াশিংটন।
অন্যদিকে ইরানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী আজিজ নাসিরজাদেহ বলেছেন, অন্য পক্ষের (যুক্তরাষ্ট্রের) কিছু কর্মকর্তা আলোচনা সফল না হলে সংঘাতের হুমকি দিচ্ছেন। যদি আমাদের ওপর সংঘাত চাপিয়ে দেয়া হয়... তাদের মনে রাখা উচিত সব মার্কিন ঘাঁটি আমাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে এবং আমরা সাহসের সঙ্গে তাদের লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানব।
রয়টার্সের প্রতিবেদনে বলা হয়, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিট হেগসেথ মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েত, বাহরাইনসহ বিভিন্ন দেশে মোতায়েন মার্কিন সামরিক কর্মীদের পরিবারকে স্বেচ্ছায় প্রস্থানের অনুমতি দিয়েছেন।
মার্কিন প্রতিরক্ষা বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, ইরাকে প্রায় ২ হাজার ৫০০ মার্কিন সেনা অবস্থান করছে।
আমার বার্তা/এল/এমই