গত দেড় যুগেরও বেশি বাংলাদেশে আর্থিক খাতে শৃঙ্খলার প্রবল অনুপুস্থিতি, অর্থনীতিতে বিভিন্ন দুষ্ট চক্রের আবির্ভাব ঘটেছে। প্রথমত বাংলাদেশের ব্যাংকগুলোর অবস্থা নাজুক, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ক্রমেই কমেছে, পতিত সরকারের শেষ সময় পর্যন্ত বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ নিয়ে প্রকৃত তথ্য প্রকাশ করা থেকে বিরত থেকেছে, বাংলাদেশে রিজার্ভ সংকটের অন্যতম প্রধান কারণ অর্থ পাচার এবং তা ঢাকতে মিথ্যা তথ্য প্রদান করা, বিগত ১৬ বছরে প্রায় ১১ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা বিদেশে পাচার হয়েছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত খাতগুলোকে চিহ্নিত করার পাশাপাশি আর্থিক খাত সংস্কার মাধ্যমে যৌক্তিক সমাধানের পথ খুঁজে বের করা এখন জরুরী, আমাদের দেশে কর আহরণ পদ্ধতি মানুষের আয় অনুপাতের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়, দেশের জনসংখ্যা প্রায় ১৮০ মিলিয়ন, কিন্তু প্রত্যক্ষ কর বা আয়কর প্রদান করে মাত্র ১.৫ শতাংশ মানুষ, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর আছে প্রায় ৮.৮ মিলিয়ন মানুষের, ২০২৩ এর তথ্যানুসারে মাত্র তিন দশমিক দুই মিলিয়ন মানুষ আয়কর প্রদান করে, প্রত্যক্ষ কর আহরনের হার কম হওয়ায় পরোক্ষ করার প্রতি নির্ভরশীল হতে বাধ্য করেছে, পরোক্ষ করের উপর অতি নির্ভরতায় সমাজের দরিদ্রশ্রেণীর উপর বেশি পরিমাণ কর প্রদানে বাধ্য করা, দেশে ধনী গরিবের কর প্রদানের যে আনুপাতিক বৈষম্য তার অন্যতম প্রধান কারণ সঠিকভাবে আয়কর আহরণ করতে ব্যর্থ হওয়া।
দেশের শেয়ার বাজার থেকে কিছু কুচক্রী মহল হাজার হাজার কোটি টাকা লুট করেছে, ১৯৯৬ সালের শেয়ার বাজার কেলেঙ্কারি প্রথম সংবাদ মাধ্যমেই আলোচনায় আসে, একইভাবে ২০১০ ও ২০১৬ সালেও সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ পাওয়া যায় সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের দায়িত্ব অবহেলার, কোন সুরাহা না হয়ে বরং অভিযুক্তদের দায়িত্বে পুনর্বহাল রেখে আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত বলবৎ রয়েছে, অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম দায়িত্ব এর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা, আমরা জানি যে,টাকা পাচারে অন্যতম প্রধান খাত হলো শেয়ার বাজার, সুষ্ঠু তদন্ত সাপেক্ষে তাদের বিচারের মুখোমুখি করা, অবকাঠামোগত উন্নয়নে অধিক সুদে ঋণ নেওয়ায় ২০২৪ এ মাথাপিছু ঋণের পরিমাণ দাঁড়ায় প্রায় দেড় লাখ টাকা, বিগত ১০ বৎসরে বিনিয়োগ ২৩ শতাংশের ঘরে আটকে আছে, স্বাধীনতার সময় বাংলাদেশ ছিল কৃষিভিত্তিক অর্থনীতির দেশ, ৭০ দশকের শেষের দিকে তৈরি পোশাক শিল্পের বিকাশ এবং পরবর্তী সময়ে পাট,চা ও চামড়া শিল্পের প্রসার ঘটে, অথচ গত ২ দশকে পাটও চামড়া শিল্পের ধারাবাহিকতা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে সরকার, সরকারের সঠিক আর্থিক নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের কৌশল গ্রহণ অত্যাবশ্যক, মূল্যস্ফীতি এই মুহূর্তে এদেশের সাধারণ মানুষের কাছে বড় সমস্যা, এর নিয়ন্ত্রণে অন্তর্বর্তী সরকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে।
এখানে উল্লেখ্য ২০২৪ জুলাই দেশের সাধারণ মূল্যস্ফীতি বেড়ে ১১.৬৬ হয়েছে, যা জুন ২০২৪ এ ছিল ৯.৭২ শতাংশ, বিগত সরকারের মানবাধিকার লঙ্ঘন, জুলাই হত্যাকাণ্ড কিংবা বাংলাদেশের বিচার বিভাগসহ বিভিন্ন সাংবিধানিক ও রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে পুনর্গঠন করা জরুরি বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নয়নের মাধ্যমে ব্যবসায়ীদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনা খুবই জরুরী, অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের ব্যাপারে দেশে এবং দেশের বাহিরের আস্থা তৈরি করা যেন রপ্তানি মুখী হাতে বিদেশীরা অর্ডার দেয়। যদিও রাষ্ট্র সংস্কারের বিষয়গুলো বেশ বড় এবং সময় সাপেক্ষ ব্যাপার, এমনটি করতে হলে ব্যাংকিং, পুঁজিবাজার, পাবলিক সেক্টর ,রাজস্ব, পাবলিক প্রকিউর ম্যান্টের মতো অনেক খাতের সংস্কারের প্রয়োজন পড়বে, এটা নির্ভর করে সরকারের প্রাধিকার গুলো কিভাবে সাজাচ্ছে, অন্তর্বর্তী সরকারের এই চ্যালেঞ্জ কঠিন হলেও অসম্ভব নয়।
লেখক : স্টাফ রিপোর্টার, দৈনিক আমার বার্তা।
আমার বার্তা/মো. এমাম হোসেন/এমই